ইদানীং বেশ কিছুদিন ধরে দাসনা দেবী মন্দিরটি খবরের শিরোনামে আসছে। স্থানীয় মুসলমানরা মন্দির কতৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে মন্দির অপবিত্র করলে স্থানীয় হিন্দুরা তার প্রতিবাদ করে‚ আর তারপরেই মিডিয়ার দৃষ্টি গিয়ে পড়ে মন্দিরটির উপর। হিন্দু বিরোধী লিবারেল আর কমিউনিস্টরা যখন মুসলিম ছেলেটার চড় খাওয়ার ঘটনাকে সামনে রেখে আরেকটা হিন্দু বিরোধী আন্দোলনের পায়তারা করছিলো‚ তখন তারা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি যে তাদের সেই চেষ্টা ব্যাকফায়ার করবে ও স্থানীয় হিন্দুদের উপর মুসলমানদের জেহাদী অত্যাচারে ঘটনা সারা দুনিয়ার সামনে চলে আসবে।
এই দাসনা দেবী মন্দিরে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পেছনে আছেন মঠাধ্যক্ষ যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতী। সম্প্রতি সমাচার মিডিয়া ২৪*৭ কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন যে কিভাবে‚ কোন ঘটনার ফলে তিনি একজন আত্মসচেতনতাহীন সেকুলার হিন্দু থেকে একজন ধর্মপ্রাণ সন্ন্যাসীতে রূপান্তরিত হলেন। এই সাক্ষাৎকারে তিনি অন্যান্য হিন্দুদের আহ্বানও জানান নিজেদের মা বোনদের প্রান-মান রক্ষার জন্যে।
এছাড়াও অসংখ্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়াতেও তিনি জানিয়েছেন যে মন্দির চত্বরে চুরি, ডাকাতি এবং মহিলা ভক্তদের শ্লীলতাহানির ক্রমাগত চেষ্টায় বিরক্ত হয়ে কিভাবে তিনি মুসলমানদের প্রবেশ নিষেধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কোনোরকম পিছু না হটে তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন যে হিন্দুদের স্বার্থ ও নিরাপত্তা তাঁর কাছে সবার আগে। তাই তিনি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরবেন না।
দীপক ত্যাগী থেকে যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতীঃ একটি জীবনের পরিবর্তন।
যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতীকে এখন আমরা যেমন দেখছি তিনি কখনোই সমসময় এমন ধার্মিক হিন্দু ছিলেন না। তিনিও ছিলেন বাকি অনেকের মতো একজন সেকুলার ও জেহাদ সম্পর্কে অজ্ঞ একজন অসচেতন হিন্দু। এই প্রবন্ধে আপনারা জানতে পারবেন যে ১৯৯৭ সালে একটি নিরীহ হিন্দু মেয়ের উপর জেহাদী অত্যাচার ও মেয়েটির মৃত্যু কিভাবে নরসিংহানন্দর জীবন পালটে দিয়েছিলো।
সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হওয়ার আগে যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতী পরিচিত ছিলেন দীপক ত্যাগী রুপে। অর্থাৎ তাঁর পূর্বাশ্রমের নাম ছিলো দীপক ত্যাগী। তিনি ছিলেন মস্কো থেকে এম.টেক. সম্পন্ন করা একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। সবসময়ই দীপক ত্যাগী জীবনে বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। তাই মস্কো থেকে ফিরে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন।
নরসিংহানন্দ সরস্বতী ছিলেন একটি উচ্চ-মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান। তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন বুলন্দশহরের কংগ্রেসের কর্মকর্তা এবং পিতা ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারী ইউনিয়নের জাতীয় পর্যায়ের নেতা। ত্যাগী পরিবারের ছেলে হওয়ার কারণে তিনি রাজনীতিতে ভালোভাবেই জড়িয়ে পড়েন ও খুব তাড়াতাড়িই সমাজবাদী পার্টির যুব ব্রিগেডের জেলা প্রধানের পদ পেয়ে যান।
