উন্নয়নের প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণের নতুন অস্ত্র পেল বিজেপি৷ শুক্রবারই মমতা জানিয়েছে দিয়েছেন, তিনি নীতি আয়োগের বৈঠকে যাবেন না৷ নীতি আয়োগ ক্ষমতাহীন সংস্থা, নিস্ফলা এবং লোক-দেখানো৷ মমতার এই সিদ্ধান্তের পরই রাজ্য বিজেপি উন্নয়নের প্রশ্নে তৃমমূল বিরোধী ইস্যু তৈরি করে ফেলছে৷ খুব তাড়াতাড়ি সেই ইস্যুর ভিত্তিতেই প্রচার এবং আন্দোলন শুরু করতে চলেছে বিজেপি৷ পার্টি সূত্রে যা খবর, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রচার কর্মসূচীতে দুটি বিষয়কে সামনে রাখতে চাইছে বিজেপি৷
প্রথমত, জনগণকে বোঝাতে হবে, রাজনীতির প্রশ্নে উন্নয়নকে বরাবরই পিছনে ঠেলে দিয়েছেন মমতা৷ নীতি আয়োগের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র মুখোমুখি হতে চাননা বলেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ কিছুদিন আগেই, ঘূর্ণীঝড় ফণীর প্রকোপ দক্ষিণবঙ্গ এবং ওড়িশাকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে চান৷ কিন্তু কথা হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা না হওয়ার রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির থেকেই রাজ্যের খবর নেন মোদী৷ পরবর্তীকালে রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েও পারেননি প্রধানমন্ত্রী৷
দ্বিতীয়ত, বিজেপির লক্ষ্য উন্নয়ণের প্রশ্নে মমতাকে সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো৷ রাজনৈতিক বিরোধ থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী মোদী ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ককে উন্নয়নের কান্ডারী বলে অবিহিত করতে পিছপা হন না৷ কিন্তু বাংলায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে পারছেন না৷ এটি সংকীর্ণ রাজনীতি ছাড়া আর কী হতে পারে৷ রাজ্য বিজেপি সত্রে যা খবর, ২০১১ সালের পর রাজ্যে শিল্প ক্ষেত্রে নতুন কী উন্নয়ন হয়েছে তা ভোটারদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি৷
সিঙ্গুরে তৃণমূল কংগ্রেসের হারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মুখ পুড়েছে বলে মনে করে গেরুয়া শিবির৷ সেক্ষেত্রে শিল্পায়নের প্রশ্নেই রাজ্য সরকারকে বিঁধতে চাইছে বিজেপি৷ গ্রাম বা শহরে তৃণমূল আশ্রিত কিছু জনগোষ্ঠীই শুধু তোলাবাজির টাকা তুলছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বা রোজগারের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না – মমতা বিরোধী প্রচারে এই কথাই তুলে আনতে চাইছে বিজেপি৷
অর্থনাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতি আয়োগ আর্থিক অনুদান মঞ্জুর করতে পারে না৷ প্রথম মোদী সরকারে জমানায় প্ল্যানিং কমিশনকে বাতিল করা হয়৷ তার বদলে আসে নীতি আয়োগ৷ আয়োগ আর্থিক অনুদান দিতে না পারলেও তা অর্থমন্ত্রককে সুপারিশ করতে পারে৷ বঙ্গ রাজনীতি যারা কাছ থেকে দেখেছেন, তাদের অনেকেরই বক্তব্য, মমতা নীতি আয়োগকে পছন্দ করেননি, তার সুষ্পষ্ট কারণ রয়েছে৷ ওই সংস্থা রাজ্যকে আর্থিক অনুদান মঞ্জুর করতে পারবে না৷
সেক্ষেত্রে প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের অন্য দফতরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে রাজ্যকে৷ মমতার বিশ্বাস, নীতি আয়োগে যারা রয়েছেন তারা রাজ্যের জন্য সুপারিশ করবেন না৷ এছাড়া চেয়ারম্যান হিসাবে মোদীর কাছে রাজ্যের দাবি নিতেও মমতার সম্মানে বাঁধবে৷ কারণ গতদুটি লোকসভা নির্বাচনে দুজনেই দুজনকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন৷ দূর্ভাগ্যজনকভাবে ‘পলিটিকাল ইগো’ উন্নয়নের মাঝে এসে দাঁড়িয়েছে৷
মমতার কথায়, নীতি আয়োগের কোনও যৌক্তিকতা নেই৷ ফিরিয়ে আনতে হবে পুরানো প্ল্যানিং কমিশন৷ নীতি আয়োগে রাজ্যগুলি কোনও অ্যাজেন্ডা তৈরি করতে পারে না৷ আয়োগের অ্যাজেন্ডায় মাথা নাড়তে হয়৷ কিন্তু বিজেপি ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছে, মুখ্যমন্ত্রী দেশের সংবিধান মানেন না৷ প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান করেন না৷ সেক্ষেত্রে নীতি আয়োগের বিরোধীতা করবেন সেটাই স্বাভাবিক৷ রাজ্য বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু’র বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নীতি আয়োগে না গিয়ে বাংলার মানুষের ক্ষতি করছেন৷
বিরোধী রাজনৈতিক দল সেটা দেখে চুপ করে বসে থাকবে না৷ যিনি মুখে মুখে উন্নয়ন করে বেড়ান, তিনি নীতি আয়োগে কেন যান না৷ কেন্দ্রে সঙ্গে আলোচনা না করে বাংলার উন্নয়ন করবে কী করে৷ লোকদেখানো উন্নয়নের বার্তা দিলেই শুধু হবে না৷ রাজ্যে বিজেপি বৃহত্তর আন্দোলনে যাচ্ছে৷’’