গত ডিসেম্বর মাসে শিলিগুড়ি হতে গাড়ি করে ফিরছিলাম। কুয়াশার প্রকোপে পড়ে রাত্রিতে আর গাড়ি চালানো সম্ভব হলো না। তখন রাত প্রায় বারোটা বাজে। করণদীঘির কাছাকাছি এসে এত ঘন কুয়াশা যে গাড়ি আর এগোনো গেল না। বাধ্য হয়ে আশেপাশের কোন হোটেল বা ধাবাতে খাবার খেয়ে গাড়িতে রাত্রি যাপন করার সিদ্ধান্ত নিলাম। বেশ কিছুদূর আস্তে আস্তে চলার পর একটি বেশ চকচকে ধাবা দেখতে পেলাম।ছোটো কিন্তু বেশ সাজানো গোছানো। ধাবার ভেতরে কাস্টমারও বেশ ভালোই রয়েছে। ধাবার সামনে বেশ বড় বড় দেবদেবীর ছবি।বাবা ভোলানাথ,মা কালী ,মা মনসা, মহিষাসুরমর্দিনী সহ নানান দেবদেবীর ছবি দেখে গিন্নি বেশ সহজ ও সরল বিশ্বাসের দৃষ্টিতে আমাকে ইশারায় বোঝালেন যে এটা হিন্দুদের হোটেল। বাবা ভোলানাথের গান বাজছে উচ্চঃস্বরে।ফলে আমার অর্ধাঙ্গিনীর ভক্তি আরো প্রবল হল। রাত্রি ভোজন করে গাড়িতে বিশ্রাম নেবার কথা ফাইনাল করলাম। কারণ ওই ধাবাতে থাকার কোন ব্যবস্থা যেহেতু ছিল না।চারদিক নিস্তব্ধ ও ঘন কুয়াশায় ঢাকা। এমন এক পরিস্থিতিতে গাড়িতে থাকাটা কতটা নিরাপদ জানতে চাইলে ধাবা মালিক বললেন -“আলম শেখের (নাম পরিবর্তিত) ধাবাতে কারোর চোখ তুলে তাকাবার সাহস নেই, আপনারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন”। আমরা যেন আকাশ থেকে পড়লাম। কিছুটা সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- “দাদা আপনি কি হিন্দু নন ? আপনি মুসলিম?” উনি ব্যঙ্গাত্মক সুরে বললেন -“তো কি হয়েছে? শুধু আমি নয় আমার ধাবার সমস্ত কর্মচারী ও মুসলিম।” আমি ও আমার স্ত্রী একে অপরের দিকে তাকালাম। তারপর কিছুটা সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- “তাহলে ধাবার নাম হিন্দু নামে কেন? সামনে দেবদেবীর ছবিই বা কেন? ভক্তিগীতিই বা চলছে কেন?”প্রভৃতি সাধারন প্রশ্ন।উনি উত্তরে বললেন – “সবই বিজনেস দাদা, হিন্দু কাস্টমার কে ধরার জন্য” কথা বেশি না বাড়িয়ে খুব সকাল সকাল ওই ধাবা ত্যাগ করেছিলাম।


পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে বন্ধুমহলে চর্চা করতে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসলো, যা বেশ চিন্তার বিষয় বলেই মনে হয়। শিলিগুড়ি হতে কলকাতা যাবার পথে এন এইচ এর আশেপাশে এমন অনেক হোটেল আছে যা হিন্দু নামের বা হিন্দু দেবদেবীর নামে। যেমন শিব হোটেল, বিশ্বকর্মা ধাবা প্রভৃতি নামের।যার মালিক ও কর্মচারী মুসলিম। হিন্দু কাস্টমার ধরতে এই ধরনের ব্যবস্থা। আস্থার প্রতি প্রত্যক্ষ বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কি বা হতে পারে এসব? কোন মানুষের ধর্ম নিয়ে তার বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করে এই রকম ভয়ঙ্কর ফাঁদ পাতা হয়েছে প্রায় সারা ভারতবর্ষ জুড়ে।এই ভাবে চলছে রমরমা ব্যবসা। হিন্দুদের টাকা যাচ্ছে অন্য সম্প্রদায়ের কাছে।আর তা ঘুরপথে কি কাজে লাগছে নিশ্চয়ই সবার জানা। আন্তর্জাতিক এই চক্র যে দুয়ারে কড়া নাড়ছে তা নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম সেদিন।
