shiya-sunni

শিয়া-সুন্নি সংঘাত : এই সন্ত্রাস এবার বন্ধ হোক

একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী হওয়ার জন্য প্রায়শই ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবে তুলে ধরা হয়। সারা বিশ্বে খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ‍্যা সবচেয়ে বেশী। তবে এই দুই ধর্মের আভ‍্যন্তরীন বিরোধ কারো অজানা নয়। আর যদি সহিষ্ণুতার কথা বলা হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে এই ব‍্যাপারে ইসলাম অনেক যোজন পিছিয়ে রয়েছে, এখনও অবধি এই ধর্মের করালগ্ৰাসে বলি হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। এত কিছুর পরেও কেন এই ধর্মকে শান্তির ধর্ম বলে দাবি করা হয় সেই প্রশ্নের​ সঠিক কোনো উত্তর যদিও নেই।

এই লেখার মাধ্যমে আমি যতই আক্ষেপ করিনা কেন সেটা কখনোই যথেষ্ট হবে না এবং এই শিয়া ও সুন্নি বিরোধের​ আসল সত্য আমি তুলে ধরার চেষ্টা করবো। এই সংঘাত প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার উপর, সৃষ্টি হয়েছিল এক চরম অসহায় অবস্থার। এই বিরোধের জেরে কত শত শিশুর সুন্দর ভবিষ্যত ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এই মৌলবাদের শিকার না হলে তারা সবাই একটা সুস্থ পরিবেশ এবং ভালো জীবন পেতে পারতো।

চলুন এবার দেখে নিই যে এই শিয়া-সুন্নি বিরোধের মূল কারণ কি ছিল? যদিও শিয়া এবং সুন্নি হ’ল ইসলামের প্রধান দুটি সম্প্রদায়। সুন্নি- শিয়া সম্প্রদায় ইসলামের বেশিরভাগ মৌলিক বিশ্বাস এবং কার্যকলাপের বিষয়ে একমত হলেও তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে ছিল তীব্র ঘৃণা যার ফলে তাদের সার্বিক উন্নয়ন তো দূরে থাক, পুরো সম্প্রদায়কে প্রায় ১৪ শতাব্দীরও​ বেশি সময় পিছনে নিয়ে গিয়েছিল।

নবী মহম্মদের পর তাঁর যোগ‍্য উত্তরসূরী কে হবেন সেটাই ছিল বিরোধের মূল কারণ। দক্ষিণ এশিয়ার​ মানুষেরা প্রায়শই ভারতীয় সমাজের ঔপনিবেশিক বর্ণভেদ প্রথা, যার মাধ্যমে একজন উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির​ অংশীদার হয়ে ওঠে, সেইসব নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু এইরকম গৌন বিষয়ের নীচে চাপা পড়ে যায় শিয়া-সুন্নী বিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গুলো যার ফল এখনও আমাদের ভুগতে হচ্ছে। এই সম্পর্কে আমি আরও বিশদে আলোচনা করছি।

এই সংঘাতের কারণকে আরও গভীরভাবে​ পর্যালোচনা করে জানতে পেরেছি যে, নবী মহম্মদের পরবর্তী উত্তরসূরী হিসাবে তাঁর বেশিরভাগ অনুগামীরা একদল অভিজাত সদস্যদের​ চেয়েছিলেন। অন‍্যদিকে কিছু সংখ্যক অনুগামী চেয়েছিলেন মহম্মদের পরিবারের সদস্য যেমন শিয়াট আলি বা সিমপ্লী আলিকে পদাভিষিক্ত করতে। এইভাবেই ক্ষমতার​ তীব্র লোভ জন্ম দিয়েছিল বিরোধ, বোমাবাজি, হানাহানি সর্বোপরি সন্ত্রাসবাদের।

সুন্নি সম্প্রদায়ের​ পক্ষ থেকে জয়ী হওয়া আবু বকরকে প্রথম খলিফা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল এবং আলী (শিয়া) হয়েছিলেন চতুর্থ খলিফা, আবু বকর সহ বাকি ২জন উত্তরসূরির হত‍্যার পর। আলী ৬৬১ খ্রীষ্টাব্দে নিহত হন এবং এরপর সম্পর্কের এক নতুন সমীকরণের সূচনা হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করাই মুখ‍্য উদ্দেশ্য ছিল না তার পাশাপাশি ছিল অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ। ইসলামপন্থীরা​ বিভিন্ন উপজাতিদের কাছ থেকে কর (জিজিয়া) হিসাবে অর্থ আদায় করত। সেই শতাব্দীর অ-মুসলিম এবং নিম্ন সম্প্রদায়ের মুসলিমদের​ থেকে এইভাবে আদায় করা অর্থের সাহায্যেই​ গড়ে উঠেছিল এক বিশাল সাম্রাজ্য যার বিস্তৃতি ছিল মধ‍্য এশিয়া থেকে স্পেন পর্যন্ত।

