দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার

দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার
১৫ ই এপ্রিল, ১৮৭৭ – ৩০ শে মার্চ, ১৯৫৬

দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার প্রখ্যাত বাংলা ভাষার রূপকথার রচয়িতা এবং সংগ্রাহক। তার সংগ্রহিত জনপ্রিয় রূপকথার সংকলনের নাম ঠাকুরমার ঝুলি।
জন্ম ও পরিবার
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার বাংলা ১২৮৪ সালের (১৮৭৭ ইং) ২ রা বৈশাখে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার উলাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতার নাম কুসুমময়ী ও পিতার নাম রমদারঞ্জন মিত্র মজুমদার।
শিক্ষা জীবন
১৮৮৭ সালে দশ বছর বয়সে তাঁকে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেওয়া হয় ঢাকার কিশোরীমোহন হাইস্কুলে। পরে ১৮৯৩ সালে, কিশোরীমোহন হাইস্কুল থেকে দক্ষিণারঞ্জণকে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেয়া হয়। এ দুটি স্কুলে থাকার সময় পড়ালেখায় ভালো করতে না পারায় তাঁর পিতা টাঙ্গাইলে বাসরত বোন (দক্ষিণারঞ্জনের পিসী) রাজলক্ষ্মী চৌধুরানীর কাছে রেখে টাঙ্গাইলের সন্তোষ জাহ্নবী হাইস্কুলে ভর্তি করে দেন। এই স্কুলের বোর্ডিং-এ থেকে তিনি দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। কিন্তু পিতার হঠাৎ সিদ্ধান্তে টাঙ্গাইল ছেড়ে ১৮৯৭ সালে বহরমপুর হাইস্কুলে তাকে দশম শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। এই স্কুল থেকেই ১৮৯৮ সালে প্রথম বিভাগে তিনি এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এন্ট্রান্স পাসের পর দক্ষিণারঞ্জনকে বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে এফ এ ক্লাসে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তিনি পড়ালেখা শেষ করেননি।
‘ঠাকুরমার ঝুলি’
১৯০৭ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশের আগে দক্ষিণারঞ্জনের লেখা ও সংগৃহীত রূপকথা কলকাতার কিছু পত্রিকায় ছাপা হয়। ‘ঠাকুরমার ঝুলি’র পাণ্ডুলিপির প্রকাশক না পেয়ে নিজের অর্থেই প্রকাশে উদ্যোগী হন দক্ষিণারঞ্জন। এ সময় দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে যোগাযোগ ঘটে তাঁর। পরে দীনেশচন্দ্র সেনের উদ্যোগেই সেকালের বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ভট্টাচার্য অ্যান্ড সন্স থেকে ১৯০৭ সালে গ্রন্থাগারে প্রকাশিত হয় ‘ঠাকুরমার ঝুলি’। ঠাকুরমার ঝুলি’র চিত্রসমূহ দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের আঁকা। প্রথম প্রকাশে ঠাকুরমার ঝুলির ভূমিকা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তাঁর অন্যান্য বই
মা বা আহুতি (১৯০৮), ঠাকুরমার ঝুলি (১৯০৯), আর্যনারী (প্রথম ভাগ ১৯০৮, দ্বিতীয় ভাগ ১৯১০), চারু ও হারু (১৯১২), দাদামশায়ের থলে (১৯১৩), খোকাখুকুর খেলা (১৯০৯), আমাল বই (১৯১২), সরল চন্ডী (১৯১৭), পুবার কথা (১৯১৮), ফার্স্ট বয় (১৯২৭), উৎপল ও রবি (১৯২৮), কিশোরদের মন (১৯৩৩), কর্মের মূর্তি (১৯৩৩), বাংলার সোনার ছেলে (১৯৩৫), সবুজ লেখা (১৯৩৮), চিরদিনের রূপকথা (১৯৪৭), আশীর্বাদ ও আশীর্বাণী (১৯৪৮) ইত্যাদি। ‘চারু ও হারু’ সম্ভবতঃ বাংলা ভাষায় প্রথম কিশোরদের জন্য উপন্যাস। এছাড়া ১৯০১ সালে তিনি ‘সুধা’ নামে একটি মাসিক সাময়িক পত্রিকা নিজ সম্পাদনায় প্রকাশ করেন। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার ছবি আঁকতেন, ঠাকুরমার ঝুলি’র ছবিগুলো তাঁর আঁকা। এছাড়াও বাসগৃহে কাঠের উপর খোদাই কর্মে তাঁর বিশেষ পারদর্শিতা ছিল।
মৃত্যু
তিনি বাংলা ১৩৬৩ সালের (১৯৫৬ ইং) ১৬ই চৈত্র কলিকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.