অন্ধের কাছে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য্যের বর্ণনা শুনব না – তপন ঘোষ

কোনো এক সুমন দাশগুপ্ত আমাকে জ্ঞান দিচ্ছে যে মুসলমানের মধ্যে কত ভাল মানুষ আছে। আর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নাকি হিন্দু মুসলমান একসঙ্গে লড়াই করেছিল।
আমার উত্তর –
অত্যন্ত বিরক্তিকর এই মুসলমানের দালালদের কথা শোনা। আগেই বলেছি, অন্ধের কাছে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য্যের বর্ণনা শুনব না। রিফিউজির কাছে শুনব না মুসলমান কত ভাল……………

ওপার বাংলায় ফিরে যাও নিজের পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে। ওখানে ৬ মাস বাস কর। তারপর বল, মুস*লমান কত ভাল।……..

আর স্বাধীনতা সংগ্রামে মুস*লমানের অংশগ্রহণ ? দালাল ছাড়া আর কেউ একথা বলবে না……….

পরাধীন যুক্ত বাংলায় ৫৪% মুসলিম আর ৪৬% হিন্দু ছিল। বঙ্গপ্রদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সংখ্যালঘু প্রদেশ ছিল। তাহলে স্বাধীনতা সংগ্রামে উভয়ে অংশগ্রহণ করলে শহীদ হওয়া এবং জেলে যাওয়ার ক্ষেত্রে মুসলিম বেশি, হিন্দু কম হওয়া উচিত ছিল। ক্ষুদিরাম প্রফুল চাকী থেকে বাংলায় শহীদ হওয়ার যে পরম্পরা শুরু হয়েছিল তাতে কতজন মুসলিম স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়ে ব্রিটিশের গুলিতে বা ফাঁসিতে শহীদ হয়েছিল? মোট শহীদ সংখ্যার ৫৪ শতাংশ ? আন্দামানে সেলুলার জেলে কতজন মুসলিম গিয়েছিল? মোট কারাবাসীদের ৫৪ শতাংশ?

পূর্ববঙ্গীয় মাকুরা যুক্তি দেয়, মুসলিমরা তো শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল ! তার উপর হিন্দু বিপ্লবীরা কালীপুজো টুজো করত। গীতা পড়ত। তাই মুসলমানরা তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেনি।
উত্তর দিই। হিন্দুরা পুজো টুজো করে। তা মুসলিমরা আল্লা আল্লা করে নামাজ টামাজ পড়ে একটা আলাদা বিপ্লবী সংগঠন করে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করল না কেন? তারাই তো ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রথম দায়িত্ব তো তাদেরই ছিল। করল না কেন?
আর লেখাপড়ায় পিছিয়ে ছিল বলে? কেন পিছিয়ে ছিল? ইংরেজ আসার আগে ৫০০ বছর বাংলায় তো তারাই রাজত্ব করেছে। সেই ৫০০ বছরে হিন্দুরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে, ধর্ম বাঁচাতে, আর তাদের লালসা থেকে পরিবারের নারীদের ইজ্জত বাঁচাতে ত্রাহি ত্রাহি করত। তাই হিন্দুরা তো লেখাপড়ায় পিছিয়ে গিয়েছিল। শাসক মুসলিমদের তো লেখাপড়ায় অনেক এগিয়ে থাকার কথা। তারা পিছিয়ে পড়ল কেন? সেজন্য তারা দায়ী না হিন্দুরা দায়ী? সবাই জানে ওরা কেন পিছিয়ে পড়েছিল। ৪টে করে বিয়ে করে আর ১৫-২০ টা করে বাচ্চা পয়দা করলে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়া যায় না। তার উপর ওদের কাছে লেখাপড়ার থেকে নামাজ রোজা হজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ও ইংরাজী ভাষার থেকে আরবী ভাষা প্রিয়। এসবেরই পরিণাম তো শিক্ষায় পিছিয়ে যাওয়া! এর জন্য অন্যকে দায়ী করা যায় কি?
তাও মেনে নিলাম যে ওরা শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল। তাহলে স্বাধীনতা সংগ্রামে ওদের অংশগ্রহণ নাহয় কিছুটা কম হবে। শূন্য তো হওয়ার কথা নয়। সুতরাং মোট শহীদের মধ্যে ওদের সংখ্যা ৫৪ শতাংশ হবে না। কিছুটা কম হবে। অর্ধেক হোক। ২৭% হোক। আচ্ছা, আরো কম করে ধরি। ২০% হোক। ১০% হোক। কই ? একজনও বাংলার মুসলিম শহীদের নাম বলুন। পারবেন না। যুক্তবঙ্গের প্রায় ৩০০ শহীদের মধ্যে একজনও মুসলিম শহীদ নেই। কেন নেই? এ প্রশ্ন উঠবে না ? নিশ্চয় উঠবে।

