‘একে ৪৭’ তথা অটোমেটিক কালাশনিকভ নামটাই একপ্রকার কিম্বদন্তী।
ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা যখন চরমে, তখন রবিবার উত্তরপ্রদেশের অমেঠিতে অটোমেটিক কালাশনিকভ সিরিজের নতুন রাইফেল উৎপাদন কারাখানার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অমেঠির কোরওয়া-য় অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কারখানায় রাশিয়ার কালাশনিকভ কনসার্নের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন হবে ‘একে ২০৩’।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে বলা বচ্ছে, সেনাবাহিনীতে ‘৭.৬২ X ৩৯ এমএম ক্যালিবারের’ রাইফেলের চাহিদা ছিল। তার ভিত্তিতেই প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সাত লক্ষ ‘একে ২০৩’ উৎপাদন করা হবে সেখানে। ওই রাইফেলের সবটাই সরবরাহ করা হবে নিরাপত্তা বাহিনীকে।
প্রসঙ্গত, একে-৪৭ নিরাপত্তা বাহিনীতে সফল ভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে বহুবছর। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানাচ্ছে, ‘একে ২০৩’ হল ‘একে ১০০-র’ থেকে আরও উন্নত। নতুন সিরিজের এই রাইফেল আরও হাল্কা। অধিকাংশ পলিমার পার্টস ব্যবহার করার ফলেই ওজন আগের থেকে কমেছে।
তবে ভোটের আগে অমেঠিতে এই কারখানার উদ্বোধন করাকে কেন্দ্র করেও রাজনৈতিক শিবির ভ্রু তুলেছে। অমেঠি রাহুল গান্ধীর লোকসভা কেন্দ্র। অনেকে মনে করছেন, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে রাইফেল উৎপাদন করতে হবে বইকি। তবে দেখে মনে হচ্ছে, সবটাই আগাম চিত্রনাট্য মেনেই করছেন। ভারত-পাক উত্তেজনার আবহে গোটা দেশের জাতীয়তাবাদের নামে যুদ্ধের জিগির জিইয়ে রেখে ভোটে ফায়দা নিতেই এ ধরনের চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছে।
রাজনীতির বিষয়টি আপাতত দূরে রাখলে অবশ্য দেখা যাবে, রাশিয়ার থেকে এই রাইফেলে প্রযুক্তি হস্তান্তর বা চুক্তির ব্যাপারে ওয়াশিংটনের আপত্তি রয়েছে। গত জুনে আমেরিকা একটি আইন প্রনয়ন করেছিল। ‘কাউন্টারিং আমেরিকা’জ অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাংশন অ্যাক্ট’ নামে ওই আইনের আওতায় রাশিয়া থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়েছিল। ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লিরও কৌশলগত সম্পর্ক ভাল। আবার রাশিয়ার সঙ্গে নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা সম্পর্ক কালোত্তীর্ণ। ফলে ভারতের স্পষ্ট অবস্থান হল, প্রতিটি দেশের সঙ্গে নয়াদিল্লির কৌশলগত সম্পর্ক হল পৃথক ও স্বাধীন। তাই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সম্প্রতি রাশিয়ার থেকে এয়ার ডিফেন্স মিসাইল ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’ কেনার ব্যাপারে চুক্তি করেছে ভারত। এ বার কালাশনিকভ রাইফেল যৌথ উৎপাদনের জন্যও চুক্তি হল।
এরই পাশাপাশি আমেরিকার থেকে ৬৪৭ কোটি টাকা দিয়ে দ্রুত কিছু অ্যাসল্ট রাইফেল কিনছে ভারত। সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের কথা ভেবে তা কেনা হচ্ছে। মার্কিন সংস্থা এসআইজি সওয়ারের থেকে ‘৭.৬২X ৫১ মিমি ক্যালিবারের’ ওই রাইফেল গুলি কেনা হচ্ছে।