তৃতীয় ভাগ
সিবিআই পশ্চিমবঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তিনটি এফআইআর করেছিল।
প্রথম এফআইআর আলিপুর আদালতে সারদা রিয়েলটি, সুদীপ্ত সেন, কুনাল ঘোষ, দেবযানী মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ দত্ত, মনোজ নাগেল ও অরবিন্দ চৌহানের বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয় এফআইআর রাজ্য পুলিসের বিধাননগর উত্তর থানায় করা একশো দু নম্বর এফআইআরের ভিত্তিতে করা হয়েছে। সেখানে সারদা গোষ্ঠীর আমানত সংগ্রহকারী চারটি কোম্পানী সহ ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা।
তৃতীয় এফআইআর সারদা ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কশাল আদালতে।
সারদা পনজি স্কিম কেলেঙ্কারি আলাদা মাত্রা পাচ্ছিল অনেকগুলি কারণে৷ এক, এই সংস্থার কাছে যাঁরা টাকা জমা রেখেছিলেন, তাঁরা সবাই সাধারণ, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রমজীবী মানুষ৷ এঁদের কেউ দিনমজুরি করেন, কেউ বাজারের সবজি বিক্রেতা, কারও উপার্জন ভ্যান রিকশা বা ঠেলা চালিয়ে৷ প্রতিদিনের রোজগারের টাকা থেকে বাঁচিয়ে এরা আমানত গড়েছিলেন সারদার চিট ফান্ডে৷
দুই, এই সংস্থার যাঁরা এজেন্ট ছিলেন, তাঁরাও নেহাতই সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ, যারা কমিশন এবং ইনসেন্টিভের প্রলোভনে, দুটো টাকা বাড়তি রোজগারের আশায় নিজেদের আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী এবং সহকর্মীদের থেকে তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন৷
তিন, তবে এই আর্থিক কেলেঙ্কারির তৃতীয় মাত্রাটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ৷ রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা, মন্ত্রী ও সাংসদের নাম জড়িয়ে গিয়েছে সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে৷ বস্তুত আমানতকারীরা প্রত্যেকেই বলেছেন, তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের নেতাদের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠতা দেখে ভরসা পেয়েছিলেন বলেই তাঁরা তাঁদের যাবতীয় সঞ্চয় সারদা পনজি স্কিম রেখেছিলেন৷ সঞ্চয়িতা বা ওভারল্যান্ডের এত গভীর রাজনৈতিক যোগ ছিল না ।
শুধুমাত্র সাধারন রাজনীতিবিদরাই নন সারদা কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিলনা । ২০১৩ সালের ২ মে শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে দলীয় জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন,”চ্যালেঞ্জ করছি, কেউ বলতে পারবেন না, ‘জাগো বাংলা’ কোনও চিটফান্ডের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন নিয়েছিল”৷ …মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত জোরের সঙ্গে ঐ দাবি করলেও বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলছে৷ বাংলা ১৪১৯, ইংরেজি ২০১১ সালের ‘জাগো বাংলা’ উৎসব সংখ্যায় ‘ইনসাইড ব্যাক কভার’ এর বিজ্ঞাপনই দিয়েছিল সারদা পরিচালিত বৈদ্যুতিন মাধ্যম চ্যানেল টেন’৷ এখানেই শেষ নয়, সেখানে ৮১ পাতায় রীতিমতো ‘সারদা’ লোগো ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল ‘সকালবেলার’৷
সারদা গোষ্ঠীর প্রাণঘাতী প্রতারণার কথা প্রকাশ্যে আসার সাত দিন পরে প্রথম বার সাংবাদিকদের সামনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, পয়লা বৈশাখ অর্থাত্ পনেরই এপ্রিলের আগে তিনি বিষয়টি জানতেনই না।
দোসরা মে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে দলের সমাবেশেও একই দাবি করেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
সেদিনই, অর্থাত্ দোসরা মে হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের জমা দেওয়া হলফনামায় কিন্তু বলা হয়েছে, দুহাজার এগারোর মে মাসে ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ নিতে শুরু করে সরকার।
প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী কি জানতেন না তাঁর সরকারের এই পদক্ষেপের কথা?