৬৮১ সালে আলীর পুত্র হুসেন ৭২জন অনুগামী এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মক্কা থেকে কারবালায় গিয়েছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল যে উম্মাদ রাজবংশের দুর্নীতিবাজ খলিফা ইয়াজিদের মোকাবিলা করে তাদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করা।

সুন্নিরা নিজেদের সেনাবাহিনী নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে এবং ১০ দিন এইভাবে থাকার পর, মৃত হুসেনের​ দেহ শিরচ্ছেদ করে পাঠানো হয়। সুন্নিরা​ খলিফার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাঁর রক্তাক্ত​ মাথাটি দামাস্কাসে পাঠিয়ে দেয় এবং শিয়া সম্প্রদায়ের দাবিতে সেটা প্রতীকী চিহ্ন হিসাবে রাখা হয়েছিল। যাইহোক হুসেনের মৃত্যু এখনও​ শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাঁর মৃত্যুদিবস শিয়া বর্ষপঞ্জীর একটি বিশেষ দিন, আসৌরা হিসাবে পালিত হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে, কয়েকটি বড় ঘটনা এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে চলা বিরোধকে ত্বরান্বিত করার কারন হিসাবে ধরা যেতে পারে।

ষোড়শ শতাব্দীতে জোর করে সুন্নি থেকে শিয়া-তে রূপান্তর করানোর মাধ্যমে সাফাভিদ রাজবংশের উত্থান ঘটেছিল।

বিশ শতকের গোড়ার দিকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রশক্তি পূর্বতন অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা অঞ্চলগুলিকে ভাগ করে দেয়। আর এইভাবেই শতাব্দী-প্রাচীন ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায় ধীরে ধীরে ভাঙতে থাকে।

১৯৭৯ সালে, ইরানের ইসলামী বিপ্লব শিয়া সম্প্রদায়কে মৌলবাদী করে তুলেছিল যাতে পরবর্তী কয়েক দশকে সৌদি আরব বা অন্য কোথাও সুন্নি রক্ষণশীলদের সাথে সহিংস সংঘর্ষের জড়াতে না পারে। ইসলামিক বিপ্লবকে যখন মূলত আমেরিকা বনাম ইরানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়, তখন বোঝা যায় যে এটাই ছিল সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক কারণ এবং তার ফলাফল।

ক্রমবর্ধমান মৌলবাদ বিশেষত দুটি পার্সিয়ান উপসাগরীয় যুদ্ধে ক্রমবর্ধমানভাবে​ মৌলবাদ বিস্তার লাভ করে। সাদ্দাম হুসেনের পরে ইরাকে সুন্নিদের শাসনকাল এবং ২০১১সালে আরবের​ বিশাল অঞ্চলজুড়ে শুরু হওয়া গণ-অভ্যুত্থান দু’জনের মধ্যে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছিল।

সুন্নি-শিয়া সম্প্রদায়ের মাঝের এই বিরোধ সিরিয়াকে ক্রমশ অন্ধকারের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। ভয়াবহ পরিস্থিতির​ সৃষ্টি হয়েছিল লেবানন, ইরান, ইরাক, ইয়েমেনসহ অন্যান্য জায়গায় এবং এর সাথে সাথেই দু’পক্ষের মধ‍্যেই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বেড়ে চলেছিল।

