নরেন্দ্র মোদীর এই জয় ভারতের কোটি কোটি মানুষের জয়

শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বিপুল জনাদেশ নিয়ে ফিরে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ও তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি। এই রকম অভূতপূর্ব জয় স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম। কোনও সহানুভূতির হাওয়ায় ভর করে নয়— কর্মদক্ষতা, সততা ও নির্ভেজাল দেশপ্রেম এই উত্তুঙ্গ সাফল্যের কারণ। বিরোধী দলগুলির একটাই অ্যাজেন্ডা ছিল, ‘মোদী হঠাও’। কারণটা পরিষ্কার। বিরোধী দলগুলির ভ্রষ্টাচারের পথে মোদীজী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সুতরাং তাকে হঠাতে হবে। এদের কোনও সর্বসম্মত নেতা ছিল না, কোনও সুস্পষ্টনীতি বা আদর্শ ছিল না, শুধু ছিল ক্ষমতার লোভ, ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা। ভারতের আমজনতা এদের আসল রূপটা ধরে ফেলেছে। তাই তারা এদের ফাদে পা না দিয়ে দু’হাত তুলে মোদীজীকে আশীর্বাদ করছেন ও ভরসা দিয়েছেন।
এবার বহু রাজনৈতিক পণ্ডিতের হিসাবে গরমিল হয়ে গেছে, তাদের ভবিষ্যদ্বাণী মেলেনি। ভারতের নবীন প্রজন্ম, যারা নতুন ভোটার, তারা মোদীজীর উপরেই আস্থা রেখেছে, অন্য কারও ওপরে নয়। জাতপাত, সম্প্রদায়, ধর্মবিশ্বাস সবকিছুর উপরে উঠে মোদীজী দেশ গড়ার, নতুন ভারত গড়ার। ডাক দিয়েছিলেন, সেই ডাকে মানুষ সাড়া দিয়েছে। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ এই মন্ত্র যাঁর, তার উপরে ভরসা না করে পারা যায় না! তাই এই বিপুল জয়।
ভারত বহু ভাষা, বহু ধর্ম, বহু সম্প্রদায়ের দেশ, কিন্তু মূল সুর একটাই। সেটি হচ্ছে। ভারতীয়ত্ব যা একটি বহু প্রাচীন এবং অতি উন্নত এক সভ্যতার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। যার মূল সুর ‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃসবাই সুখে থাকুক, বসুধৈব কুটুম্বক সারা পৃথিবী আমার আপনজন।
মোদীজীর এই বিপুল জয় আবার প্রমাণ করল যে ভারতীয় কৃষ্টি অপরাজেয়, অবশ্যই অবিনশ্বর। লক্ষ্য করার বিষয় হলো, এ দেশের অগণিত দরিদ্র মানুষ, অল্প শিক্ষিত, নিরক্ষর মানুষ আজ সমাজ সচেতন, রাজনৈতিক ভাবে সচেতন। তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর তাদের ভোলাতে পারছে না। মোদীজী যথার্থই বলেছেন, এই জয় তাঁর জয় নয়, এই জয় গণতন্ত্রের জয়, ভারতের মানুষের জয়।
দুঃখের কথা হলো, কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ এই বিপুল জয়টা মেনে নিতে পারছে না। এক্সিট পোল যখন ফলপ্রকাশের আগেই ভোটের ফলাফল সম্বন্ধে আভাস দিয়েছিল, তখনই তারাইভিএমের বিরুদ্ধে‘রে রেকরে আসরে নেমে পড়েছিল। চন্দ্রবাবু নাইডু মহা উৎসাহে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের দরজায় দরজায় কড়া নাড়া শুরু করে দিয়েছিলেন। বেচারা চন্দ্রবাবু! নিজের প্রদেশ অন্ধ্রের মানুষরাই যখন তাঁকে রিজেক্ট করল, তখন বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করলেন, অবশ্যই ভোটের ফল প্রকাশের পরে। ‘নিয়তি কে ন বাধ্যতে’।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও কম যান না। প্রধানমন্ত্রী হবার উদগ্র বাসনা তাকে বাস্তব পরিস্থিতি ভুলিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ধাক্কাটা খেলেন নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে। বেয়াল্লিশটা আসনের মধ্যে মাত্র বাইশটা আসনে জয়লাভ করলেন, আর বিজেপি পেল আঠারোটি আসন। দেশের প্রধান মন্ত্রীকে কদর্য ভাষায় গালি দিয়ে গেছেন আমাদের মাননীয়া। প্রকাশ্য জনসভায় বলছেন যে মোদীজীকে তার থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা হয়। ব্যক্তিগত ভাবে তাকে অপছন্দ করতেই পারেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক পদের কোনও সম্মান নেই তার কাছে?
