তুষ্টিবাজ কংগ্রেসের বদৌলতে অসমকে অনুপ্রবেশ, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ইত্যাদির মতো যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে : যোগী

 তুষ্টিবাজ অদূরদর্শী কংগ্রেসের বদৌলতে অসমকে অনুপ্রবেশ, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি-ভ্রষ্টাচার ইত্যাদির মতো যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। এ সব নানা কারণে মুমূর্ষু অসমকে পুনরুদ্ধার করে উন্নয়নের জোয়ার বইয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল ও তাঁর সরকার। আজ হোজাই ও লামডিং বিধানসভা আসনের দুই বিজেপি প্রার্থী যথাক্রমে রামকৃষ্ণ ঘোষ এবং শিবু মিশ্রের পালে হাওয়া তুলতে লংকায় বিশাল নির্বাচনি সমাবেশে উদাত্ত ভাষণ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এছাড়া আজ তিনি রঙিয়া এবং কলাইগাঁওয়েও স্থানীয় প্রার্থীদের পক্ষে হাওয়া তুলতে নির্বাচনি সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন। 
প্রধানমন্ত্রী মোদীর আদলে ভাষণের শুরু করেন অসমিয়া ভাষায়। ভাষণে তিনি মহাবাহু ব্রহ্মপুত্র, অসমের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ইতিহাস, মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেব, ভারতরত্ন ভূপেন হাজরিকাকে স্মরণ করেছেন। তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় যে এই রাজ্যে শঙ্করদেবের মতো মহাপুরুষের জন্ম হয়েছে। তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের প্রবর্তক। এর পরই কংগ্রেসের ওপর এক এক করে হামলা করতে থাকেন যোগী আদিত্যনাথ। তিনি কংগ্রেসের নীতিকে জাতীয় সুরক্ষার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি অসমের জনতাকে অনুপ্রবেশ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কংগ্রেসের তুষ্টিজনিত নীতির কারণে অনুপ্রবেশ, সন্ত্রাসবাদ এই রাজ্যকে বিশাল মূল্য দিতে হয়েছে। 
মুখ্যমন্ত্রী যোগী বলেন, আমি রাজ্যের জনগণকে অভিনন্দন জানাতে চাই যে আপনারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সর্বানন্দ সনোয়ালকে বিশ্বাস করেছিলেন। আমি বিশ্বাস করি আপনারা এবারও তাঁদের নেতৃত্বকে বিশ্বাস করবেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের গৌরবময় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের গৌরবময় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিজেপি সব-কা সাথ, সব-কা বিকাশ এবং সব-কা বিশ্বাসের নীতি নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভারতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উত্তরপূর্ব ভারত বিকশিত হচ্ছিল না। উত্তর-পূর্বাঞ্চল কখনওই কংগ্রেস সরকারের অ্যাজেন্ডায় ছিল না। তবে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী মোদী অ্যাক্ট-ইস্ট নীতি বাস্তবায়ন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে প্রতিটি বিভাগের মন্ত্রী উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রতি পনেরো দিন অন্তর এসে একটি দিন ব্যয় করবেন। এছাড়া, কেন্দ্রের সমস্ত মন্ত্রক দরিদ্রদের সমস্যা পর্যবেক্ষণ করবে। যা প্রধানমন্ত্রী নিজে পর্যালোচনা করছেন। এর প্রভাব পুরো উত্তর-পূর্বে দৃশ্যমান। 
তিনি বলেন, মজবুদ নেতৃত্বের সন্ধান পেলে পুরো দেশ তার সুফল পায়। করোনা অতিমারির সময় প্রধানমন্ত্রী মোদীজি সমগ্র দেশকে একত্রিত করে বিনামূল্যে খাবার সহ অন্যান্য সমস্ত ব্যবস্থাকে জোরদার করেছিলেন, যার কারণে একটি নতুন ভারত আজ বিশ্বের মানসিকতায় দ্রুত আত্মপ্রকাশ করেছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বিডেনও মোদীর নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী দুটি ভ্যাকসিন দিয়ে কেবল দেশকেই নয় বিদেশের নাগরিকদেরও বাঁচানোর মতো মহৎ কাজ করেছেন। অসমের জনসাধারণ যেমন করোনার বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন, তেমনি বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি আবারও অসমে জিতবে এবং ডাবল ইঞ্জিন সরকার দ্রুত উন্নয়নের কাজটি এগিয়ে নেবে। 