হাইকোর্টে সরকারের জমা দেওয়া হলফনামায় বলা হয়েছে, চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণে বাম আমলের বিলে দ্রুত রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য দুহাজার এগারোর চোদ্দই জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দেন রাজ্যের অর্থসচিব। দুহাজার বারোতেও ফের চিঠি দেওয়া হয়।
তবু মুখ্যমন্ত্রী কিছু জানতেন না? বাম আমলের বিল দুর্বল হলে, কেনই বা সেই বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য কেন্দ্রকে জোড়া চিঠি দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার?
রাজ্য সরকারের হলফনামায় বলা হয়েছে, গত বছর অক্টোবরে বেআইনি চিটফান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অর্থসচিবকে নির্দেশ দেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব। হলফনামায় বলা হয়েছে, এরপর অর্থ দফতর তদন্ত শুরু করে বুঝতে পারে চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণে বামেদের আনা বিল যথেষ্ট নয়।
এসব কিছুই কি হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে?
দুহাজার এগারোর অগাস্টে ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির বেআইনি কাজ সম্পর্কে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিঠি দেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। ওই চিঠিতে ১৫টি সংস্থার নাম ছিল। ওই চিঠির জবাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানায়, কী ভাবে ওই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। তাঁর সরকারের মন্ত্রী জানতেন, কিন্তু জানতেন না মুখ্যমন্ত্রী?
দুহাজার এগারো সালের ২৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও চিট ফান্ডের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে সতর্ক করে রাজ্য সরকারকে চিঠি দেয়।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দ্বিতীয় চিঠিটি আসে ২০১১-এর ২০ অক্টোবর।
তৃতীয় ও চতুর্থ চিঠি আসে যথাক্রমে ২০১১-এর ১৬ ডিসেম্বর এবং ২০১১-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চিঠিগুলি কি তবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখানো হয়নি?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিটি চিঠিতেই চিট ফান্ডের বেআইনি ব্যবসা রুখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা জানানো হয় রাজ্য সরকারকে। কিন্তু ওই চিঠিগুলির ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, তা কেন্দ্রকে কোনও বারই জানায়নি রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তিনি চিট ফান্ডের প্রতারণার কথা জানতেন না। অর্থাত্ তিনি জানতেন না, ২০১১-এর মে মাস থেকে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা,
জানতেন না বামেদের বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অনুরোধ করে তাঁর সরকারের চিঠি পাঠানোর কথা, জানতেন না রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে তাঁর সরকারের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের চিঠি চালাচালির কথা, জানতেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পাঠানো চারটি চিঠির কথা।মুখ্যমন্ত্রীর কথার সঙ্গে কোর্টে জমা দেওয়া তাঁর সরকারের হলফনামা মিলছে না। সেজন্যই সন্দেহ হচ্ছে
মুখ্যমন্ত্রী কি চিট ফান্ড কাণ্ডে কোনও সত্য আড়াল করতে চাইছেন?
মমতা সরকার সারদার বিরুদ্ধে মামলা করলেন না কেন?
মমতার বক্তব্য ১লা বৈশাখের আগে তিনি কিছুই জানতেন না। যখন জানতে পেরেছেন তখন তারা মিউজিকের কর্মী অর্পিতা ঘোষকে দিয়ে এফ আই আর করিয়েছেন বিধান নগর থানায়।
সুদীপ্ত সেন তৃণমূল সরকারের হয়ে প্রচার চালানোর জন্য যে মিডিয়াগুলো চলছে তার মাইনে দিচ্ছে না কেন এই নিয়ে মামলা? আমানতকারীদের টাকা লুন্ঠনের জন্য তখনো মামলা হয়নি।
কেননা মমতা তখনো মনে করছিলেন সুদীপ্ত সেন জালিয়াতি করেছেন এমন কোন প্রমান কারো হাতে নেই। অথবা সুদীপ্তের বিরুধে জনগণের টাকা জালিয়াতি করার মামলা করলে সে যদি সব ফাঁস করে দেয়! তাই কি সেই প্রবল ঝড়ের মুখেও নিশ্চল থেকে তিনি সুদীপ্তকে আগলে রেখেছিলেন!তিনি কি তাই ভাবছিলেন যে,পৌনে 2 কোটি টাকা দিয়ে তার ছবি যিনি কিনেছিলেন সেই সুদীপ্ত মুখ খুললে তার নিজের পরিবারও আইলার কবলে পড়বে! কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসবে বিষধর কেউটে? সেকারণেই সিবিআই তদন্তেরও বিরোধিতা করেছিলেন ?
