প্রকৃতির কাছে মানুষ চিরদিনই ক্ষুদ্র। সে কথাই ফের প্রমাণিত হল। ৬০ বছরের মধ্যে সবথেকে বড় বন্যার মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া। গত কয়েকদিনের বিরামহীন বৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের নদীগুলো বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আর তাতেই দেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজধানী সিডনির আশপাশ এবং কুইন্সল্যান্ডের দক্ষিণপূবাঞ্চলের নদী ও বাঁধগুলো উপচে পড়ছে।
মুষলধারে বৃষ্টির জেরে দেশের বেশিরভাগ অংশ জলের তলায়। ডুবে গিয়েছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর। আড়াই কোটি জনসংখ্যার দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিপদের মধ্যে পড়েছেন। সংবাদমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে, নিউ সাউথ ওয়েলসের টারে শহরে নদীর জলে একটি বাড়ি ভেসে যেতে দেখা গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া প্রশাসন সতর্কতা জারি করে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেছে। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাত ও বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। ইতিমধ্যেই বহু মানুষ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। দাবানলের সময় তৈরি হওয়া আশ্রয় কেন্দ্রেগুলিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। বন্যা বিধ্বস্ত অঞ্চলে ১০০টিরও বেশি আশ্রয় খোলা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার মানুষকে বিপদসংকুল এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বসবাস করেন। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ১৫০টি স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। যাঁরা এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মরিসন। তিনি বলেন, এটি আমাদের দেশের জন্য আর একটি পরীক্ষা। দেশের ইতিহাসে কখনও মহামারীর পর আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি হয়েছিল কিনা তা আমাদের জানা নেই।
এদিকে, টারের আশ্রয় কেন্দ্রের প্রধান পল অ্যালেন এই বন্যাকে ‘প্রাণঘাতী’ বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “সব হারিয়েছেন এলাকাবাসী।” মূলত মৌসুমি বৃষ্টির ফলে এই বন্যা বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অস্ট্রেলিয়া সরকার বলছে, এমন বন্যা ১০০ বছরে একবারই আসে। তবে প্রাণহানির কোনও খবর মেলেনি। আশার কথা শুনিয়েছেন সেদেশের আবহাওয়াবিদেরাও। তাঁরা বলেছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি কমে যাবে। প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালের পর থেকে সিডনিতে এই ধরনের বন্যা প্রথম বলে জানান ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা।
2021-03-29