আবার ২০ বছর পরে প্রার্থী হলেন মুকুল রায়

“আবার বছর ২০ পরে…”, জীবনান্দ দাসের কবিতার কথা মনে পরে গেল মুকুল রায়ের প্রার্থী হওয়ার কথা শুনে । ২০০১ সালে মুকুল রায় জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। আবার ২০ বছর পরে মুকুল রায় বিজেপি-র প্রার্থী হলেন কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে। তখন তিনি ছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী, আজ বিজেপি-র প্রার্থী। মুকুল রায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি বহু চর্চিত নাম। তাঁর নামে ভালো, মন্দ সব রকম কথাই চলে রাজ্য রাজনীতিতে । মুকুল রায় হলেন সেই ব্যক্তি যিনি পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বামফ্রন্টের বিধায়ক ভাঙিয়ে তৃণমূলে এনেছিলেন। দল ভাঙানোতে মুকুল রায়ের হাতযশ আছে। সেটা তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তৃণমূল হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে। কেননা তৃণমূল ছেড়ে যারা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন তাঁদের সবারই মুকুল রায়ের ডাকে সারা দিয়েই বিজেপিতে জায়গা হয়েছে। শুধু জায়গা হয়েছে বললে ভুল হবে তাঁরা এখন কেউ কেউ বিজেপিতে মর্যাদাও পেয়েছেন।

মুকুল রায়ের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের গ্রাফ সব সময় উর্ধমুখী ছিল। এখনও আছে। তিনি যখন তৃণমূলে ছিলেন তখন তিনি ছিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড । হাতের তালুর মতো তিনি তৃণমূল দলটিকে চিনতেন। ২১ জুলাই-র শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে কৃষ্ণনগর থেকে যে কর্মীরা আসতেন তাদের মুকুল রায়ের লোক বলেই জানা যেত। সেই কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের এবার বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছেন মুকুল রায়। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর মুকুল রায় প্রথমেই নিজেরে মতো করে বাড়তে পারেননি। দলের মধ্যেকার যে রাজনীতি ছিল তার শিকার হয়েছেন তিনি। তবে ধ্যৈর্য ধরে মুকুল রায় সেই পরিস্থিতি সামলেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি এখন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুকুল রায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল গড়েছিলেন সেই তৃণমূল এখন মুকুল রায় দল ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর অনেকটাই ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেছে।

এখন প্রশ্ন মুকুল রায় কী কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হবেন? এটা বঙ্গরাজনীতির এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। কেননা ২০০১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হয়ে মুকুল রায় প্রথমবারই পরাজিত হয়েছেন। তবে ২০০৬ সালে মুকুল রায় রাজ্যসভার সাংসদ হন। তারপর তিনি বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হন। রেলের মতো মন্ত্রক সামলান মুকুল রায়। এখন দেখার মুকুল রায় কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে জয়ী হতে পারেন কী না। যদি মুকুল রায় যেতেন তাহলে তাঁর মুখ রক্ষা হবে। যদি পরাজিত হন তাহলে বিজেপি দলের মুখ পুড়বে। কেননা মুকুল রায় বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি।

বঙ্গরাজনীতিতে মুকুল রায় চাণক্য নাম পরিচিত। এবার মুকুল রায়ের পরীক্ষা, চাণক্যের বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত জনাদেশ পেয়ে জিতে আসতে পারেন কী না। কেননা বিজেপি যে বিশুদ্ধ রাজনীতির কথা বলছে সেই বিশুদ্ধতা মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বিজেপি-র আছে কী? সেই প্রশ্ন উঠছে , কেননা এক সময় বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং বিশুদ্ধতার প্রশ্নে স্লোগান দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “ভাগ মুকুল ভাগ..”, আজ সেই মুকুল রায় বিজেপির মুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.