রাজস্থান,মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের হাইওয়েতে ও এরকম অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। যাদের নাম ‘আশীর্বাদ’, ‘সহযোগ’, ‘ভাগ্যোদয়’, ‘সর্বোদয়’, ‘অলংকার’, ‘তুলসী’, ‘সর্বোত্তম’, ‘শিব-দুর্গা’ প্রকৃতি হিন্দু নামের। কিন্তু এই হোটেলগুলি হলো একটি চেন সিস্টেমের হোটেল যা ‘ চেলিয়া ‘ নামক মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বারা পরিচালিত হয়।এই হোটেল গুলির সমস্ত কর্মচারী মুসলিম সম্প্রদায় হতেই নেওয়া হয়। এবং “চেলিয়া গ্রুপ অফ হোটেলস” এর হেড অফিস হলো আমেদাবাদে। এই হোটেল গুলির সম্পূর্ণ কেনাকাটা হয়ে সেন্ট্রালাইজড পদ্ধতিতে। অর্থাৎ এরা কোলড্রিংস, চিপস প্রভৃতি কোম্পানির সাথে ডাইরেক্ট ডিল করে। এবং বাল্ক বা পাইকারিতে জিনিসপত্র খরিদ করে থাকে। ফলে বড় বড় সাপ্লাই কোম্পানি এই চেলিয়াদের কৃপার পাত্র হয়ে থাকে সর্বদা।এছাড়াও এদের নিজস্ব কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। যা কিছু কেনাকাটা করা হয় তা এই সমস্ত কোল্ডস্টোরেজ থেকে সেন্ট্রালাইজড পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। এমনকি এরা হোটেলের সামান্যতম জিনিস অন্য কোন সম্প্রদায় থেকে না নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। যেহেতু হোটেলগুলি হিন্দু নামে তাই অনেক হোটেলের সামনে “ওনলি ভেজ” বা “শুদ্ধ শাকাহারি” বলে সাইনবোর্ড ও টাঙানো থাকে। যাতে করে শাকাহারী হিন্দুরাও এই হোটেলগুলোতে আসতে পারে।এই পুরো হোটেল ব্যবস্থা চলে ফ্রেঞ্চাইজি মডেলে।যা মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। মহরমের সময় প্রায় কুড়ি দিন গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের হাইওয়ে হোটেল গুলির নব্বই শতাংশ বন্ধ থাকে। লরি ও বাস মালিকদের দামী দামী গিফট দিয়ে গ্রাহক টানার ব্যবস্থাও করা হয়। হিন্দুদের থেকে টাকা বার করে নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতরণের এই ভয়ঙ্কর কাজ করে চলেছে “চেলিয়া গ্রুপ অফ হো টেলস” সুপরিকল্পিতভাবে।
Hinduu Nation পত্রিকাতে গত 9 ই মে 2020 তে “Highway Hotel with Hindu Names and Chelia Muslim Owners” শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়। যেখানে বলা হয়েছে-“Highway Hotel with Hindu Names And Chelia Muslim Owners,Not Allowing Any Hindu Hotel To Run In Competition……..Exposing a Dangerous Business Model……The only thing unfair or illegal in their business model is that they do not employ Hindus,and fund Jihadis.Any illegal thing they are doing can be dealt with legal process. Hindus can unite and compete with them with a better business model……Sadly, till now Hindus could not understand this dirty game of Chelia muslims and eat them in their hotels and make them financially stronger………and then some of this money also goes to the terrorists….It is more dangerous that these people do not allow any Hindu hotel to run…… “ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের কার্যকলাপ কতটা সংবিধানসম্মত তা বুদ্ধিজীবীরাই বলতে পারবেন। India Today পত্রিকা তে “”Chelia Muslims of north Gujrat became synonymous with restaurant business in western India” নামক শিরোনামে চেলিয়া মুসলিমদের একচেটিয়া এই হোটেল ব্যবসা নিয়ে বিশদ লেখা প্রকাশিত হয়। যেখানে উসমান ভাই দর্জি যিনি ‘সাগর’ রেস্টুরেন্টের মালিক, তিনি বলেছেন-“We believe in promoting our brethren…..lately, there is a slight shift to other areas of business–Chelias run die -making,garment and construction units… “অর্থাৎ হোটেল ব্যবসার টাকা লাগানো হচ্ছে অন্যান্য ব্যবসাতে। সেখানেও ওই একই চেলিয়া চেন সিস্টেম।