তিনি কখন আসবেন, অপেক্ষা ছিল সকলের। রোগী পরিবার থেকে শুরু করে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার– সকলেই চেয়েছিলেন, তিনি হস্তক্ষেপ করুন। চিকিৎসা সুনিশ্চিত করুন রোগীদের। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুন চিকিৎসকদের। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন সকলেই। তিনি এলেন আন্দোলনের তিন দিনের মাথায়। বক্তব্য রাখলেন। কিন্তু পরিস্থিতি বলছে, তাতে সমস্যা বাড়ল বই কমল না।
কারণ মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে আন্দোলনকারীদের কাজে ফিরতে বলেন। তাঁদের বক্তব্য পর্যন্ত শোনেননি বলে অভিযোগ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে চিকিৎসক মহল। সর্ব স্তরে তীব্র নিন্দা করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণের।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের তরফে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী এসএসকেএম-এ গিয়ে শুধু রোগী ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গেই দেখা করে কথা বলেন। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেননি তিনি। মাননীয়া এ রাজ্যের অভিভাবিকা। সকলের কথাই সহানুভূতির সঙ্গে শোনার কথা ছিল তাঁর।
মমতা যদিও পাল্টা দাবি করেন, তিনি ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলেন এনআরএসের আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও আন্দোলনকারীরা কথা বলেননি বলে দাবি তাঁর। তিনি এই ঘটনায় রাজনৈতিক চক্রান্তেরও ইঙ্গিত করেন। এবং একটাই কথা স্পষ্ট করেন, এমার্জেন্সি সার্ভিস বন্ধ করা যায় না কোনও ভাবেই। সেটা করা হলে কঠোর শাস্তি হবে।
মমতা হুঁশিয়ারি শুনে ক্ষোভে-নিন্দায় ফেটে পড়েছে সব মহল। মন্ত্রী বলেন, “অনেক সময়ে অনেক রকম ঘটনা ঘটে যায় তাৎক্ষণিক ভাবে। এখানেও কী হয়েছে, দু’পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।” চিকিৎসকদের বক্তব্য, বারবার ডাক্তারদের মার খাওয়াটা তাৎক্ষণিক ভাবে ঘটে চলবে, তার কোনও বিচার মিলবে না। চিকিৎসক মার খেলে সেটাকে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বলা হবে। এটা মেনে নেওয়া যায় না! এক সিনিয়র চিকিৎসকের কথায়, “পরিবহর এ ভাবে মার খাওয়ার ঘটনাকে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বলে চালাতে গিয়ে উনিই ডাক্তার ও রোগীকে প্রতিপক্ষ করে তুললেন। ওঁর সহানুভূতি থাকলে বলতে পারতেন না, এরকম অনেক কিছুই ঘটে এটাও ঘটেছে। ২০০ বহিরাগত গুন্ডা ঢুকে এক জন জুনিয়র চিকিৎসকের মাথা তুবড়ে দেওয়াটা অনেক কিছু ঘটার মতো ঘটনা নয়। এটা চিকিৎসক-বিরোধী বক্তব্য।”
চিকিৎসকদের দাবি, মন্ত্রী হিংসাকেই সমর্থন করলেন এভাবে জুনিয়র ডাক্তারদের হুমকি দিয়ে। মেনে নিতে বললেন, চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনাগুলি। উনি বুঝিয়েই দিলেন, কেউ মারা গেলে তাঁর পরিবার বা পরিচিতরা তাৎক্ষণিক ভাবে চিকিৎসকের গায়ে হাত তুলতেই পারে, সেটা নিছক স্বাভাবিক ঘটনা।
এমনকী, সোমবার বিকেলে ওই ৮৫ বছরের বৃদ্ধ কী ভাবে মারা গেলেন, কোন ইঞ্জেকশনের পরে মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠল, তা নিয়েও সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করলেন। এতে চিকিৎসকদের প্রতি বিশ্বাস হারানো ছাড়া কিছুই হল না বলে মনে করছে চিকিৎসক মহল। আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানো এক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দাবি, “ওঁর কথাগুলোই প্রমাণ করল, এই আন্দোলন কতটা জরুরি ছিল। প্রশাসন যে চিকিৎসকদের পাশে নেই, তা আজ জানিয়েই দিলেন নেত্রী। সেই সঙ্গে, আরও বড় আগুন জ্বলার আশঙ্কাও বাড়িয়ে দিলেন কয়েক গুণ।”