শুধুমাত্র সারদার নয় অন্য কিছু বেআইনি পঞ্জি স্কিমের কথা এসময়েই সকলের গোচরে আসে ।
সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে জলঘোলার মধ্যেই পৈলান গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল৷ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও আমানতকারীদের টাকা ফেরত না-দেওয়ার অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল সংস্থার বিরুদ্ধে৷
সেসময় কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে পৈলান সংস্থার এজেন্টরা বলেছিলেন, ২০১১ সাল থেকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বেআইনি ভাবে বাজার থেকে তুলেছিল পৈলান গোষ্ঠী৷ তারপরে কাকুলিয়া রোডে সংস্থার হেডঅফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷ এজেন্টদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর-সহ পুলিশ-প্রশাসনের বহু জায়গায় অভিযোগ জানানো হলেও, ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ তাদের অভিযোগ ছিল, শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে টাকা ফেরত না-দিয়ে উল্টে সংস্থার তরফে এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল৷ তদন্ত চলাকালীন সিবিআই আধিকারিকদের নজরে আসে, ওই গ্রুপের কর্ণধার অপূর্ব সাহা পলাতক। গোপন সূত্রে সিবিআই খবর পায়, তিনি দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরছেন। এরপরই ফাঁদ পাতে কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয় পৈলান গ্রুপের চেয়ারম্যানকে। সংস্থার মালিক অপূর্বকুমার সাহা সেসময় বলেছিলেন, ‘ সব মিলিয়ে বাজার থেকে ৩০০ কোটি টাকার মতো তোলা হয়েছিল , সারদা-কাণ্ডের পর, ১০০ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে অন্য অর্থলগ্নি সংস্থার মতো পৈলানের ব্যবসায় ডামাডোল শুরু হয়েছে ফলে যে সব ব্যবসায় ওই টাকা লগ্নি করা হয়েছে, তা তুলে আনা যাচ্ছে না৷’ ৷ প্রয়োজনে বিক্রির জন্য সম্পত্তি তিনি আদালতের হাতেও তিনি তুলে দিতে প্রস্ত্তত বলে জানিয়েছিলেন ৷যদিও প্রকৃত তথ্য বলেছিল অন্য কথা। সিবিআই সূত্রে খবর, পৈলান গ্রুপ বেআইনিভাবে আমানতের উপর চড়া সুদে ফেরতের আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আনুমানিক ৯০০ কোটি টাকা তুলেছিল। আমানতকারীদের থেকে টাকা তুলতে ডিবেঞ্চারও ইস্যু করেছিল এই সংস্থা। সেবি-র নিয়মের তোয়াক্কা না করেই অবৈধ কারবার ফেঁদে বসেছিল সংস্থা। এছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বেনামে জমিও কেনা রয়েছে বলে অভিযোগ। তার মধ্যে সিংহভাগ জমির নথিপত্র কখনওই হাতে আসেনি গোয়েন্দাদের।
এই ষড়যন্ত্রের অভিযোগেই গ্রেফতার করা হয় সংস্থার কর্ণধারকে।প্রায় দু’ডজন সংস্থা ছিল এই গোষ্ঠীর৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোটেল ব্যবসা, ডেয়ারি, খাদ্য, পার্ক-সহ অন্য সংস্থায় জনগণের থেকে তোলা টাকা লগ্নি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ৷ এ ছাড়া পৈলানে আন্তর্জাতিক মানের স্কুল ছিল এই সংস্থার। একে একে খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ, আবাসন শিল্পে টাকা লগ্নি করতে শুরু করেছিল তারা। সেবি-র তরফে বেশ কয়েকবার নোটিসও দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, শাসক দলের বেশ কয়েকজন নেতার মদতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কমদামে জমি কিনে বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিল । সিবিআইয়ের পাশাপাশি সেবি-ও তদন্ত শুরু করেছিল ।