আমি আরও একটি বিষয় উল্লেখ করার দরকার আছে বলে মনে করি তা হ’ল নেহেরু- লিয়াকত চুক্তি অনুসারে ভারত এবং তার আশেপাশের মুসলিম দেশগুলোতে যেসব সংখ্যালঘু অমুসলিমরা​ দিনের পর দিন নির্যাতন এবং অন‍্যায়ের শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে তাদের রক্ষা করার জন্য যখন ভারত সরকার সিএএ এনেছিল তখন তা সঠিক পর্যালোচনার অভাবে যে মানুষের কাছে ভুল তথ্য পৌঁছে ছিল যার ফলে সরকারের এমন একটি মহান উদ‍্যোগ বিরোধিতার মুখে পড়েছিল। মার্কিন বাম ইকোসিস্টেম, ভারতের ত্যাগ করা মিডিয়া হাউস এবং এমনকিএকেশ্বরবাদে বিশ্বাসী হওয়ার জন্য প্রায়শই ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবে চিত্রিত করা হয়। সারা বিশ্বে খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বেশী, কিন্তু এই দুই ধর্মের আভ‍্যন্তরীন বিরোধ কারো অজানা নয়। আর যদি সহিষ্ণুতার কথা বলা হয় তাহলে তো এই ব‍্যাপারে ইসলাম অনেক যোজন পিছিয়ে রয়েছে, এখনও অবধি এই ধর্মের করালগ্ৰাসে বলি হয়েছে এখনও অবধি লক্ষ লক্ষ মানুষ হত‍্যার শিকার হয়েছে এত কিছুর পরেও এই ধর্মকে শান্তির ধর্ম বলে কেন দাবি করা হয় সেই প্রশ্নের​ সঠিক কোনো উত্তর যদিও নেই।

এই লেখার মাধ্যমে আমি যতই আক্ষেপ করিনা কেন সেটা কখনোই যথেষ্ট হবে না, কারন এই শিয়া ও সুন্নি বিরোধের​ প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে,সমস্ত নারীদের​ উপর, এক চরম অসহায় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এই বিরোধের জেরে কত শত শিশুর ভবিষ্যত ধ্বংস করে দেওয়া হয়, যারা একটা সুন্দর পৃথিবী উপহার পেতে অসহায় পড়েছিল বিশ্বজুড়ে ফেলেছে, অসহায় হয়ে পড়েছে, এমন অনেক শিশুর ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দিয়েছে যারা কেবল যদি স্বাস্থ্যসম্মত হতে পারে তারা ছিল না।

চলুন এবার দেখে নিই যে শিয়া সুন্নি বিরোধের মূল কারণ কি ছিল? যদিও শিয়া এবং সুন্নি হ’ল ইসলামের প্রধান দুটি সম্প্রদায়। সুন্নি এবং শিয়া, ইসলামের বেশিরভাগ মৌলিক বিশ্বাস এবং কার্যকলাপের বিষয়ে একমত হলেও একে অপরের বিরুদ্ধে এই তীব্র ঘৃণা তাদের প্রায় ১৪ শতাব্দী পিছনে প্রায় তাদের শুরুর সময়ে নিয়ে গেছে।

নবী মহম্মদের পর তাঁর যোগ‍্য উত্তরসূরী কে হবেন সেটাই হল বিরোধের মূল কারণ। দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা প্রায়শই ভারতীয় সমাজের ঔপনিবেশিক বর্ণভেদ প্রথা নিয়ে আলোচনা করে। এই প্রথার মাধ্যমে উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির​ অংশীদার হয়ে ওঠে। কিন্তু এইসবের নীচে চাপা পড়ে যায় শিয়া-সুন্নী বিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যার ফল এখনও আমাদের ভুগতে হচ্ছে। এই সম্পর্কে আমি আরও বিশদে আলোচনা করবো।

এই দ্বন্দ্বের কারণকে আরও গভীরভাবে​ পর্যালোচনা করে জানতে পেরেছি যে , নবী মহম্মদের বেশিরভাগ অনুগামীরা একদল অভিজাত সদস্যদের​ চেয়েছিলেন যারা তাঁর জায়গায় স্থলাভিসিক্ত হবেন। অন‍্যদিকে কিছু সংখ্যক অনুগামী মহম্মদের পরিবারের সদস্য যেমন শিয়াট আলি বা সিমপ্লী আলিকে পদাভাষিক্ত করতে চেয়েছিলেন। এইভাবেই ক্ষমতা লাভের এই তীব্র লোভ জন্ম দিয়েছিল লড়াই, বোমাবাজি, হানাহানি সর্বোপরি সন্ত্রাসবাদের।