এসব কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভালো ভাবে নেয়নি। জননেতা বা নেত্রীর মুখে কুরুচিপূর্ণ ভাষা তারা বরদাস্ত করে না, ভোটের ফলেই তা প্রমাণিত।
মোদীজীর এই বিপুল জয়ের পেছনে মুসলমান মহিলাদেরও অবদান অনেক। তিন তালাক প্রথা রদ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে চেয়েছেন। তাঁদের সম্ভাব্য লাঞ্ছনার হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি কুপ্রথা, যেটা ছিল মুসলমান মহিলাদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং পারিবারিক অনিশ্চয়তার প্রতীক, মোদীজী সেটি বন্ধ করার ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিদানে এই মহিলারা তাকে ভোট দিয়ে অন্তরের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নিজে একজন মহিলা হয়ে মোদীজীর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।
বহুকাল যাবৎ একটা কথা খুব প্রচলিত ছিল যে দক্ষিণ ভারতে ভারতীয় জনতা দল ব্রাত্য, কারণ এই দল মূলত হিন্দি ভাষীদের দল। আচ্ছা, আপনারা বলুন তো কর্ণাটক কি উত্তর ভারতের একটি প্রদেশ? অথবা পশ্চিম ভারতের? নয়তো পূর্ব ভারতের ? কর্ণাটক এবার বিপুল ভাবে মোদীজীকে সমর্থন জানিয়েছে। এর আগে বিধান সভা নির্বাচনেও বিজেপি সর্বাধিক ভোট পেয়েছিল কিন্তু কংগ্রেস দল কর্ণাটকের স্থানীয় দল জে ডি এস-এর সঙ্গে রাতারাতি গাঁটছড়া বেঁধে সরকার গড়ে ফেলে। দেবেগৌড়ার পুত্র কুমারস্বামী সামান্য কটি ভোট পেয়েও মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বসলেন। বিজেপি ১০৪টি আসনে জয়লাভ করেছিল, কংগ্রেস ৭৮টি আসনে জয়লাভ করে। এটা গত বছরের ঘটনা। বেচারা কুমারস্বামীর দলীয় শক্তি নেই বলে কর্ণাটক সরকারে তার অবস্থা অনেকটা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি টাইপের। সরকারে ছড়ি ঘোরায় কংগ্রেস দল। মুখ্যমন্ত্রীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, এটা কার ভালো লাগে বলুন? যে কারণে আমরা টেলিভিশনের পর্দায় প্রায়শই কুমারস্বামীকে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পাই। একটি বড়ো সাইজের রুমাল দিয়ে চোখ মুছছেন, এই দৃশ্য আমরা একাধিকবার দেখেছি। বোঝাই গেছে। যে তিনি তার প্রাপ্য সম্মান কংগ্রেসিদের কাছ থেকে মোটেই পাচ্ছিলেন না। এবার লোকসভা নির্বাচনে। কর্ণাটকের আটাশটি আসনের মধ্যে ২৫টিই গেল বিজেপির ঝুলিতে। তারা কর্ণাটকের আঞ্চলিক সমস্যাগুলিকে কেন্দ্রের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে, আশা করা যায়।
আরেকটি দক্ষিণী দেশ তেলেঙ্গানা। সেখানেও ভারতীয় জনতা পার্টি ভালো ফল করেছে। সুতরাং দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যে দক্ষিণ ভারতেও মোদীজী ও তার দলের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। যেমনটা ভাবা গিয়েছিল, ‘টুকরে টুকরে গ্যাঙের কানহাইয়া কুমার বেগুসরাই থেকে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েছে। মানুষ এই সব দেশদ্রোহীদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। নির্বাচনে দাঁড়াবার সাহস এদের হয় কী করে? আশা করি ধাক্কাটা খাওয়ার। পর এদের চৈতন্য হবে।
চলচ্চিত্র অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন, নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় আশা করি তারও চোখ খুলে দেবে। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ধৃষ্টতা দেখানোর শাস্তি জনগণ তাঁকে দিয়ে দিয়েছে।
সব থেকে চমকপ্রদ ফল হয়েছে উত্তরপ্রদেশের আমেথিতে। আমেথি কেন্দ্রটি নেহরু-গান্ধী-বটরা পরিবারের খাস তালুক বলা যায়। আমেথি এই পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতোই ছিল। এবার সেখানকার মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে বংশানুক্রমিক রাজত্বের দিন শেষ। বিজেপির স্মৃতি ইরানি বিপুল ভোটে জিতেছেন, পরাজিত হয়েছেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী। আমেথির মানুষ নেররু-গান্ধী-বরা পরিবারের একচেটিয়া জমিদারির দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, এটাই প্রমাণ হলো।
মোদীজীর উদ্দেশে যারা লাগাতার কুৎসা রটনা করে এসেছে, গালিগালাজ দিয়ে এসেছে, এবারের নির্বাচনের ফলাফল। তাদেরকে হতাশ করবে, নিঃসন্দেহে। ছদ্ম-সেকুলার লবি, যারা নিজেদের বিশাল ইন্টেলেকটুয়াল বলে মনে করে এবং মনে করে তাদের মতো প্রগতিশীল পৃথিবীতে বিরল, এবার তাদেরও ভারতের মানুষ সবক শিখিয়ে দিল। আশা করি এই নির্বাচনের ফলাফল বিদেশে টিকিবাঁধা অমর্ত্য সেনদের মতো তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর দলকে কিছুটা শিক্ষা দেবে।
ড. রমা বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.