সকাল থেকে দৌড়োদৌড়ি শুরু রন্তিদেব সেনগুপ্তর

রবিবার বিজেপি প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর আচমকাই যেন বেড়ে গিয়েছে ব্যস্ততা। সোমবার সাতসকালে স্নান সেরে মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিলেন হাওড়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্ত। এরপর প্রচারের পদ্ধতি আর কৌশল নিয়ে বিকালে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা।

রবিবার প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণার পর থেকে ফোনের পর ফোন। প্রথমে ‘প্রার্থী হব না‘ বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাঁর ক্ষোভ। দলের ওপরমহল থেকে আবেদনের জেরে কিছুক্ষণের মধ্যে সিদ্ধান্ত বদল। এ রকম ঘটনা সচরাচর হয় না। রন্তিদেবের কথায়, “আমি ভোটে লড়তে চাইনি। বিভিন্ন আলোচনাসভার মাধ্যমে যেভাবে প্রচার করছি, সেটাই আমার কাছে বেশি স্বস্তিদায়ক। তবে, যেহেতু একটা সুসংবদ্ধ দলের সৈনিক আমি, নেতৃত্বের নির্দেশও উপেক্ষা করতে পারি না!

আজম্ম বামপন্থী পরিবারে বড় হওয়া। বাবা ছিলেন আরএসপি-র রাজ্য নেতা সুনীল সেনগুপ্ত। মা গীতা সেনগুপ্তও ছিলেন বামপন্থী সমাজকর্মী। লেখনীতে, এমনকী সাংবাদিক জীবনে বামেদের সমালোচনাতেও বরাবর প্রকট থেকেছে বামপন্থারই ছায়া। এমনকী, আগে নানা সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ও কাজে মানুষের কথাও দীর্ঘদিন প্রশংসিত হয়েছে তাঁর লেখালেখিতে। বিগত কয়েক বছর যাবৎ অবশ্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিশানায়।

যাঁরা রন্তিদেবকে চেনেন, তাঁরা অবশ্য গত কয়েক বছর ধরেই বিলক্ষণ দেখেছেন, বাম-পরিমণ্ডলে জীবনের এ যাবৎ সিংহভাগ কাটিয়ে দেওয়া মানুষটি ধীরে ধীরে লালের বদলে গেরুয়া রঙে বিশ্বাস রাখতে শুরু করেন। যদিও দিলীপ ঘোষ বা রাহুল সিনহার মতো বিজেপি নেতাদের সঙ্গে এক ফ্রেমে তাঁকে চট করে দেখা যায়নি। বামেদের আক্রমণের ভাষাতেও ধীরে ধীরে হিন্দুত্বের জোয়ার সাফ ধরা পড়ে অনেকের চোখে।

বামপন্থী বাবা-মায়ের দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে ছেলের ভাবনার এত ব্যবধান কীভাবে? রন্তিদেবের উত্তর, ‘‘বাবা-মা কোনও দিনই বামপন্থী আদর্শ চাপিয়ে দেননি আমার উপর। স্বাভাবিক নিয়মে কম বয়সে আমিও আবিষ্ট হয়েছিলাম সেই পরিবেশে। পরে বুঝছি, ওই রাস্তাটা ঠিক নয়। পেশাগত কারণে বহু আগেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের নেতাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল। আরএসএসের প্রতি আকর্ষণও জন্মেছিল। যত দিন চাকরি করেছি, প্রত্যক্ষ ভাবে ব্যক্তিগত স্তরে যোগাযোগ করিনি। ২০১৬-তে সাংবাদিকতার চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সেই যোগাযোগটাই গভীর হয়ে যায়।’

শেষ পর্যন্ত ’১৯-এ লোকসভা ভোটে আরএসএস ঘনিষ্ঠ রন্তিদেব বিজেপির প্রার্থী হয়ে যান, তাও আবার গুরুত্বপূর্ণ হাওড়া সদর কেন্দ্রে। কিভাবে? তাঁর কথায়, ‘’দোলের সময়ে তখন আমি প্রান্তিকের বাড়িতে। শিবপ্রকাশজি ফোন করে বললেন, দল আমাকে প্রার্থী করতে চায়। আমি রাজি কি না। আমি বললাম, রাজি। পরে উনিই আমায় হাওড়ার কথা বললেন। আমি জানালাম, দল যেখানে টিকিট দেবে সেখানেই আমি লড়ব।’’

গত লোকসভা নির্বাচনে হেরে গেলেও রন্তিদেব আগের নির্বাচনের তৃণমূল আর বিজেপি-র যে ব্যবধান ছিল, তা কমিয়েছেন। ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে বললেন, “ওটা আমার একটা বড় আস্থা। চেষ্টা করব আপ্রাণ।“ আর শুভানুধ্যায়ীরা বলছেন, “ওঁর মত স্বচ্ছ, সুবক্তা দলে খুব বেশি নেই। ওঁর জেতাটা খুব দরকার।“ প্রসঙ্গতা, রন্তিদেব এখন বিজেপি-র রাজ্য কমিটির অন্যতম সদস্য, দলের বুদ্ধিজীবী শাখার আহ্বায়ক।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.