যোগী আদিত্যনাথ বলেন, এই ধরিত্রী আমার কাছে শ্রদ্ধার কারণ এজন্য, এখানে বর্ষিয়ান সাহিত্যিক-কবি-লেখক সংস্কৃতিবানরা জন্মগ্রহণ করেছেন, যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তাঁদের অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে অসমের নাম উজ্জ্বল হয়েছে। এখানকার পরম্পরা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা, সাহিত্য খুব উজ্জ্বল। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে গত ছয় বছরের শাসনকালে বিনা বৈষম্য ছাড়াই সবার জন্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সরকার কোনও ভাষা, বর্ণ, ধর্ম, বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্য করেনি। প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের জনকল্যাণমূলক নানা প্রকল্পের একের পর এক খতিয়ান তুলে ধরেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার মহাসড়ক, রেলওয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়, বিমানবন্দর, এইমস, মেডিক্যাল কলেজ, সেতু, ভোকাল ফর লোকাল সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, বিজেপি যেভাবে কাশ্মীর সম্পর্কে বলেছিল, দুটি বিধান, দুটি চিহ্ন, দুই প্রধান দেশে থাকবে না, তা কার্যকর করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের যে স্বপ্ন ছিল তা প্রধানমন্ত্রী মোদী সাকার করে দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন হোজাইয়ের যুবকরাও কাশ্মীরে গিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারবেন। তবে, কংগ্রেস তা আটকে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। 
আজ তাঁর কামাখ্যা দর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ আমি জয় শ্রীরাম স্লোগান শুনেছি। রাম আমাদের আত্মা, আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি। রাম ভারতের সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। রাম ছাড়া ভারত কল্পনা করা যায় না। তিনি অযোধ্যার রামমন্দির সম্পর্কেও বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার এই মন্দিরের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন, রাম মন্দিরের জন্য সমর্পণ নিধি অসম দুর্দান্ত অবদান রেখেছে। এজন্য তিনি অসমের জনগণকে ধন্যবাদ জানান। 
যোগীর বক্তব্যে তিন তালাক প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আজ তিন তালাক বলে যে তাঁর স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে চাইবেন, তাঁকে কারাগারে যেতে হবে। আরও বলেন, এখন যদি কেউ ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে তবে মোদী সরকারের কাঝে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং এয়ার স্ট্রাইক চালানোর ক্ষমতা রয়েছে। এটা প্রমাণিত হয়েছে। ভারতকে অন্যতম সেরা ভারত হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী যেমন কাজ করছেন, তেমনি শ্রেষ্ঠ অসম গড়তেও সনোয়াল নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। তিনি হোজাইয়ে বিজেপি প্রার্থী রামকৃষ্ণ ঘোষ এবং লামডিঙে শিবু মিশ্রকে বিজয়ী করতে জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। 
লংকার নির্বাচনি সমাবেশে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা মঙ্গলদৈয়ের সাংসদ দিলীপ শইকিয়া, হোজাই জেলা সভাপতি অনুপ দেব, দুই প্রার্থী রামকৃষ্ণ ঘোষ ও শিবু মিশ্র সহ অন্যান্য জাতীয় ও প্রদেশ নেতা সহ লক্ষাধিক জনতা উপস্থিত ছিলেন। যোগীর কথা শুনে উপস্থিত জনতার মধ্য থেকে মুহুর্মুহু জয় শ্রীরাম ধ্বনী দিয়েছেন। জনসভাক মনে হয়েছে এ-যেন কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.