মোদীজীর কাছে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান চাই

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের পর নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী স্বাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাসে জনপ্রিয়তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পণ্ডিত নেহরুর জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রাম, পারিবারিক আভিজাত্য, আদ্যন্ত বিলেতি শিক্ষার প্রভাব এবং সর্বোপরি গান্ধীজীর কৃপাকে চিহ্নিত করা যায়। শ্রীমতী ইন্দিরার নেহরু-গান্ধী লিগ্যাসি, বাংলাদেশ যুদ্ধ বা বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায় ‘সুন্দর মুখের কদর’কে উল্লেখ করা যেতে পারে। মোদীর মধ্যে এমন একটি উপাদান লক্ষ্য করা যায় না। বরং কঠোর স্বয়ংসেবকের কৃচ্ছসাধন ও একের পর এক অগ্নি পরীক্ষায় উত্তোরণের মধ্যে লুকিয়ে আছেতার এই নজিরহীন জনপ্রিয়তা যা বহু রাজনীতিজীবীর কাছেই ঈর্ষণীয়।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার শপথ নেওয়ার পরের দিনেই গোধরার মতো ঘটনা। তার পর থেকে তাঁর গুজরাট নির্মাণ ও ভারতের মতো বিশাল বৈচিত্র্যময় ভূখণ্ডের কাণ্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।
প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম পাঁচ বছরে তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হিসেবে উল্লেখ করা যায় একটা দুর্নীতিমুক্ত গোটা মন্ত্রীসভা উপহার দেওয়া। এছাড়া যতো সমালোচনাই হোক না কেন নোটবন্দি থেকে জিএসটি লাগু করা, সড়ক সম্প্রসারণ থেকে চার শতাংশে মুদ্রাস্ফীতিকে লাগাম পরানোর মতো সাহস তিনি দেখিয়েছেন। মিলটন ফ্রীডম্যান বর্ণিত ‘টাইরানি ও স্ট্যাটাসকো’ থেকে অর্থনীতিকে বের করে এনে বেপরোয়া হওয়ার সাহস দেখিয়েছেন। নিজেকে দরিদ্র ভাবা যে দুর্বলতার প্রকাশ সেই শক্তিদায়ক ভাবনায় জনগণ আজ উজ্জীবিত। ভারত আজ বিশ্বে কেবল চতুর্থবহত্তম জিডিপি-র দেশই নয় সপ্তম বৃহত্তম বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারও।
সফল মানুষের কাছে প্রত্যাশা বাড়ে। তাই তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম একশো দিনে আমি দুটি ছক্কা চাইব। প্রথমটি হলো আমাদের যেন আর বিজয় মাল্য, নীরব মোদী, মহুল চোকসির মতো জাল ছেড়া রাঘব বোয়ালদের দেখতে না হয়। বোফর্সের কাত্রোচ্চি, ভূপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির অ্যান্ডারসন বা পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণে পিটার ব্লিচদের নিরাপদ মার্গদর্শনে কংগ্রেস সরকার যে ভূমিকা নিয়েছিল তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। প্রয়াত অস্ট্রেলিয় ক্রিকেট অধিনায়ক রিচি বেনো বলতেন, দলে একজন দক্ষ ফিল্ডার থাকা খুব জরুরি। সে নিজে দশ রান করলেও পঞ্চাশটা রান বাঁচাতে পারে। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের বেআইনি বহির্গমন নতুন সরকারের তাই অন্যতম প্রধান এজেন্ডা হওয়া দরকার।
দ্বিতীয় যে প্রত্যাশা আমার মতো প্রতিটি ভারতবাসী মনে মধ্যে পোষণ করছে তা হলো কাশ্মীর, বিশেষ করে উপত্যকার ভূমিপুত্রদের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া। এই কঠিন কাজটা প্রধানমন্ত্রীকে করতেই হবে। কাশ্মীর ভারতীয় ঐতিহ্য পরম্পরা, ইতিহাসের ধারার যে উজ্জ্বলতম প্রতীক সেটাকে জনমনে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জওহরলাল নেহরু, কাশ্মীর আমার রক্তে কাশ্মীর আমার হৃদয়ে’ বললেও এই ভারত ভূস্বর্গের আত্মাকে অনুধাবন করেননি। মাউন্ট ব্যাটেনের অধীনে নিয়মতান্ত্রিক প্রধানমাত্র থেকে কাশ্মীর প্রসঙ্গকে রাষ্ট্রসঙ্ঘে নিয়ে গেছেন। ভারতীয় সভ্যতার উৎস বলা যায় কৃষ্ণ (কিষেণ) গঙ্গা, অধুনা নীলম নদী তীরের সারদাতীর্থ। বর্তমান পাক সরকার এই হিন্দু সভ্যতার উৎস ভূমিটিকে মহেঞ্জোদরোর মতো রক্ষার কথা ভাবছে। দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মণেরা আজও উত্তর মুখে করজোড়ে উচ্চারণ করে, নমস্তে সারদা দেবী কাশ্মীরমণ্ডলবাসিনী যেখানে অনেকের বিশ্বাস বিদ্যার দেবীর আবাস।
অতীতে ভারতীয় সভ্যতার বিকাশে তথা বিশ্বে আদান-প্রদানে এই কাশ্মীর তীর্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব যুগে বুদ্ধভদ্র, কুমারজীবের মতো ভারতীয় পণ্ডিত, মেগাস্থিনিসের মতো গ্রিক পর্যটক কিংবা ফা হিয়েন, হু এন সাঙের মতো চৈনিক মহাস্থবির জাতকদের যাতায়াতে এই সম্রাট অশোক নির্মিত শ্রীনগরী অসামান্য melting potএর ভূমিকা নিয়েছিল। যীশুখ্রিস্টের জীবনের পরিসমাপ্তিও এখানে ঘটে বলে অনেকের বিশ্বাস। পণ্ডিত নেহরু কাশ্মীরকে অপাপবিদ্ধা ধর্ষিতা এক সুন্দরী বলেছেন দোপাট্টা যার স্রোতস্বিনী। ভূতপূর্ব তৃণমূল সাংসদ কৃষ্ণা বসু তার সাম্প্রতিক লেখায় ইয়াসিন মালিকের বসবাসের অঞ্চলকে গাজাস্ট্রিপ বলে রোমান্টিসিজম করেছেন। দীর্ঘকাল ধরে কাশ্মীর সংক্রান্ত কোনো নীতিই সমাধান আনেনি। বহুবার প্রমাণিত হয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ শান্তি আনতে পারবে না। আমাদেরই সেই উদ্যোগ নিতে হবে। এখানকার কোনো ভূমিপুত্র যেন ভবিষ্যতে পুলওয়ামার ঘটনা ঘটাতে না পারে। আসমুদ্র হিমাচলের যে ভারতীয় তরুণ হৃদয় আজ নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী হরণ করেছেন তাতে ভূস্বর্গের তরুণদেরও শামিল করতে হবে।
এই দুরূহ কাজটি আমাদের প্রধানমন্ত্রী সামনে একশো দিনে সমাধান হোক আমি চাইব নজরকাড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করুন যাতে কাশ্মীরি তরুণটির হৃদয়ও মোদী মোদী ধ্বনিতে আলোড়িত হয়।
ভারতীয় কাশ্মীরিদের গর্বিত ভারতীয় বানাতে পারলে পাক-ভারত সমস্যার বারো আনাই সমাধান হবে।
কুণাল চট্টোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.