ম-এ মারাদোনা, ম-এ মুখ্যমন্ত্রী, মোদির দিলীপ স্তুতি কীসের ইঙ্গিত?

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রশংসা শোনা গেল মোদির মুখে। দরাজ দিলখোলা প্রশংসা পেয়ে আপ্লুত দিলীপ ঘোষ বলছেন, ‘আমার দায়িত্ব বেড়ে গেল’। কিন্তু হঠাৎ কেন প্রশংসা? এই স্তুতি কি সত্যিই সার্টিফিকেট নাকি অন্য কোনও বড় সম্ভাবনার ইশারা?

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে গেরুয়া শিবির নামিয়ে এনেছে একের পর এক দাপুটে সৈনিককে। দিল্লি ছেড়ে বাংলা দখলের লড়াইয়ে এখন ভোটপ্রার্থী স্বপন দাশগুপ্ত, বাবুল সুপ্রিয়রা। এই সময়েই তাঁকে নিয়ে প্রশ্নটা ঘুরছিল বাজারে। অনেকেই বলছিলেন দিলীপ ঘোষের জন্য বরাদ্দ হতে চলেছে খড়্গপুর সদরের আসন। কিন্তু শেষমেষ বহু অপ্রত্যাশিত মোচড় থাকলেও দল দিলীপ ঘোষকে ভোট ময়দানে নামায়নি। যদিও তাতে গুরুত্ব কমেনি একচুলও। বরং সারামাঠ জুড়ে খেলছেন তিনি। কখনও পৌঁছে যাচ্ছেন কোনও হটস্পটে, কখনও আবার অপেক্ষাকৃত প্রচারের আলোয় থাকা প্রার্থীকে এগিয়ে দিচ্ছেন খানিকটা। সংগঠক হিসেব তিনি যে মারাদোনা, তা মেনে নিতে দ্বিধা করবে না দলের কেউই। আর তাঁর দল যখন সেই ১৯৮৬ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনার মতোই মরণবাঁচন ম্যাচ খেলছে, সেই সময়েই এলো মোদির সার্টিফিকেট।

আজ মোদি দিলীপ ঘোষ সম্পর্কে বলেন, “কেন বারবার বলছি এবার বিজেপি সরকার? আমার গর্ব হয় যে আমাদের দলে দিলীপ ঘোষের মতো একজন সভাপতি রয়েছেন। দলকে জেতানোর জন্য গত কয়েক বছর দিলীপ ঘোষ শান্তিতে ঘুমোননি। দিদির ধমকে ভয়ও পাননি। ওঁর উপরে অনেক হামলা হয়েছে, মেরে ফেলারও চেষ্টা হয়েছ, কিন্তু বাংলার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পণ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। আর আজ বাংলায় নতুন শক্তি তৈরি হয়েছে।”

অর্থাৎ দিলীপ ঘোষকে নেতৃত্বের আসনে বসাচ্ছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদিই। তাহলে কি ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী তিনিই? জল্পনাটা অতীতেও ছিল, তবে মোদি-উবাচের জেরে তা আরও জোরালো হচ্ছে এবার। কিন্তু প্রশ্নও আছে, যদি তাইই হবে, ভোটের নামানো হল না কেন দিলীপ ঘোষকে?

এবার দিলীপ ঘোষের কেন্দ্রে প্রার্থী সোহম। ২০১৬ সালে কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহনপালকে হারিয়ে খড়গপুর সদরে বিধায়ক হন দিলীপ ঘোষ। পাঁচবারের বিধায়ক ‘চাচা’ সোহনপালের মিথ থামানোটা খুব সহজ কথা ছিল না। দিলীপ ঘোষের অসাধ্যসাধন বাংলায় বিজেপিকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। পরে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে লড়াই করার জন্য কেন্দ্রটি ছাড়েন দিলীপ। কিন্তু উপনির্বাচনে এই কেন্দ্রে হারে বিজেপি। এই অবস্থায় ভোটের লড়াইয়ে অন্য একাধিক সাংসদকে নামিয়ে আনা হলেও দিলীপ ঘোষকে ভোটময়দানে না নামানো নিয়ে আলোচনা রয়েছে নানা মহলেই। পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, দিলীপ ঘোষের মতো জনপ্রিয় নেতাকে দল নতুন করে পরীক্ষার ময়দানে নামাতেই চায় না। তাঁর লোকপ্রিয়তা পরীক্ষিতই। তাছাড়া খড়্গপুর সদরে পরীক্ষায় নেমে মুখ পড়লে, বহু সমস্যায় দীর্ণ দলটি যে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে না, তাই বা কে বলতে পারে। সেক্ষেত্রে দল যদি ক্ষমতায় আসেই, নীচুতলা থেকে প্রবল পরিশ্রম করে উঠে আসা, সঙ্ঘের প্রিয়মুখকে বিনা প্রশ্নেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব দিতে পারে দল। এবং ভোট লড়াইয়ের ‌সমান্তরাল এই অন্দরের লড়াইয়ে ইন্টেলেকচুয়াল স্বপন দাশগুপ্ত বা তরুণ বাবুল সুপ্রিয়র চেয়ে দলের বড় মুখ, তা অনেকেই মানবেন।

কিন্তু ভোট না লড়লে মুখ্যমন্ত্রী হবেন কী ভাবে। তারও উত্তর রয়েছে সাম্প্রতিক অতীতে। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে লড়েননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কেন্দ্রে লড়েছিলেন সুব্রত বক্সী। সাংসদ মমতা পরে উপনির্বাচনে প্রথমবার ভবানীপুরের বিধায়ক নির্বাচিত হন৷ ২০১৬ সালে ফের জয়ী হন ওই কেন্দ্র থেকেই। মমতা যদি পারেন দিলীপ পারবেন না কেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.