তথাকথিত মানি মার্কেটে পৈলানের প্রবেশ ২০১০ সালের শেষে৷ ২০১১-র মাঝামাঝি ব্যবসা ফুঁলেফেঁপে ওঠে৷ রাজ্যের সব জেলা এবং ভিনরাজ্য মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ আমানতকারী ও ২০ হাজারের মতো এজেন্ট ছিল৷ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জনগণের থেকে তোলা অর্থে সংস্থার অন্তত ৫০০ কোটি টাকার জমি কেনা রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন সংস্থার এজেন্টরা৷ প্রথমে হেলথ কার্ডের বিনিময়ে টাকা নেওয়া শুরু হয়৷ পরে ডিবেঞ্চারের মাধ্যমে এজেন্টরা টাকা তোলেন৷ এজেন্টদের দাবি, পৈলান গোষ্ঠীর সুনাম দেখেই সংস্থায় টাকা রাখতে আগ্রহী হন অনেকে৷ কিন্ত্ত মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করে সংস্থা৷ তখন মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর, রাজভবন, কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ, সেবি, এসএফআইও-সহ রাজ্য ও কেন্দ্রের বিভিন্ন সংস্থায় অভিযোগ জানান এজেন্টরা৷ অবশেষে এজেন্টদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে রাজি হন মালিক৷ কিন্ত্ত বৈঠকের দিন তিনি হাজির হননি৷ তার পরই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন এজেন্টরা৷
এসময়েই সেবা নামে একটি সংস্থা বেআইনিভাবে বাজার থেকে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছিল৷ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছিল সিবিআই৷ আটক করা হয়েছিল সংস্থার দুই কর্তা সঞ্জয় নাগ এবং আশিস ধরকে৷ সিবিআই সূত্রে খবর,বিগত ৭ বছর ধরে শিলিগুড়িতে ওই চিটফান্ড সংস্থা বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে৷
আরও একটি বেআইনি পঞ্জি স্কিম ছিল
অ্যানেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইন্ডিয়া লিমিটেড। এই নামের আড়ালেই চিটফান্ডের ব্যবসা গড়ে তুলেছিলেন সংস্থার কর্ণধার প্রসেনজিত মজুমদার। রিয়েল এস্টেট থেকে শুরু করে চামড়া, ভেষজ ওষুধ সবকিছুর নামেই মোটা টাকা ফেরতের লোভ দেখিয়ে টাকা তোলা হত গ্রাহকদের থেকে। আরওসি, সেবিসহ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সংশাপত্র দেখিয়ে আমানতকারীদের বিশ্বাস অর্জন করতেন সংস্থার এজেন্টরা। কিন্তু সময়মত আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে রীতিমত অসহায় এজেন্টরা বারাকপুর পুলিস কমিশনারেটের সামনে বিক্ষোভ দেখান ।
অভিযোগ পেয়ে সংস্থার কর্ণধার প্রসেনজিৎ মজুমদারকে গ্রেফতার করে পুলিস। কিন্তু এজেন্ট ও আমানতকারীদের দাবি ছিল, শুধু কর্ণধারই নয়, সংস্থার বোর্ড অব ডিরেক্টরদেরও অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
অ্যানেক্সের দুর্নীতির কথা জানিয়ে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়, জয়েন্ট সিপি ক্রাইমের কাছে চিঠি দিয়েছেন সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারীরা। কিন্তু সংস্থার অনেক কর্তাই গ্রেফতার হয়নি।
মঙ্গলম অ্যাগ্রো প্রডাক্টস লিমিটেড কোম্পানি নামের আরেকটি বেআইনি পঞ্জি স্কিম তখন ধরা পড়েছিল ।
প্রায় ৬০ হাজার মানুষের ২০০ কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠে মঙ্গলম অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেডের উপর। অভিযোগ থেকে পিঠ বাঁচাতে কোম্পানি কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়ে লিকুইডিশন চায়। কিন্তু আবেদনে একাধিক গড়মিল নজরে পড়ায় সে অনুমতি মেলেনি। কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয় আমানতকারীদের প্রতারণা করা হয়েছে। এরপর নতুন করে একটি মামলা করে কর্তৃপক্ষ জানায় তারা আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে চায়।
কিন্ত আবেনকারীরা আপত্তি জানিয়ে বলে আবেদনে শুধু ২০১৫ থেকে ১৭ আমানতকারীদের কথাই উল্লেখ আছে। ফলে সে অনুমতি দেয়নি কোর্ট। এই মামলায় আদালত নির্দেশ দিয়েছিল কোম্পানির কোনো সম্পত্তি বিক্রি করা যাবেনা। বিষয়টি দেখার জন্য একজন বিশেষ অফিসার নিয়োগ করা হবে। মঙ্গলমের সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
