মুকুল নামক মস্তিষ্ককে হারিয়ে প্রশান্তে শান্তি খুঁজছেন মমতা

অশান্ত মমতা প্রশান্তকে ডেকে এনে একটি ব্যাপার জলের মতো পরিস্কার করে দিলেন যে মুকুল দল ছাড়ার পর তিনি দলের মস্তিষ্কের অভাব বোধ করছেন।

পঞ্চায়েত ভোট করেছেন গায়ের জোরে, উতরে গেছেন। লোকসভা ভোটেও যেখানে পেরেছেন সেখানেই গায়ের জোর খাটিয়েছেন, কিন্তু তবুও মুখ থুবড়ে পড়েছেন।

মুখ থুবড়ে পড়ার পর নিজের মনোবলে উঠে দাঁড়িয়ে মমতা এখন বুঝতে পারছেন তাঁর দল এখন “স্কন্ধকাটা”। হাত আছে, পা আছে, অঙ্গ আছে আবার প্রত্যঙ্গও আছে। মুখটিও আছে। বাদ গাছে শুধু মস্তিষ্কটি।

শুধু গেছে বললে কম বলা হবে, সেই মস্তিষ্কটি তাঁর দলের বিপক্ষে বুক পেতে দাঁড়িয়েছে এবং দলের ভিতটি নড়িয়ে দিয়েছে।

মমতা চারপাশে তাকিয়ে দেখে বুঝলেন, মস্তিষ্ক চলে যাবার ফলে তাঁর গোটা দলের অবস্থা “মাল্টি অরগান ফেলিয়রে”র রুগীর মতো। যা ভাবছে তা ভুল ভাবছে, যা বলছে তা কিচ্ছু না বুঝে বলছে, যা করছে তাতে ক্ষতি বই উপকার হচ্ছে না।

কি করবেন মমতা? লোকসভায় ‘হাফ’ হয়েছেন বিধানসভায় কি সত্যিই ‘সাফ’ হতে হবে? তৃণমূলের জীবৎকালে মমতার কোনও দিন মস্তিষ্ক ভাড়া করার প্রয়োজন হয়নি। এবার হচ্ছে। নির্বাচন মস্তিষ্ক ভাড়া করছেন মমতা। এই একটি সিদ্ধান্তে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর নিজের ব্যক্তি ইমেজ ভোট বৈতরণী পার করতে আর যথেষ্ট নয়। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, মুকুল চলে যাওয়ার পর দলের তথাকথিত তাবড় নেতাদের তিনি বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে কিছুটা তোল্লাই দিয়েছিলেন, তারা সবাই মিলেও মুকুলের ধারে কাছে আসতে পারছেন না।

এইসব সাতপাঁচ ভাবনা মমতাকে বাধ্য করছে প্রশান্ত কিশোরকে নিয়োজিত করতে।
প্রশান্ত স্বনামধন্য। তাঁর সাফল্যের খতিয়ান দেশবাসীর জানা। তিনি পরিশ্রমী, অত্যন্ত বুদ্ধিমান। নিজের কাজ তিনি অত্যন্ত ভালভাবে জানেন। তবু প্রশ্ন রয়ে যায়… প্রশ্ন রয়ে যায় তিনি কি জানেন মমতার যেটুকু বিশ্বাসযোগ্যতা বিশ্বাসীদের মনে এখনও আছে তা কতটা ধাক্কা পেল শুধুমাত্র তাঁর নিয়োগে। অগ্নিকন্যা এবার থেকে একজন পেশাদার ব্যক্তির হাতের পুতুল হবেন! সুচারু রাজনীতিক মুকুল বিষয়টি আরও একটু উস্কে দিয়েছেন।

মহানগর নামক একটি পোর্টালে মুকুল বলেছেন, মমতা এবার কিশোরের থেকে শিখবেন কি ভাবে হাত নাড়তে হবে, কিভাবে বক্তৃতা দিতে হবে ইত্যাদি। মুকুল নামক মস্তিষ্কটি প্রশান্তকে অবজ্ঞা না করলেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। নয়াদিল্লিতে বসে তিনি বলছেন,

রাজ্যটাকে বুঝতে হবে তো। লোকসভা ভোটে মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা কি চাইছেন।
এই মানুষ অর্থাৎ ভোটারকে বোঝানোর কাজ নিয়েছেন এখন প্রশান্ত। কি বোঝাবেন? এই রাজ্যের মানুষ নিজের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা দিয়ে এতদিনে যা বুঝেছেন এবং ভোট দিয়ে নিজেদের যে মতামত তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, মমতার থেকে মোটা অর্থের বিনিময়ে (শোনা যায় প্রশান্ত কিশোর একজন অত্যন্ত দামী পেশাদার স্ট্রটেজিস্ট) তিনি বোঝাবেন মানুষ যা বুঝেছেন তা ভুল, তিনি এবার যা বোঝাবেন রাজ্যের মানুষ যেন সেটাকেই বেদবাক্য বলে মনে করে।

প্রশান্তর সঙ্গে যোগাযোগের খবর প্রকাশ হওয়ার ঠিক একদিন পরে তৃণমূল ভবনে হুগলি জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠকে মমতা পুরনো কর্মীদের খোঁজ করেছেন, প্রয়াত নেতা আকবর আলি খন্দকরকে স্মরণ করেছেন। তবে আশ্চর্যের কথা, এই কয়েকদিন আগে ভোটের প্রচারে গিয়ে আকবরের মৃত্যুদিনে মমতার মনেই পড়েনি তাঁর কথা! তাহলে কি ধরে নিতে হবে প্রশান্ত ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন? তাহলে কি বুঝে নিতে হবে তাঁর কথাতেই এবার থেকে মমতা পুরনো কর্মীদের খোঁজ নেবেন, ভাসবেন স্মৃতির সরণীতে?

দিদি ভাড়া করা মস্তিষ্কে অন্তর থাকবে তো?

এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তৃণমূলের তৃণমূল স্তরে।

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.