আয়না দেখতে সবারই কষ্ট হয়। দিলীপ ঘোষ এই শহুরে, এলিট, বামমনস্ক, রংহীন, সেলিব্রিটি, পশ, বুদ্ধিজীবীদের আয়না দেখিয়ে দিয়েছেন। দিলীপ ঘোষের অন্য অনেক কথা নিয়ে প্রতিবাদ, খিল্লি অনেক কিছুই করেছি। কিন্তু গতকালের যে কথাটা নিয়ে এত বিতর্ক, তাতে আমার অন্তত কিছু খারাপ লাগছে না। না, “সাধারণ মানুষ” আপনারা নন। আপনদের এই রোদে অটোর লাইনে দাঁড়াতে হয় না। অটো না পেলে, রিকশার ভাড়া বেশি বলে হাঁটতে হয় না। ভিড় বাসে গুঁতোগুঁতি করতে হয় না। লোকাল ট্রেনে ঝুলতে হয় না। বাজারে দর কষাকষি করে সব্জি-মাছ কিনতে হয় না। মুদির দোকানে যাতে ধার-বাকি না থাকে, সেটা হিসেব করে মাসকাবারি ফর্দ লেখার পর কাটাকুটি করতে হয় না। মাসের শেষ সপ্তাহে কী করে সংসারটা চলবে, সেটা নিয়ে ভাবতে হয় না। লোডশেডিং হলে হাতপাখা টানতে হয় না। গরমকালে রাতে ঘুমোবার জন্য টেবিল ফ্যান পরিষ্কার করতে হয় না। বাচ্চাকে আরেকটু ভাল স্কুলে পড়াবার জন্য, দুটো টিউশন দেওয়ার জন্য, নিজেদের পেট কেটে ওভারটাইম কাজের খোঁজ করতে হয় না। জুতো ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে আরও কয়েকমাস চালাতে হয় না। নতুন জামাকাপড় কেনার জন্য পয়লা বৈশাখ আর দুর্গাপুজোর সেলের অপেক্ষা করতে হয় না। এরকম আরও অনেক কিছু আপনাদের করতে হয় না। কারণ আপনারা এলিট, সেলিব্রিটি, বুদ্ধিজীবী। তাই নিজেদের “সাধারণ মানুষ” বলে, সত্যিকারের সাধারণ মানুষদের অপমান করবেন না। আপনারা আদ্যপান্ত একটি ন্যাকা গোষ্ঠী। পিওর ন্যাকা। যে ইস্যুতে, যাঁরা, যা বলতে টাকা দেন, শুধুমাত্র সেই ইস্যুতে, তাঁদের হয়ে, গদ্গেলা কথাগুলো বলেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আপনাদের কোন সম্পর্ক নেই। কলকাতার গণ্ডী পার করলে আপনারা এসি গাড়ি করে শুটিং করতে, ফাংশান করতে বা পিকনিক করতে যান। আপনাদের এসি গাড়ির জানলা দিয়ে যদি বাইরে তাকান, তাহলে কাঁচের বাইরে দিয়ে, যাঁদেরকে অটোর সামনের সীটে বাঁদিকে দ্বিতীয় ব্যক্তি হয়ে ঝুলতে দেখেন, ট্রেকারে ছাগল, কাঠের বস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যেতে দেখেন, বাসের জানলার রড ধরে ঝুলতে বা বাসের মাথায় উঠে যেতে দেখেন, তাঁরা সাধারণ মানুষ। যারা জেলার সরকারি হাসপাতালে ভোট চারটে থেকে লাইন দিয়ে কার্ড করান, আউটডোরে দেখান, তাঁরা সাধারণ মানুষ। তফাৎটা বুঝুন। সাধারণ মানুষ চাইলেই হওয়া যায় না। আপনাদের সাধারণ মানুষ হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই। আপনারা নিজেদেরকে হোলিয়ার দ্যান দাও দেখান। ওটাই আপনাদেরকে মানায়। কারণ আপনারা এই “সাধারণ মানুষ”-কে সবসময় “অশিক্ষিত, গাঁইয়া, চাষা, বস্তির লোক, কিস্যু বোঝে না, পান্তাভাত পিঁয়াজ দিয়ে খায়” এসব বলে হয় হ্যাটা করেন, অপমান করেন, নাহলে খিল্লি ওড়ান। আপনারা নিজেদের “সাধারণ মানুষ” বললে সেটা ন্যাকামিই হয়। দিলীপ ঘোষ এই এতদিনের না বলা সত্যি কথাটা আপনাদের মুখের ওপর বলে দিয়েছেন। এলিট, পশ, সেলেব, রংহীন বাম, এবিপির ছাপ মারা বুদ্ধিজীবীদের ন্যাকা বলতে নেই, এই অলিখিত নিয়মটা দিলীপ ঘোষ একদম হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গার মতো করে ভেঙ্গে দিয়েছেন। তাই এই ক্লাসের সবার এত জ্বলছে। জ্বলুক। দিলীপ ঘোষ আপানাদের সব মুখোশ খুলিয়ে, আয়না দেখিয়ে, অওকাত বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন থেকে এই বুদ্ধিজীবীদের সমার্থক শব্দ বা বিশেষণ হিসেবে ন্যাকা কথাটা ব্যবহৃত হবে। আমি তো অন্তত বলবই। শেষে এই ন্যাকা বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশে আমিও একবার বলছি, “ন্যাকামি করবেন না।”
Deep Chatterjee