প্রত্যেকটা নির্বাচনের সময় ইভিএম মেশিন নিয়ে একটা বিতর্ক হয়। এবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনেও ইভিএম মেশিনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দশ বছরের শাসনের পর যখন ২০২১ সালের নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে, সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছে, ইভিএম মেশিন নিয়ে কারচুপি রুখতে হবে।
নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভোট কর্মীদের সচেতন থাকতে হবে। আপনারা সাবধান হবেন এবং ভোটের সময় কেউ কিছু খাইয়ে দিলে খাবেন না। তার কারণ, জলের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে খাইয়ে দিয়ে ভোট কর্মীদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ইভিএম মেশিন নিয়ে লোকেরা পালিয়ে যেতে পারে এবং ইভিএম মেশিনটাকে আটকে রেখে কারচুপি হতে পারে।
অপরদিকে বিজেপি নেতারা বলছেন, এই ধরনের অভিযোগ তোলার মানে হচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পেরে গেছেন যে, এবারের ভোটে তাদের হার নিশ্চিত এবং তিনি এবার বিদায় নেবেন। এক ধরনের নিরাপত্তার আভাববোধ থেকে এবং পরাজয়ের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তিনি এই ধরনের কথাবার্তা বলছেন।
ইভিএম মেশিন-এ ভোটগ্রহণ ব্যাপারটাই আধুনিক। একটা সময় ছিল যখন পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় কারচুপি নিয়ে নানা রকমের অভিযোগ উঠতো। সিপিএম-এর ৩৪ বছরের শাসন এবং তার আগে যখন কংগ্রেসের শাসন ছিল তখনও বোমাবাজি, মারামারি হয়েছে। তখন তো ভয়ঙ্করভাবে বুথ ক্যাপচারিয়ের অভিযোগ উঠতো। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন ছাত্র পরিষদ এবং বামপন্থীদের ভোটের সময় যথেষ্ট হিংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে। তখন এক একটা বুথ থেকে ব্যালট বক্স নিয়ে চলে গেছে। নকশাল আন্দোলনের সময় ভোটের সময় পুরো রাজ্যে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়ে যায়। তার পরে সিপিএম জমানায় অভিযোগ উঠল সাইন্টিফিক রিগিং মেশিনের। তখন ইভিএম মেশিন আসেনি। ভোটার তালিকাতে জল মেশানো হত। -এইসব অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করতেন এবং কংগ্রেসও করতো।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর রিগিং নিয়েও বেশ কিছুদিন কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। ইভিএম মেশিন এসে যাওয়ার পর, এই মেশিনেও যে কারচুপি সম্ভব, তা নিয়ে বিজেপিই প্রথম জাতীয় স্তরে অভিযোগ তোলে। বর্তমানে রাজ্যসভার সদস্য এবং বিজেপি দলের মুখপাত্র ওল্ড অ্যানালিস্ট নরোসিমান একটা বই পর্যন্ত লিখে ফেলেন এই নির্বাচনী অ্যানালিস্ট এবং সার্ভেয়ার হিসাবে যে, কিভাবে ইভিএম মেশিনে কারচুপি করা সম্ভব? কিভাবে সেটা কংগ্রেসের সময় হয়েছিল?
এতদিন পর আবার ইভিএম মেশিন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখন আধা সামরিক বাহিনী নজর দেবে, তারা রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করবে কিন্তু ইভিএম মেশিনে কি সম্ভব? একটা উদাহরণ হিসেবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে যে, অনেকসময় ইভিএম মেশিন যদি খারাপ হয়ে যায় তাহলে বিকল্প ইভিএম মেশিন রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে। অনেকে বলেন, যদি ইভিএম মেশিনে আগে থেকে প্রোগ্রাম করে রাখার সম্ভাবনা থেকে যায় একটা শতকরায় তখন একসঙ্গে অনেকগুলো ভোট পড়ে যায়। এগুলো অভিযোগ হিসেবেই থেকে গেছে। এর কোনও যথার্থতা এখনও প্রমাণ হয়নি। সুতরাং ইভিএম মেশিনে কতটা কারচুপি হতে পারে, সেটা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন এখনও আছে। এরপরের কোনো উত্তর এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর যাতে কোনরকমের কারচুপি না হয় এবং সবদিক থেকেই নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।