সুন্নি সম্প্রদায়ের​ পক্ষ থেকে জয়ী হওয়া আবু বকরকে প্রথম খলিফা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল এবং আলী (শিয়া) হয়েছিলেন চতুর্থ খলিফা, আবু বকর সহ বাকি ২জন উত্তরসূরির হত‍্যার পর। আলী ৬৬১ খ্রীষ্টাব্দে নিহত হন এবং এরপর সম্পর্কের এক নতুন সমীকরণের সূচনা হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করাই মুখ‍্য উদ্দেশ্য ছিল না তার পাশাপাশি ছিল অর্থনৈতিক মুনাফা লাভের জন‍্যও ছিল যা ইসলামপন্থীরা​ বিভিন্ন উপজাতিদের কাছ থেকে কর (জিজিয়া) হিসাবে আদায় করত। সেই শতাব্দীর অ-মুসলিম এবং নিম্ন সম্প্রদায়ের মুসলিমদের​ থেকে এইভাবে আদায় করা অর্থের সাহায্য গড়ে উঠেছিল এক বিশাল সাম্রাজ্য যার বিস্তৃতি ছিল মধ‍্য এশিয়া থেকে স্পেন পর্যন্ত।

৬৮১ সালে আলীর পুত্র হুসেন ৭২জন অনুগামী এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মক্কা থেকে কারবালায় গিয়েছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল যে উম্মাদ রাজবংশের দুর্নীতিবাজ খলিফা ইয়াজিদের মোকাবিলা করে তাদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করা।

সুন্নিরা নিজেদের সেনাবাহিনী নিয়ে ওদের জন্য তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিল, এবং ১০ দিন এইভাবে থাকার পর হুসেনকে মেরে এবং তার শিরচ্ছেদ করে পাঠানো হয়। সুন্নি খলিফার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাঁর রক্তাক্ত​ মাথাটি দামাস্কাসে পাঠানো হয় এবং শিয়া সম্প্রদায়ের দাবিতে প্রতীকী চিহ্ন হিসাবে রাখা হয়েছিল। যাইহোক হুসেনের মৃত্যু এখন শিয়া ঐতিহ্যে ক্ষেত্রে এক মুখ‍্য ভূমিকা পালন করে এবং তাঁর মৃত্যুদিবস শিয়া বর্ষপঞ্জীর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ তারিখ, আসৌরা হিসাবে বার্ষিকভাবে পালিত হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে, কয়েকটি বড় ঘটনা এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে চলা বিরোধকে ত্বরান্বিত করার কারন হিসাবে ধরা যেতে পারে।

ষোড়শ শতাব্দীতে জোর করে সুন্নি থেকে শিয়া-তে রূপান্তরের​ ঘটনার মাধ্যমে সাফাভিদ রাজবংশের উত্থান ঘটে।

বিশ শতকের গোড়ার দিকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রশক্তি পরে পূর্বতন অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা অঞ্চলগুলিকে ভাগ করে দেয়, আর এইভাবেই শতাব্দী-প্রাচীন ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায় ধীরে ধীরে ভাঙতে থাকে।

১৯৭৯ সালে, ইরানের ইসলামী বিপ্লব শিয়া সম্প্রদায়কে মৌলবাদী করে তুলেছিল যাতে তারা পরবর্তী কয়েক দশকে সৌদি আরব বা অন্য কোথাও সুন্নি রক্ষণশীলদের সাথে সহিংস সংঘর্ষে জড়াতে না পারে। ইসলামিক বিপ্লবকে মূলত আমেরিকা বনাম ইরানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বোঝা যায় যে এটাই ছিল সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক কারণ এবং তার ফলাফল।

বিশেষত দুটি পার্সিয়ান উপসাগরীয় যুদ্ধে ক্রমবর্ধমানভাবে​ মৌলবাদের​ বিস্তার ঘটেছিল। সাদ্দাম হুসেনের পরে ইরাকে সুন্নিদের শাসনকাল এবং ২০১১সালে আরবের​ বিশাল অঞ্চলজুড়ে শুরু হওয়া গণ-অভ্যুত্থান, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছিল।

সুন্নি-শিয়া সম্প্রদায়ের মাঝের এই বিরোধ সিরিয়াকে ক্রমশ অন্ধকারের মুখে ঠেলে দিয়েছিল, যারফলে এক টালমাটাল পরিস্থিতির​ সৃষ্টি হয়েছিল লেবানন, ইরান, ইরাক, ইয়েমেনসহ অন্যান্য জায়গায় এবং উল্লেখযোগ‍্যভাবে দু’পক্ষের মধ‍্যেই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বেড়ে চলেছিল।

