“২০১২ সাল নাগাদ হলদি নদীর ওপর একটি সেতুর শিলান্যাস করেছিলেন মাননীয়া। ব্যস, ওই পর্যন্তই। কাজ আর হয়নি। এলাকায় বাসস্ট্যান্ড, কলেজ খুব দরকার। সেগুলোও হয়নি। জলনিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। খালগুলোর অবস্থা খারাপ। মানুষ খুব একটা সুখে নেই। আর, এ সব কারণেই আমি নিশ্চিত ভোটে জিতব।” এভাবেই অভিব্যক্তির কথা বললেন পূর্ব মেদিনীপুরের চন্ডীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পুলক গুড়িয়া। একেবারেই স্থানীয় গাঁয়ের ছেলে। বিপরীতে রীতিমত হাই প্রোফাইল— তৃণমূল যুব-র সহ সভাপতি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতি ঘনিষ্ঠ, অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী। কিন্তু প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর এই ওজনদার পরিচিতি প্রায় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন পুলক। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে চন্ডীপুরে তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৮৮,০১০ ভোট। ‘১৬-তে তা বেড়ে হয় ৯৫,৯৮২। সিপিএমের ভোট ৭৬,৩০১ থেকে বেড়ে হয় ৮৬,৩২৮। বিজেপির ৫,১৪৯ থেকে বেড়ে হয়েছিল ১০,১৬০। প্রধান দুই প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে, গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এই বিধানসভা কেন্দ্রে একটু ভাল করলেও পিছিয়ে ছিল প্রায় ১৫ হাজার ভোটে। তবু কীভাবে জেতার আশা করছেন? ৩৯ বছরের পুলকের জবাব, “আসলে এলাকাটাকে আমি হাতের তালুর মত চিনি।”জন্ম চন্ডীপুরের এরাসাল গ্রামে। মুরাদপুর স্বামী বিবেকানন্দ লোকশিক্ষা মন্দির ও তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তনী পুলক প্রায় ছেলেবেলা থেকে কমবেশি আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৩ থেকে পুরোদমে সঙ্ঘের কার্যকর্তা। ২০১৫-তে হলেন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের চন্ডীপুর শাখার আহ্বায়ক। এর পর ধাপে ধাপে বিজেপি যুব মোর্চার জেলা সম্পাদক, পূর্ব মেদিনীপুরের যুব মোর্চার সাংগাঠনিক জেলা সম্পাদক, জেলা সভাপতি। গত বছর হয়েছেন বিজেপি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক। ভোটের প্রহরগোণার সাথে সাথে বাড়ছে ব্যস্ততা। কথা বলার সময়ও যেন কমে আসছে। এলাকাটা যতই নিজের হোক, চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখতে চান না। তাই রোজ সকালেই বেড়িয়ে পড়ছেন। মূলত কৃষিভিত্তিক এলাকা। ভোটদাতার প্রায় ১৭ শতাংশ মুস্লিম। পুলকের কথায়, “জেতার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার একটা বড় কারণ তৃণমূলের সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ও অকর্মন্যতা। এলাকাবাসী ভীষণভাবে পরিবর্তন চান। সে কারণে গত দু’বারের জয়ী প্রার্থীকে টিকিট না দিয়ে শাসক দল তারকাপ্রার্থীকে এনেছে। কিন্তু এতে ওদের লাভ হবে না।”হলদি, কেলেঘাই— এই দুই নদী মজে যাচ্ছে। পরিশ্রুত পানীয় জলের অভাব রয়েছে। এ কথা জানিয়ে এই প্রতিবেদককে পুলক বলেন, “গ্রামবাসীরা জানেন বহিরাগত কেউ নন, মুস্কিল আসানে বেশি কার্যকরী হবেন ঘরের ছেলেই। সেটাই আমার আত্মবিশ্বাসের সোপান। এই কেন্দ্রে বিজেপি জিতবে। রাজ্যেও জিতবে। আমি নিশ্চিত।“ চন্ডীপুরে ভোট তৃতীয় পর্যায়ে, ২৭ মার্চ।
2021-03-21