সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল মায়ানমার (Myanmar)। এক মানবাধিকার সংস্থার দাবি, নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে সে দেশে এপর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৮০ জন গণতন্ত্রকামীর। এই টালমাটাল পরিস্থিতিতিতে দেশটিতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট। ফলে লাগাতার বাড়ছে দাম। এহেন ডামাডোলে গরীব মানুষের অন্য সংস্থানের বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসংঘ।
মায়ানমারের রাজনীতি বিশ্লেষণ বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ‘Assistance Association for Political Prisoners’ জানিয়েছে, দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ফেব্রুয়ারি ১ তারিখে সেনার ক্ষমতা দখলের পর হিংসায় এপর্যন্ত প্রায় ১৮০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।, রবিবার এক দিনেই দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫০ জন বিক্ষোভকারীর। সোমবার প্রাণ হারান আরও ২০ জন। এক মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, সোমবার মৃতদের অধিকাংশ বিক্ষোভকারী হলেও, এমন অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁরা বিক্ষোভে অংশ নেননি। গত কাল ইয়াঙ্গনে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে বাড়ির ভিতরে থাকাকালীন মৃত্যু হয়েছে দুই মহিলার। সব মিলিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি রীতিমতো রক্তাক্ত। এই চাপানউতোরে রীতিমতো বিপাকে পড়েছে দেশটির গরীব মানুষরা। রাষ্ট্রসংঘের The World Food Programme (WFP) জানিয়েছে, দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের দাম মাত্রাছাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে, কোনও কোনও জায়গায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। সাধারণ মানুষের প্রধান খাবার ভাত বা চালের দাম বিভিন্ন বাজারে ৩ শতাংশ বেড়েছে। দেশজুড়ে জ্বালানির দাম বেড়েছে অন্তত ১৫ শতাংশ।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্র ফেরানোর আরজি জানিয়ে মায়ানমারের উপর চাপ বাড়িয়েছে আমেরিকা-সহ একাধিক দেশ। বার্মিজ সেনাকে কাবু করতে কয়েকদিন আগেই প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকার বাণিজ্য দপ্তর। শুধু তাই নয়, ‘মায়ানমার ইকোনোমিক কার্পোরেশন’ ও ‘মায়ানমার ইকোনোমিক হোল্ডিংস পাবলিক কোম্পানি’ নামের দু’টি সরকারই সংস্থাকেও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত করেছে বাইডেন প্রশাসন। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাফ জানিয়েছিলেন, মায়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে জড়িতদের বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে চলেছে তাঁর প্রশাসন। পাশাপাশি, গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যও সামরিক জুন্টাকে কড়া ভাষায় নির্দেশ দেন তিনি। হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে ‘টাটমাডাও’ বা বার্মিজ সেনার একাধিক কর্তা ও তাঁদের পরিবারের লোকজন। এর ফলে আমেরিকায় তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হবে। একইসঙ্গে, মায়ানমারে স্বাস্থ্য ও জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সরঞ্জাম ছাড়া অন্য পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করতে পারে ওয়াশিংটন।