আমি আরও একটি বিষয় উল্লেখ করার দরকার আছে বলে মনে করি তা হ’ল, নেহেরু- লিয়াকত চুক্তি অনুসারে ভারত ও তার আশেপাশের মুসলিম দেশগুলোতে যেসব সংখ্যালঘু অমুসলিমরা​ দিনের পর দিন নির্যাতন এবং অন‍্যায়ের শিকার হয়ে এসেছে এবং হচ্ছে তাদের রক্ষা করার জন্য যখন ভারত সরকার সিএএ এনেছিল তখন তা সঠিক পর্যালোচনার অভাবে মানুষের কাছে ভুল তথ্য পৌঁছেছিল যার ফলে সরকারের এমন একটি মহান উদ‍্যোগ বিরোধিতার মুখে পড়েছিল। মার্কিন বাম-মতাদর্শীসহ, ভারতের বিভিন্ন জনপ্রিয় মিডিয়া হাউস এবং এমনকি পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও এই উদ্যোগের​ বিরোধিতা করা হয়েছিল। তবে সবচেয়ে মজার এবং বিদ্রূপাত্মক ব‍্যাপার হ’ল যে পাকিস্তানের​ তরফে এই বিলের বিরোধিতা করা, কারন ওদেশেই সবচেয়ে বেশি সংখ‍্যালঘু সম্প্রদায়( আহমেদিয়া, হাজারা) নির্যাতনের শিকার হয়ে এসেছে। তবে, এই বিতর্কের​ মধ‍্যে যে মূল প্রশ্নটি হারিয়ে যাচ্ছে তা হ’ল এই রাষ্ট্রগুলি কেন এতদিন ধরে শিয়াদের মতো সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে হানাহানি বন্ধ করার চেষ্টা করেনি? তাহলে তো ভারতে তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টির​ যৌক্তিকতা থাকতো না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর হামলার পরে, বেলুচিস্তানের হাজারা জনগোষ্ঠী নিয়মিতভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে চলেছিল তালিবান এবং শিয়া-বিরোধী সংগঠন যেমন লস্কর-ই-ঝাংভি (এলইজে) এবং সিপাহ-এ-সাহাবা পাকিস্তান (এসএসপি)-এর দ্বারা। কিন্তু আফগানিস্তানে শিয়া জনগোষ্ঠীর উপর তালিবানদের এই বারবার আঘাত সবার চোখের আড়ালেই রয়ে গিয়েছে।

বালুচিস্তানের হাজারাদের উপর হওয়া অত‍্যাচার এবং সেই টালমাটাল পরিস্থিতির প্রতি উদাসীন মনোভাব এটা আবারও প্রমাণ করেছিল যে এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব যতই নিষ্ঠুর হয়ে উঠুক তা কেন তা কখনোই গোটা বিশ্বের নজরে আসবে না কারণ সেখান থেকে তারা নিজেদের আখের গোছানোর বা স্বার্থ সিদ্ধি করার সুযোগ পাবে না।

শুধুমাত্র ‘কেপি’-দের উপর নয়, কাশ্মীরের ওয়াহাবী জঙ্গিরা শিয়া জনগোষ্ঠীর উপরেও নির্মম অত্যাচার চালিয়ে গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, হিন্দুধর্মকে কালিমালিপ্ত করতে চাওয়া নাগরিকরা যাঁরা দাবি করেন যে এই ধর্মের মধ্যে প্রবলভাবে লিঙ্গ বৈষম্য এবং বর্ণভেদ প্রথা রয়েছে, সেইসব নাগরিকরা এমন ঘটনাগুলোয় নিজেদের চোখ বন্ধ করে রাখেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ এবং দেশের জনগোষ্ঠীদের সম্পর্কে নিজেদের মতামত না দেওয়ায় জন্য এইসব ঘটনাগুলোকে​ উদাহরণ হিসাবে ব‍্যবহার করা উচিত নয় কারণ এই সমস্যাগুলো এড়িয়ে গেলে চলবে না বরং সবার উচিৎ এই সমস্যাগুলিকে গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করা, অগ্ৰাধিকার দেওয়া। শুধুমাত্র​ একটি দেশ বা তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলি নয়, সারা বিশ্বই আজ এই সমস‍্যায় ভুগছে।

মনিষা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.