বিশ্ববরেণ্য বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য্য সেন এর বাহিনীতে ১৫০ জন সদস্য ছিল যারা দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করতে এগিয়ে এসেছিল। সেইসময় ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামে হিন্দু ছিল ২০%, আর মুসলিম ছিল ৮০% । অথচ মাস্টারদার বিপ্লবী বাহিনীর ১৫০ জন সদস্যই এসেছিল ওই মাত্র ২০% হিন্দুদের মধ্যে থেকে। ৮০% মুসলিমের মধ্যে থেকে মাস্টারদা একজনও বিপ্লবী যোগাড় করতে পারেননি। কেন? নাকি মাস্টারদা আর এস এসের স্কুলে পড়ে হিন্দু সাম্প্রদায়িক হয়ে গিয়েছিলেন? তাই তিনি ইচ্ছা করে মুসলিমদেরকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

পাঞ্জাবেরও একই অবস্থা। পরাধীন ভারতে পাঞ্জাব ও বাংলা – এই দুটি প্রদেশ থেকেই সব থেকে বেশি শহীদ হয়েছিল। আবার এই দুটি প্রদেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। অথচ এই দুটি প্রদেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মধ্যে থেকে একজনও শহীদ হয়নি ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে। সমস্ত শহীদ হয়েছে সংখ্যালঘু হিন্দু ও শিখদের মধ্যে থেকে।
বলুন, মাত্র একজন করে বাঙালি মুসলমান অথবা পাঞ্জাবি মুসলমান শহীদের নাম বলুন। কেউ জানে? কেউ জানে না। তাহলে কি প্রমাণিত হল? হিন্দু মুসলমান একসঙ্গে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াই লড়েছে? আর কতদিন এই নগ্ন মিথ্যা নির্লজ্জ মাকুরা চালাবে?
আর একটা প্রয়োজনীয় তথ্য মনে রাখা দরকার। মুসলমানরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে ছিল ঠিকই। কিন্তু তাই বলে তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান বা সচেতনতা কম ছিল? স্বাধীনতার আগে বাংলায় দুবার (১৯৩৭ ও ১৯৪৬) নির্বাচন হয়েছিল এবংমন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছিল। মোট ৩ জন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিল। তা হিন্দুরা শিক্ষায় এত এগিয়ে ছিল, এত ডাক্তার উকিল ব্যারিস্টার শিল্পী সাহিত্যিক জমিদার রায়বাহাদুর নেতা – সব হিন্দুরা ছিল, কিন্তু তিন তিনজন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে একজনও হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী হল না কেন? পাঞ্জাবেও তাই। বাংলায় তিনজন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন, ফজলুল হক এবং সুরাবর্দী। শিক্ষায় যতই পিছিয়ে থাক, স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে যতই দূরে সরে থাক, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে কোনো অ-মুসলমানকে মুখ্যমন্ত্রী তারা মেনে নেবে না। তাহলে রাজনৈতিক সচেতনতার কোনো ঘাটতি ছিল? ও, শুধু শহীদ হওয়ার সময়, জেলে যাওয়ার সময়, আন্দামানে জেলে যাওয়ার সময় ওদের সচেতনতার অভাব নজরে পড়ে? মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়ার সময় সচেতনতার অভাব হয় না?

মাকুদের এই ছেঁদো যুক্তি আর কতদিন চলবে?

স্বাধীনতার জন্য ওরা লড়াই করল না, প্রাণ দিল না, রক্ত দিল না, জেল খাটল না। কিন্তু হিন্দুর প্রাণ ও রক্তের মূল্যে স্বাধীনতা যখন আসন্ন, তখন ওরা ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ল ভাগ আদায় করার জন্য। হিস্যা বুঝে নেওয়ার জন্য। তখন সচেতনতার অভাব হল না। তারা স্লোগান দিল, আগে পাকিস্তান দিতে হবে তবেই ভারত স্বাধীন হবে; লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান, নাড়ায়ে তকবীর আল্লাহু আকবর। শুধু স্লোগান দিল না। ছুরি বের করল, পিস্তল বের করল, সারা দেশে দাঙ্গা করল। হিন্দু গণহত্যা করল। পাকিস্তানের দাবীতে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান আদায় করে নিল।
স্বাধীনতা আন্দোলনে এক বিন্দু রক্ত ঝরালো না। কিন্তু পাকিস্তান আদায় করার জন্য রক্তের নদী বইয়ে দিল। হিন্দুর, শিখের ও নিজেদের।
তাহলে স্বাধীনতা আন্দোলনে হিন্দু মুসলমানের একসঙ্গে লড়াইয়ের চিত্রটা পরিষ্কার হল?………….

রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে ইচ্ছা করে,
অয়ি ইতিবৃত্তকথা ক্ষান্ত কর মুখর ভাষণ।
ওগো মিথ্যাময়ী
তোমার লিখন -‘পরে বিধাতার অব্যর্থ লিখন
হবে আজি জয়ী।

লেখক: তপন ঘোষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.