বারুইপুরের চক্র গ্রুপ নামে আরও একটি বেআইনি পঞ্জি স্কিম গ্রাহকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলে।
বারুইপুর এলাকায় চক্র গ্রুপের প্রায় সাত হাজার এজেন্ট রয়েছেন। প্রত্যেক এজেন্ট পিছু রয়েছেন ৫০ জন গ্রাহক। ২০১১ সাল থেকে কাজ শুরু করে ওই সংস্থা। অভিযোগ টাকা পাওয়ার সময় হয়ে গেলেও কোনও গ্রাহকই টাকা পাচ্ছিলেন না। খোঁজ মেলে নি সংস্থার মালিকেরও।
আরেকটি পনজি স্কিম ছিল প্রয়াগ । প্রয়াগও নিয়ম না মেনে বাজার থেকে টাকা তুলেছিল।
বেআইনি অর্থলগ্নির ব্যবসা ছাড়াও প্রয়াগ গোষ্ঠী একটি দৈনিক সংবাদপত্র চালাত। তৃণমূল কংগ্রেসের রাঘবোয়ালদের সঙ্গে সংস্থার কর্ণধার বাসুদেব বাগচীর যোগাযোগ ছিল ।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে কলকাতার ক্রীড়াজগতে পা রাখে প্রয়াগ। ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাবকে ১৪ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেয় তারা। ক্লাবটির নাম হয় প্রয়াগ ইউনাইটেড। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় তারা একটি ফিল্ম সিটি তৈরি করেছিল। ২০১০ সালে এর উদ্বোধন করেছিলেন শাহরুখ খান।
প্রয়াগ গ্রুপের প্রোডাক্ট লঞ্চ অনুষ্ঠানে একাধিকবার হাজির থেকেছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ শুধু তাই নয়, শিল্পমন্ত্রীর মুখে সংস্থা সম্পর্কে ঢালাও প্রশস্তিও শোনা গিয়েছে৷
আরেক পনজি স্কিম সিলিকনের মালিক
পনজি স্কিম সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় হাত পাকান প্রয়াগে ঢুকে। কারণ সিলিকন তৈরি করার আগে প্রয়াগে মার্কেটিং ম্যানেজার ছিলেন। বাসুদেববাবুর উৎসাহে তিনিও অর্থলগ্নি ব্যবসায় নামেন বলে জানিয়েছেন।
বাম আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘শতদল’ চিটফান্ডের অন্যতম কর্তা ছিলেন প্রমথ নাথ মান্না৷ নয়ের দশকে আমানতকারীদের থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে প্রতারণা করে ঐ সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়৷ প্রতারণার অভিযোগে বাম আমলে প্রমথবাবুকে দু’মাস জেলও খাটতে হয়েছিল৷ কিন্তু যার মাথার উপর আলিমুদ্দিনের (সিপিএমের সদর দপ্তর) সর্বময় কর্তার হাতে রয়েছে, তাকে আটকে রাখে কে? তাই বাম আমলেই তিনি এম পি এস নামে আরও একটি চিটফান্ড খুলে বসেন । ২০১৩ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি বিমানবাবু ঐ চিটফান্ড কর্তার মেয়ের বিয়েতে যোগ দিয়েছিলেন৷ বাম জমানায় সিপিএমের ছত্রছায়ায় থাকা পনজি স্কিম সংস্থা এমপিএস–এর কর্তা প্রমথনাথ মান্না পালাবদল হতেই হাত ধরে নেন তৃণমূল এবং কংগ্রেস মন্ত্রীদের৷ তৃণমূলের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র পাঁশকুড়ায় এমপিএস–এর ধাবার উদ্বোধন করেছিলেন৷ আর কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া কলকাতায় ‘গুণীজন সংবর্ধনা’র একটি অনুষ্ঠানে হাজির করেছিলেন সংস্থার কর্ণধারকে৷
কিন্তু ব্যবসার পরিমাপের দিক থেকে সারদা ছাড়া
উপরিউক্ত সবকটি পনজি স্কিম হলো নেহাতই চুনোপুঁটি । সারদার থেকেও ব্ড় রাঘববোয়াল এব্যাপারে ছিল রোজভ্যালি ।অর্থনৈতিক পরিমাপের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়
পনজি স্কিম ছিল রোজভ্যালি ।
