“তোমার বাড়ি কোথায়?”
রিক্সাওয়ালা: বাবু আমাদের বাড়ি বাংলাদেশে।
“আমাদের মানে? তোমরা কতজন?”
রিক্সাওয়ালা: বাবু আমরা ৫০-৬০ জন আছি।
“তা তোমরা এদেশে এলে কি ভাবে? তোমাদের কি ভিসা পাসপোর্ট আছে?”
রিক্সাওয়ালা: না বাবু আমাদের ওসব লাগে না। বর্ডারে লোক আছে তারাই সব ব্যবস্থা কইরে দেয়। তবে টাকা দিতে হয়।
“বাঃ ভাল ব্যবস্থা। তা তোমরা থাক কোথায়?”
রিক্সাওয়ালা: আমরা এই আশেপাশে এখানেই থাকি। আমাদের তো রাত দিনই কাজ। অনেক সময় রিক্সাতেই ঘুমাই।
“তা এখানকার লোকজন কিছু বলে না? থানা থেকে পুলিশ আসে না? ধরে নিয়ে যায় না?”
রিক্সাওয়ালা: না বাবু, থানাতেও আমাদের লোক আছে। পার্টির দাদারা আছেন। তাঁরাই সব সামাল দেন। তবে আমাদের প্রত্যেককে তাঁদের ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। তবে তাঁরা বলে দেছেন এই এলাকার বাইরে না যেতে।
“তা তোমরা দেশে যাও না? তোমাদের বিবি বাচ্চারা তো সেখানেই আছে, তাই না?”
রিক্সাওয়ালা: হ্যাঁ বাবু, আমরা মাঝে মাঝে দেশে যাই। দেশে গেলে মসজিদের ইমাম সাহেব আমাদের ডেকে নানারকম পরামর্শ দেন।
“তা তোমাদের ইমাম সাহেব কি পরামর্শ দেন? তোমরা যেভাবে এদেশে আসছ, সংখ্যায় বাড়ছ আমরাই তো এদেশে সংখ্যালঘু হয়ে যাব এক সময়। তখন তো তোমরাই দেশটার দখল নিয়ে নেবে। তা তখন কি আমাদেরও মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে হবে?”
রিক্সাওয়ালা: না বাবু, আপনাদের নামাজ পড়তে লাগবে না। একটু সময় লাগবে তো। তবে আপনাদের পরে যারা থাকবে তাদের নামাজ পড়তে লাগবে।
“তার মানে তোমরা আস্তে আস্তে এ দেশটার দখল নিয়ে নেবে। তোমাদের ইমাম সাহেবরা কি বলেন?”
রিক্সাওয়ালা: ইমাম সাহেব তো তাই বলেন। বলেন এদেশে তোমাদের রুজিরোজগার নাই। তোমরা ইন্ডিয়া চইলে যাও। সেখানে অনেক রকম কাজ আছে। যে যেরকম কাজ পাবা করবা। আর ওখানকার লোকেরা যে মজুরী চায় তোমরা তার থিক্যা কম নিবা। এতে তোমাদের কামের অভাব হবে না। যেমন ধরেন আমি রিক্সা ভাড়া চাইলাম ১৫ টাকা। আপনি কইলেন ১২ টাকা। আমি তাতেই রাজী হইলাম কি না? আমি জানি এখানকার রিক্সাওয়ালারা ২০ টাকা ভাড়া চাইত। ঠিক কি না বলেন। আমাদের অনেকেই এখানে শাদী করছে। তাদের বিবিরা হিঁদু বাড়ীতে কাজ করে। এখানকার মেয়ে বউরা যদি ২০০ চায়, তো আমাদের বিবিরা ১৫০ টাকা বা ১৪০ টাকা চায়। তাদের কেউ বসে থাকে না, সহজেই কাম পায়। তাছাড়া আমাদের অনেকে পান বিড়ির দোকান দেছে, কেউ বা চায়ের দোকান। কেউ মাটি কাটার কাজ করে, কেউ ফেরিওয়ালা। লোকে জানে ওরা মুর্শিদাবাদের লোক। আসলে সবাই বাংলাদেশী। বাবু, এদেশে আমাদের কাজ কামের অভাব নাই।
“তোমাদের ইমাম সাহেব আর মুরব্বীরা আর কি বলেন?”
রিক্সাওয়ালা: মুরব্বীরা বলেন তোমাদের যারা পারবা হিঁদু পাড়ায় একটা করে খাসীর মাংসের দোকান দিবা। দাম কিছুটা কম রাখবা। তাহলে অন্য দোকানের খরিদ্দাররা তোমাদের দোকানে যাইব। পরে দ্যাশটা আমাদের কব্জায় আইলে ওগুলোরে গোস্তের (গরুর মাংস) দোকান বানাবা। তাহলে হিঁদুরা আর ধারেকাছে থাকবে না। বাড়ী ঘর বিক্রী করে দোকান ব্যবসা বন্ধ করে দূরে সরে যাবে। তোমরা তখন সেগুলা কম দামে কিনে নিবা। তাইলে জায়গাটা তোমাদের মহল্লা হইয়া যাইব। এরপর সেখানে একটা মসজিদ বা মাজার বানাবা। ধীরেধীরে সেগুলান বাড়াতে থাকবা। সব জায়গায় আমাদের লোক থাকব, টাকা দেওয়া থাকবে, কেউ বাধা দিবে না।
দেবল দেব বাসু