নরসিংহানন্দ স্পষ্টই জানিয়েছেন যে সমাজবাদী পার্টির সাথে তাঁর যোগসূত্র‚ ঠাকুরদার কংগ্রেস নেতা হওয়া আর বিদেশে থেকে পড়াশোনা করার ফলে তিনি কখনোই হিন্দুত্ববাদের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন না। তাছাড়া ধর্মকে তিনি কুসংস্কার আর মিথ্যাচারের থেকে আলাদা কিছু বলে ভাবতেও পারতেন না। তিনি আরো বলেন যে মীরাটের মানুষ হওয়া‚ সমাজবাদী পার্টির নেতা হওয়া ও বিদেশে পড়াশোনা করার ফলে তাঁর প্রচুর মুসলমান বন্ধুও ছিলো।
যাইহোক‚ হিন্দুত্বের সাথে তাঁর প্রথম যোগাযোগ ঘটে বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং দিল্লির প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ বৈকুণ্ঠ লাল শর্মা “প্রেম” জীর মাধ্যমে। নরসিংহানন্দর মনে আছে যে শর্মাজির বর্ণনা করা জেহাদী অত্যাচার আর বীভৎস নৃশংসতার কাহিনীকে তিনি স্রেফ অবিশ্বাস করেছিলেন। অন্যান্য সেকুলাররাও যেমন করে আরকি। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই এমন একটি ঘটনা ঘটে গেলো যে সেকুলার দীপক ত্যাগী বাধ্য হলেন হিন্দুত্ববাদী নরসিংহানন্দতে পরিণত হতে।
জেহাদী অত্যাচারে জর্জরিত একটি হিন্দু মেয়ের আত্মহত্যা ও দীপক ত্যাগীর মেটামরফোসিস।
দাসনা দেবী মন্দিরের এই মোহান্ত জানিয়েছেন যে যেহেতু তিনি স্থানীয় নেতা ছিলেন‚ তাই একটি হিন্দু মেয়ে একবার তাঁর সাথে দেখা করতে আসে। তার কলেজের মুসলিম ছেলেরা কীভাবে তাকে যৌন নির্যাতন করেছিল তারই বর্ণনা দিয়েছিলো মেয়েটি। নরসিহানন্দের বিবরণ অনুযায়ী‚ মেয়েটির বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো একটি মুসলমান মেয়ে। সেই মুসলমান মেয়েটা আবার হিন্দু মেয়েটির সাথে একটা মুসলমান ছেলের যোগাযোগ করিয়ে দেয়। মুসলমান ছেলেটি যেভাবেই হোক‚ মেয়েটির কিছু আপত্তিকর ছবি হাতে পায় এবং তা দিয়ে মেয়েটিকে ব্লাকমেইল করা শুরু করে। মেয়েটিকে বাধ্য করা হয় কলেজের প্রত্যেকটি মুসলমান ছেলের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে। আর সেই মেয়েটি একাই হতভাগ্য ছিলো না‚ সেই কলেজের কম করেও ৫০ টি হিন্দু মেয়েকে একইভাবে মুসলমান ছেলেরা ব্লাকমেইলের মাধ্যমে যৌন শোষন করছিলো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু হিন্দু ছেলেও এই সংগঠিত অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলো।
এই নৃশংস অত্যাচারের কথা শুনে নরসিংহানন্দজী বিষ্মিত হয়েছিলেন। তিনি যখন মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেন যে এতদিন কেন সে মুখ বুজে ছিলো‚ তখন তাঁর বিষ্ময়ের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়ে মেয়েটি উত্তর দেয় যে মুসলমান ছেলেগুলো নরসিংহানন্দজী তথা দীপক ত্যাগীরই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। দীপক ত্যাগীর আশেপাশেই তাদের নিয়মিত দেখা যায়। মেয়েটির অভিযোগ ছিলো যে দীপক ত্যাগীর মতো লোকদের জন্যই মেয়েদের যৌন নির্যাতিত হতে হয়।
“সে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে এই জঘন্য ঘটনার জন্যে। কিন্তু আমি এই সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। মেয়েটি বলে যে এই সম্পর্কে কিছুই না জানা আমার পক্ষে অসম্ভব। মুসলমান ছেলেগুলো মেয়েগুলোকে নিয়ে একের থেকে অন্যদের কাছে পাঠায়। মেয়েরা মাংস খেতে বাধ্য হয়। আপনিও নিশ্চয়ই এসবের ভাগ পান। মেয়েটির কথা আমার হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়।” যতি নরসিংহানন্দজী এই কথা জানিয়েছেন।
মেয়েটির দুর্ভোগ আর যন্ত্রনার কথা মনে করে
নরসিংহানন্দ বলেন‚ মেয়েটি আমায় অভিশাপ দিয়েছিল যে একদিন আমারও মেয়ে হবে আর সে একইভাবে মুসলমানদের দ্বারা অত্যাচারিত ও যৌন নিপীড়িত হবে।
নরসিংহানন্দজী যখন মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেন যে এই ঘটনার মধ্যে হিন্দু-মুসলমান ইস্যু কোথা থেকে আসলো‚ তখন মেয়েটি জানায় যে এটা হলো হিন্দুদের বিরুদ্ধে করা মুসলমানদের এক ধরনের জেহাদ।নরসিংহানন্দ জানান যে জীবনে সেই প্রথম তিনি জেহাদ শব্দটা শুনেছিলেন।