যা কেবলমাত্র নিজের সম্প্রদায়ের লোকের অর্থনৈতিক উন্নতি করছে। এইভাবে যদি ভারতবর্ষের সমস্ত সম্প্রদায় ও জাতি আলাদা আলাদা ভাবে ভাবতে শুরু করে এবং অন্য সম্প্রদায়ের জন্য ‘নো-এন্ট্রি’ চালু করে করে দেয় তাহলে কিভাবে ভারতের অখন্ডতা রক্ষা পাবে ? যা নিয়ে আমরা অবাধ গর্ববোধ করি।।The Economics Times পত্রিকাতে “The Cheliyas close -knit community with thriving restaurant chains ” শিরোনামে লেখাতে এদের ভবিষ্যৎ বিজনেস স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বিশদ লেখা রয়েছে। প্রায় নয় বছর আগে 2010 সালের 23 শে আগস্ট বিবিসি তার বিজনেস ডেইলি (বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস)পেজে “Business Jihad:How Muslim firms can achieve a bigger global presence ” শীর্ষক শিরোনামে জেমস মালিক লেখেন-“The chief executive of the giant Johor corporation in Malaysia is ensure more Muslim companies are included amongst the World’s big corporate names …..Business jihad is about Mr.Hashim’s holistic vision of the role of business…..” অর্থাৎ সারা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য বা ব্যবসার জন্য জিহাদ করতে হবে। হচ্ছে ও তাই। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের থেকে তাদের ধর্মের মোড়কে বোকা বানিয়ে উপার্জন করা।অন্যের ধর্মের আবেগের সাথে ছলনা করে এই ধরনের কার্যকলাপ চলছে এবং আগামী দিনে আরো বাড়তে থাকবে। যার ফল হচ্ছে ও হবে মারাত্মক। ব্যবসা-বাণিজ্যে একচেটিয়া দখল নিচ্ছে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি। একটু সজাগ হলেই বোঝা যাবে এদের উদ্দেশ্য। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও একই। বানিজ্য বিমূখ বাঙালি হিন্দুর শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যাচ্ছে হু হু করে। আর বাঙালি হিন্দু তার নিত্য লড়াই,অনশন চালিয়ে যাচ্ছে বিবেকানন্দের কথায় “ঐ ত্রিশ টাকার কেরানিগিরি” জন্য।
প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি ঘটনা মনে পড়লো।বছর সাতেক আগে বহরমপুরে গেছিলাম পাসপোর্ট অফিসে।কাজ সেরে দুপুরের খাবারের জন্য পাসপোর্ট অফিসের সামনে এসে দেখলাম বেশ কয়েকটি খাবারের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে একটি ভালো হোটেল দেখে আমি দুপুরের ভোজন করতে বসলাম।কিছুক্ষণ পর একটি মুসলিম পরিবার ওখানে খাবার খেতে আসলো। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই পাশের মুসলিম হোটেলের মালিক তার কর্মচারী(?) দের নিয়ে হাজির এবং জোর গলায় যা যা বললেন তা আজকের লেখার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক।পাশের ঐ মুসলিম হোটেল মালিক যে মুসলিম পরিবার খেতে এসেছিল তাদের বললেন “এয় তোমরা মুসলিম না? তবে এখানে কেন? চলো আমার হোটেলে। এটা তো হিন্দুর হোটেল। ” এই বলে প্রায় জোর করে ওই মুসলিম পরিবার কে নিজের হোটেলে নিয়ে গেলেন। আমি যে হোটেলে খেতে গেছিলাম তার মালিক কোন প্রতিবাদ করল না দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ” কি হল দাদা? আপনি কিছু বললেন না কেন?” উনি বলেছিলন- “কি করবো দাদা !! এটা রোজকার বিষয়, ওদের সাথে আমরা পারব না।” ঠিক ই তাই আমরা মেনেই নিয়েছি, আমরা পারব না।

ড.সুমন পানিগ্রাহী (Dr. Suman Panigrahi)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.