“জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী” অর্থাৎ জন্মভূমি ভারত (India) স্বর্গের থেকেও মহান জায়গায়। এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি, যার জন্য হিন্দুরা নিজের জন্মভূমি বা দেশকে মা বলে তথা দেশের জন্য সমস্তকিছু উৎসর্গ করতে রাজি হয়। মধ্যপ্রদেশের ভূপাল জেলার মুখ্যলয়ের থেকে ২০কিলোমিটার দূরে বরখেরী আব্দুল্লা গ্রাম পঞ্চায়েত আছে। এই পঞ্চায়েতের গ্রাম প্রধান ২৯ বছর বয়সী ভক্তি শর্মা। ভক্তি আমেরিকায় অনেক ভালো চাকরি করছিল, যখন সে গ্রামে এসেছিল তখন গ্রামে পঞ্চায়েতের নতুন প্রধান নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল। যেহুত সিট মহিলাদের জন্য রিজার্ভ ছিল তাই লোকেরা নিজেদের সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত গ্রামের মেয়ে ভক্তিকে পঞ্চায়েতের প্রধান করার জন্য ভক্তি বা তার পিতার সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলে।
আর নির্বাচন জিতেও ভক্তি নিজেকে প্রমান করে দেয়। নিজের কাজের জন্য ভক্তি ২০১৬ সালে দেশের ১০০ লোকপ্রিয় মহিলাদের মধ্যে সামিল হয়েছিলেন। দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ওনাকে সম্মান প্রদান করেছিলেন। ভক্তি বর্তমানে মধ্যপ্রদেশে ইউথ আইকনের মুখ্য পরিচিতি। প্রধান হওয়ার পরই উনি সবার প্রথম যে কাজ লাগু করেছেন তা বেশ প্রশংসনীয়। তার দ্বারা লাগু করা নিয়ম অনুযায়ী, গ্রামে কোনো মেয়ে জন্ম নিলে ১০ টি চারাগাছ লাগাতে হবে ও তাদের মা দের ২ মাসের খরচের টাকা প্রদান করা হবে।
ভক্তি পঞ্চায়েতের মাথা হওয়ার পর গ্রাম পঞ্চায়েতে বরখেরীর সব কিষাণদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। সাথেই সব গ্রামীনদের রেশন কার্ড, ব্যাংক একাউন্ট, মাটি স্বাস্থ্য কার্ড বানায় ও গ্রামে ১১৩ জন লোকের পেনশন শুরু করায়। এখন গ্রামের কোনো বাচ্চা অসুস্থ নয়। মাসে দুই থেকে তিন বার হেলথ ক্যাম্প লাগানো হয়। গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনো কাজই ভক্তি নিজের ইচ্ছায় করে না। গ্রামের বিকাশের পরিকল্পনা গ্রাম সভার সবার রায় নিয়েই করা হয়। যখন ভক্তি পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছিল তখন এই পঞ্চায়েতে মাত্র ৯টি শৌচালয় ছিল।
আর এখন এই পঞ্চায়েত ওডিএফ অর্থাৎ খোলায় শৌচ থেকে মুক্ত হয়ে গেছে।
পঞ্চায়েতের সব মহিলারা নির্ভয়ে রাত ১২টায় নিজের পঞ্চায়েতের জন্য বেরোতে পারে ভক্তির এটাই প্রচেষ্টা। ভক্তি বলেছেন যে পঞ্চায়েতের সব বৈঠকে মহিলারা বেশি করে উপস্থিত থাকুক এটি আমি প্রথম বৈঠক দিয়েই শুরু করিয়েছি। মিড ডে মিল সমিতিতে ৮ জন মহিলা আছে। মহিলাদের যোগদান পঞ্চায়েতের কাজে বেশি থাকুক যাতে তাদের জ্ঞান বাড়ুক ও তারা নিজেদের শক্তিকালী মনে করুক।