ঠিক কত হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে সংগ্রহ করেছিল রোজভ্যালি? বিভিন্ন সময়ে এর বিভিন্ন হিসাব মিলেছে। কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে ২০০২ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে, ৪০ হাজার কোটি টাকা তুলেছে রোজভ্যালি। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে সবমিলিয়ে ৬০ হাজার কোটির আর্থিক তছরুপের অভিযোগ আছে রোজ ভ্যালির বিরুদ্ধে। যদিও, কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিংহ গত বছর সংসদে জানান, রোজভ্যালি বাজার থেকে ১০ হাজার ২৮০ কোটি টাকা তুলেছে। স্মল ডিপোজিটর অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতার অবশ্য দাবি এটা কোনওমতেই ১০ হাজার কোটি টাকা নয়। রোজভ্যালি কম করেও ৪০ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে সংগ্রহ করেছে।
রোজভ্যালির এই সাম্রাজ্য তো একদিনে গড়ে ওঠেনি। শেষ ১৮ বছর ধরে নাকি এই বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেছিল এই সংস্থা। ১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করেছিল রোজভ্যালি। শুরুতেই চিটফান্ডের ব্যবসায় নামেনি এই সংস্থা। রোজভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা-কর্ণধার ছিলেন কাজল কুণ্ডু। তাঁর নেতৃত্বে এলআইসি-র কর্পোরেট এজেন্ট হিসাবে কাজ করত রোজভ্যালি। কিন্তু, ২০০৩ সালে এক রহস্যময় গাড়ি দুর্ঘটনায় সপরিবারে কাজলের মৃত্যু হয়।কাজল কুণ্ডু জীবীতকালে রোজভ্যালির ছাতার তলায় শুরু করেছিলেন হোটেল এবং বিনোদন ব্যবসা। সেইসঙ্গে সম্পত্তি কেনা-বেচা, বিনিয়োগ ও নির্মানশিল্পের একটি সংস্থাও খোলেন— রোজভ্যালি চেন মার্কেটিং, যার জোরে রোজভ্যালির এত রমরমা তাও কাজল কুণ্ডুর আমলেই চালু হয়েছিল। তবে, কাজল কুণ্ডুর আমলে সংস্থার এমন রমরমা অবস্থা ছিল না। ২০০৩ সালে ত্রিপুরায় গাড়ি দুর্ঘটনায় সপরিবারে মারা যান কাজল। এরপর তাঁর ভাই গৌতম কুণ্ডু রোজভ্যালির হাল ধরেন এবং তাঁর সঙ্গে সংস্থার অলিখিত কর্ণধার হয়ে ওঠেন শিবময় দত্ত। কাজল কুণ্ডুর জামানাতেও শিবময় দত্ত ছিলেন রোজভ্যালির মূল চালিকা শক্তি।
রোজভ্যালিকে নিয়ে প্রথম বিতর্ক শুরু হয় ‘রোজ ভ্যালি হোটেলস অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্টের’ অধীনে চালু হওয়া ‘হলিডে মেম্বারশিপ’ প্রকল্পকে ঘিরে। এই প্রকল্পে কেউ একজন কোনও প্যাকেজ ইনস্টলমেন্টে বুক করতে পারেন। ইনস্টলমেন্ট শেষ হলে ওই গ্রাহক প্যাকেজ ট্যুর নিতে পারেন অথবা প্রদেয় অর্থের থেকে বেশি অর্থ রোজভ্যালি থেকে ফেরত পেতে পারেন। এমনভাবে বহু মানুষই এই প্যাকেজ বুক করেছিলেন। কিন্তু, সমস্যা দেখা দেয় যখন ইনস্টলমেন্ট পূরণ করা গ্রাহককে রোজভ্যালি আরও বেশি অর্থের লোভ দেখিয়ে অন্য একটা স্কিমে তাঁকে ফেলে দেওয়ায়। এটাকে বলা হয় ‘রোলিং স্কিম’। অনেক ক্ষেত্রেই এই ‘রোলিং স্কিম’-এ নাম লেখানো বহু গ্রাহক অর্থ ফেরত পাননি বলে অভিযোগ। সেবিও ২০১০ সালে এই স্কিম নিয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করে। এই নিয়ে আদালত পর্যন্ত মামলা গড়ায়। সেবির যুক্তি ছিল রোজভ্যালি যা করছে তা সিআইএস-এর আওতায় পড়ে। মানে, ‘কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম’। হলিডে মেম্বারশিপের লোভ দেখিয়ে লোকের কাছ থেকে টাকা তুলে নেওয়া। এটা একধরনের বেআইনি বিনোয়গ স্কিম বলেও জানিয়ে দেয় সেবি। ২০১৩ সালে সেবি দেখে এই হলিডে মেম্বারশিপ-এর নামে রোজ ভ্যালি ১১.২% থেকে শুরু করে ১৭.