করোনার (Coronavirus) ছায়া ফের প্রকট, বাড়ছে দুশ্চিন্তা। রোগের আগ্রাসনের সামনে দেওয়াল তুলতে ছ’মাস পর পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) ফের শুরু হল কনট্যাক্ট ট্রেসিং। মানে কোভিড (COVID-19) আক্রান্তের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, প্রত্যেকের তত্ত্বতালাশ করে তাঁদের আলাদা করা, যাতে রোগ ছড়াতে না পারে। আইসিএমআরের গাইডলাইন মেনে সোমবারই রাজ্যের চার জেলার ২৪টি পুর এলাকায় তা শুরু হয়েছে। অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালু থাকবে।
স্বাস্থ্যভবনের খবর, হাওড়া পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ড, বালি পুরসভা ও কলকাতা পুরসভার পাতিপুকুর, মানিকতলা, রাজাবাজার-শিয়ালদহ, বালিগঞ্জ, যাদবপুর এবং উত্তরের বরানগর ছাড়িয়ে কামারহাটি পুর এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে কনট্যাক্ট ট্রেসিং শুরু হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও এপিডোমলজিস্টরা করোনা পজিটিভদের ফোন করে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছেন। কোভিড পজিটিভ হলে বিগত দশদিন তাঁরা কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, ফোন মারফত সেই তথ্য জানা হচ্ছে। উপসর্গ থাকলে বাড়িতে থাকতে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়িতে থাকা কোভিড পজিটিভদের জন্য ফের শুরু হচ্ছে টেলি মেডিসিন পরিষেবা। উপসর্গহীন পজিটিভদেরও টেলি মেডিসিনের আওতায় আনার তোড়জোড় হচ্ছে।
হাওড়ায় সোমবার মোট আক্রান্ত ৬৫ জন। এঁদের মধ্যে ৫৪ জনই পুর এলাকার। ওঁদের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাঁদের বাড়িতে অসুবিধা তাঁদের সত্যবালা কোভিড হাসপাতালে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার কোভিড পজিটিভ যদি নিজের বাড়িতে অসুবিধা হয় তবে রাজারহাটের সিএনসিআই কোভিড হাসপাতালের একটি অংশকে সেফ হোম করে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দু’তিন দিনের মধ্যেই এই কাজ শুরু হবে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর। সোমবার রাজ্যে নতুন করোনা পজিটিভের সংখ্যা ৬৩৯। মৃত একজন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮,০২০ জন। এই বৃদ্ধির ফলে দেশে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা বর্তমানে ১.২ কোটি। পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোভিডে মৃত্যু হয়েছে ২৯১ জনের। ফলে দেশে বর্তমানে কোভিডে মোট মৃতের সংখ্যা ১,৬১,৮৪৩। দেশে কোভিডগ্রাফ দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হলেও রাজ্যে কম। কারণ হিসাবে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী বলেছেন, “দোল হোলির জন্য পরীক্ষা কম। আর এই ঘটনাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। কারণ উপসর্গ থাকলেও অনেকে পরীক্ষা এড়াচ্ছেন।”
[আরও পড়ুন: প্রথম দফায় বিজেপির হাত ভেঙেছে, পরেরগুলিতে বাকি সব ভাঙবে: অভিষেক]
শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যার মধ্যে ৮৪.৫ শতাংশই আট রাজ্যের বাসিন্দা। এই তালিকায় রয়েছে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাবের মতো রাজ্য। দৈনিক সংক্রমণের এই বিপুল বৃদ্ধি ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের পর থেকে সর্বোচ্চ।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৫,২১,৮০৮ জন। আর এখনও পর্যন্ত করোনার প্রকোপ কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১,১৩,৫৫,৯৯৩ জন। সংক্রমণের নিরিখে রাজধানী দিল্লিও খুব পিছনে নেই। গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১,৯০৪ জন। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বরের পর থেকে দিল্লিতে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। বিভিন্ন রাজ্যের এই তথ্য হাতে পেয়েই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। আজ মঙ্গলবার থেকে স্বাস্থ্যকর্তাদের সরকারি কোভিড হাসপাতালগুলির অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শনে যাওয়ার কথা। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ-সহ কলকাতার সরকারি কোভিড হাসপাতালগুলির হাল খতিয়ে দেখাই মূল উদ্দেশ্য। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “কোভিড যুদ্ধের জন্য স্বাস্থ্য দপ্তর তৈরি। পরিকাঠামো তৈরি আছে। প্রয়োগের জন্য তৈরি রাখতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”