তাঁর প্রবন্ধে নরসিংহানন্দজী লিখেছেন যে – “আমি সেই মেয়েটির হাত আমার হাতের মধ্যে রাখি আর বলি যে মেয়েটির যন্ত্রনা অনুভব করার জন্যে আমার কোনো কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ার প্রয়োজন নেই। মেয়েটি তখন তীব্রস্বরে কাঁদতে শুরু করে ও ধীরেধীরে আমার অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। আমি মনের ভেতরে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছিলাম। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে নিশ্চলভাবে আমি সেখানেই বসে ছিলাম‚ আমার মনের ভেতরে এক জটিল তোলপাড় চলছিলো। এই মন্থন আমার মনে এক নতুন অনুভূতির জন্ম দেয় আর চিরকালের জন্যে আমার জীবন বদলে যায়। আমি ইসলাম সম্পর্কিত বই ও ইসলামের ইতিহাস পড়া শুরু করলাম। যত আমি বইগুলো পড়ছিলাম ততই আমি মেয়েটার যন্ত্রণা আর বেদনা
অনুভব করতে পারছিলাম।
যাইহোক, যখন নরসিংহান্দ মেয়েটির পক্ষে দাঁড়িয়ে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিলেন‚ তখনই মেয়েটি মারা যায়। তিনি বলেন যে আজও মেয়েটি তাঁর স্বপ্নে তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। আজও তিনি মেয়েটির যন্ত্রনা আর কান্না অনুভব করতে পারেন।
নরসিংহানন্দজী লিখেছেন যে “একজন বাবা ও ভাইয়ের মতোই আমি তাকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি”! আমি তার জৈবিক পিতা নাই হতে পারি কিন্তু আমি তাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখি। বছরের পর বছর ধরে এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটি আমি মনের ভেতরে চেপে রেখেছিলাম। কিন্তু আজ তা সবার সামনে বলা জরুরি হয়রানির পড়েছে।”
” ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা বিপদ গুলোর প্রতি হিন্দুদের চোখ বন্ধ করে থাকলে চলবে নাঃ যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতী
“মেয়েটি আমায় বুঝিয়েছিল যে হিন্দুরা বহুদিন ধরেই কি ভুলে বসে আছে। একজন কন্যা শুধুমাত্র একজন মানুষের কন্যাই নয়‚ সে পুরো একটি সম্প্রদায়েরই কন্যা।” তিনি আরো বলেন যে আমি জানিনা আমাদের কি হয়েছে যে আমরা ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা বিপদ গুলোকে স্বীকার করতে চাইনা।
তিনি বলেছিলেন যে হিন্দু মেয়েদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিপদগুলো দেখেও হিন্দুদের বিবেক জেগে ওঠে না। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে বর্তমানে এমন ঘটনার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে কিন্তু এগুলো আর আমাদের মনকে নাড়া দেয় না।
“কোনো কিছু নিয়েই আমার কোনো আফসোস নেই। আমি যা করতে পারতাম তা আমি করেছি। আমি যা করতে পারি তা যতদিন বেঁচে আছি ততদিন অবশ্যই করব।
আমি শুধু দুঃখিত এই কারণে যে কয়েকটা মাত্র পচা আপেলের কারণে পুরো হিন্দু সম্প্রদায়টাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আর আমরা তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে পারছি না।” – নরসিংহানন্দজী বলেন।
শেষে নিজেদের মেয়েদের ইসলামী জেহাদের থাবা থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়া হিন্দু সম্প্রদায় ও হিন্দু নেতাদের প্রতি নরসিংহানন্দ কঠোর বাক্য প্রয়োগ করেন।
তিনি চান হিন্দুরা যাতে বুঝতে পারে যে বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার এবং হিন্দু মেয়েদের বিরুদ্ধে ঘটা এই ধরনের সংঘবদ্ধ সন্ত্রাস বন্ধ করার এটাই সঠিক সময়। আর এই বিষয়গুলো মেনে নেবে এমন নেতাদের নির্বাচিত করার উপরে জোর দিয়ে নরসিংহানন্দ তাঁর প্রবন্ধটি শেষ করেন।