৬৫% সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ২০১৪ সালরে জুন মাসে সেবি একটি আদেশে রোজভ্যালিকে আশীর্বাদ প্রকল্পে তোলা ২০০০ কোটি টাকা সুদ সমেত ফেরত দিতে বলা হয়। যদিও রোজভ্যালি দাবি করে মাত্র ১৭৫ কোটি টাকা বাদে তারা সব টাকা ইতিমধ্যেই আমানতকারীদের ফিরিয়ে দিয়েছে। সেবি সেকথা মানতে নারাজ ছিল। এরপরই সেবি রোজভ্যালির বিভিন্ন ‘সিআইএস’ প্রকল্প নিয়ে সরব হয় এবং অবিলম্বে তা বন্ধের নির্দেশ দেয়। নির্মাণ ব্যবসাকে রোজভ্যালি তার মূল ব্যবসা বলে দাবি করলেও, দেখা গিয়েছে বাড়ি ও জমি বেচে ২০১১ সালে ৫ কোটি আর তার পরের দু বছর ১ কোটি ও ২০ লক্ষ টাকা আয় করেছে। সেবির তথ্যে এমনই উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। তবে, সবচেয়ে আশ্বর্যের বিষয় ছিল রোজভ্যালি এত কম টাকা আয় করেও নিজেদের গ্রুপ কোম্পানিকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। রোজভ্যালি কেলঙ্কারিতে তদন্তে নামে ‘সিরিয়াস ইনভেস্টমেন্ট ফ্রড অফিস’। তাঁদের তৈরি করা রিপোর্টে রোজভ্যালির বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা সামনে আসে। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে অভিযোগ জানিয়ে লেখা রাজ্যের কিছু রাজনৈতিক নেতার চিঠিতে রোজভ্যালি অভিযুক্ত হয়। এমনই সময় ঘটে যায় সারদাকাণ্ড। রাজ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা চিটফান্ড সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। এরই মধ্যে এসআইএফও-র তৈরি করা রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্তে নামে ইডি। অবশেষে প্রায় ১ বছর ধরে জেরা করার পর ২০১৫ সালের শুরুতেই গ্রেফতার করা হয় রোজভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। এর কয়েক মাসের ব্যবধানেই গ্রেফতার হন সংস্থার এমডি শিবময় দত্ত ।
টানা ৬ ঘন্টা জেরা শেষে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন কলকাতার রোজভ্যালি রিয়েল এস্টেটের কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। সেবির নিষেধাজ্ঞা সত্বেও বেআইনিভাবে টাকা সংগ্রহ করছিল রোজভ্যালি। কিন্তু কত টাকা বাজার থেকে তুলেছে রোজভ্যালি তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি গৌতম কুণ্ডু। রোজভ্যালির কর্ণধার এই গৌতম কুণ্ডুই একসময় প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, ডেলোতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল! কালিম্পংয়ের বন বাংলো ডেলোতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর বৈঠক হয়েছিল বলে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছিলেন সাসপেন্ডেড তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। বিরোধীরা সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন তোলে, দুই লগ্নি সংস্থার কর্ণধারের সঙ্গে কী কারণে কালিম্পংয়ে গিয়ে বৈঠক করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? যাঁরা সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ, একমাত্র কুণাল ঘোষ বাদে সবাই এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। অবশেষে সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথমবার টেলিফোনে কলকাতার এক পত্রিকাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় রোজভ্যালির কর্ণধার স্বীকার করে নেন ডেলোয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হয়েছিলো বলে। এরপর শাসকের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে ইডির জেরার পর আবারো ডেলোর বৈঠকে সিলমোহর দেন রোজভ্যালি কর্ণধার।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠতাই কী রোজভ্যালির কর্ণধারকে অনেক বেআইনি সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিল এবং তদন্তের ক্ষেত্রেও ছাড় দিয়েছিল এ প্রশ্ন তখন উঠেছিল সকলের মনেই ।
From Sanchayita to Saradha, Rose Valley, a dark period in West Bengal – Part 3
CBI lodged 3 FIRs against Sarada Group, the first was against Sarada Realty, Sudipto Sen, Kunal Ghosh, Debjani Mukherjee, Somnath Dutta, Manoj Nagel and Arvind Chauhan.
The 2nd FIR was lodged at Bidhan Nagar Uttar Police Station against the 4 companies of Sarada Group involved in fraud.
And, the 3rd was against Sarada Tours & Travels.
Noticeably, the lower middle class was the worst sufferers in Sarada Scam, and mostly were daily wage earners like Rickshaw and Handcart pullers, and workers in the unorganized sector.
The Agents too belonged to the lower middle class and joined Sarada Group for earning an extra penny.
The lower class who invested in Sarada were influenced by the politicians, as they thought their hard earned money is safe as many politicians, including the CM of the State endorsed Sarada.
It may be noted, that on the 2nd of May in 2013, the CM of Bengal made a comment in a rally at Shyambazar 5 point crossing that the State govt. never accepted a penny through advertisements from the Chit Fund Companies, but it may be noted that in 2011 the inside back cover of “Jago Bangla” Utsav Souvenir was sponsored by the electronic media Channel 10 of Sarada Group.
Not only the Sarada Group, many Ponzi companies were running simultaneously in West Bengal, and the Pailan Group too was accused of cheating their investors. It was accused that Pailan Group flouted the SEBI guidelines and accepted 900 crores from investors, and had purchased properties in fictitious names.
Seba, another Ponzi company which was operating in North Bengal was also under the radar of CBI, and the kingpins Sanjay Nag and Asish Dhar were arrested by CBI.
Annex Infrastructure India Ltd., was another Chit Fund company that cheated many investors, and the CEO Prosenjit Majumdar was arrested by police.
Mangalam Agro Products Ltd. also duped nearly 60 thousand investors and was involved in a scam of 200 crores.
Chakra Group, which operated in Baruipur had 7000 Agents, and the owners of the company usurped the funds of the investors.
Prayag Group, was another high profile Ponzi company. Basudeb Bagchi, the supremo of Prayag Group was the blue eyed boy of top TMC leaders. Prayag Group owned a Newspaper, and also sponsored Prayag United, a popular football club which played in the Calcutta Premier League. Prayag Group also constructed a filmcity in Chandrakona which was inaugurated by Shah Rukh Khan.
Promotho Nath Manna, a close aide of the leftists, too headed the MPS group, was another Chit Fund company which operated in West Bengal. CPM leader Biman Basu too had attended the marriage ceremony of the daughter of Promotho Manna.
But, after the Sarada Group, the Ponzi Company which deserves a special mention is Rose Valley.
Rose Valley, headed by Gautam Kundu accumulated huge wealth by duping its investors, and came under the radar after a controversial investment proposal in Rose Valley Hotels and Entertainment made headlines. The package offered double rolling benefits of either enjoying a holiday trip or a return on investment with high returns which flouted SEBI guidelines. Goutam Kundu of Rose Valley is the same person who disclosed that he had discussed business proposals with the CM of Bengal at Delo in Kalimpong, where the Sarada Supremo Sudipto Sen was present.
– Amlan & Jaydeep