পাখির চোখ ‘প্রজেক্ট-৭৫আই’: সশস্ত্র ড্রোন উড়বে, ভারতের নিউক্লিয়ার সাবমেরিন পেছনে ফেলবে চিনকে

 চিনকে চাপে রাখতে চারশক্তি জোট বেঁধেছে। ভারতের সঙ্গে আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার চতুর্দেশীয় অক্ষ তথা কোয়াড নিয়ে এমনিতেও ঘুম উড়েছে বেজিংয়ের। ভারত-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের রণকৌশল ঠিক হয়ে যেতে পারে কোয়াডের বৈঠকেই। তাই প্রতিরক্ষার দিক থেকে এখন সবচেয়ে বড় ইভেন্ট বলা যেতে পারে এই কোয়াড। একে মাথায় রেখেই সমুদ্রশক্তিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলবে ভারত। তার জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। ভারতের মেগা প্রকল্প ‘পি-৭৫ আই’ এর চুক্তি যা করোনার জন্য পিছিয়ে গিয়েছিল তাই এবার পাকাপোক্ত হওয়ার মুখে।

প্রতিরক্ষা সূত্রে খবর, আগামী এপ্রিলের মধ্যেই ৩০টি সশস্ত্র ড্রোন ও ৬টি পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন তথা ডুবোজাহাজের চুক্তি পাকা হয়ে যাবে। ড্রোন ও সাবমেরিন দুটি আলাদা খাতে কয়েক কোটি টাকার চুক্তি হতে চলেছে। নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের জন্যই প্রায় ৫৫ হাজার কোটির চুক্তি পাকা হবে।

Project 677 lead submarine St. Petersburg passed all Russian Navy tests

প্রজেক্ট-৭৫ আই কী?

বিদেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র আমদানির বদলে দেশের কারখানায় উন্নতমানের অস্ত্র তৈরিতেই জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর জন্য ২০১৭ সালেই তৈরি হয়েছিল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার(এসপি) বা কৌশলগত অংশীদার পদ্ধতি। এই পদ্ধতির প্রথম ও সবচেয়ে বড় প্রকল্প বলা যেতে পারে পি-৭৫ আই মডেলকে। এই মডেলে দেশের কোনও বেসরকারি সংস্থা নির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য বিদেশি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে পারে। তাদের অস্ত্র তৈরির কৌশল বা স্ট্র্যাটেজি থেকে দেশেই তৈরি হতে পারে আধুনিকমানের যুদ্ধাস্ত্র।

Larsen & Toubro, Mazagon Dock Shipbuilders Ltd set for submarine clash -  Mail Today News

পি-৭৫ আই মডেল কার্যকর করার জন্য ইতিমধ্যেই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিল (ডিএসি)। জানা গেছে, এই প্রকল্পে গতি আনতে ইতিমধ্যেই পাঁচটি সংস্থাকে ‘রিকোয়েস্ট ফর ইনফরমেশন’ (আরএফআই) পাঠিয়েছে ভারত। এর মধ্যে দুটি ভারতীয় সংস্থা লারসেন অ্যান্ড টার্বো গ্রুপ, মাজাগাঁও ডকস লিমিটেড ও তিনটি বিদেশি সংস্থা নেভাল গ্রুপ-ডিসিএনএস (ফ্রান্স), থাইজেনক্রুপ মেরিন সিস্টেমস (জার্মানি) ও নাভানিতা (স্পেন)। সংস্থাগুলির তরফে প্রস্তাবও এসে গেছে। এবার চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পালা।

সশস্ত্র ড্রোন

সশস্ত্র ড্রোনের কথা ধরলে হাই অল্টিটিউড লং এন্ডুর‍্যান্স ড্রোনের (HALE) জন্যই চুক্তি হবে যা সেনা ও বায়ুসেনা উভয়েই ব্যবহার করতে পারবে। যেমন এমকিউ-৯বি সি-গার্ডিয়ান ড্রোন। গত বছরই দুটি সি-গার্ডিয়ান ড্রোন নৌসেনার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই সি-গার্ডিয়ান হল হাই অল্টিটিউড লং এন্ডুর‍্যান্স ড্রোন যা সমুদ্রের উপরে ৪০ হাজার ফুট উচ্চতা অবধি উড়তে পারে। টানা ৩৩ ঘণ্টা আকাশে ঘুরে নজরদারি চালাতে পারে। রিমোর্ট কন্ট্রোলে চালনা করা যায় এই ড্রোন।

India purchasing 30 Predator Drones after the splendid performance of Sea  Gaudian - Guarding India

আমেরিকার থেকে প্রিডেটর ড্রোন কেনার পরিকল্পনাও আছে ভারতের। এই প্রিডেটর ড্রোনকে বলা হয় ‘মিডিয়াম অল্টিটিউড লঙ-এন্ডুর‍্যান্স’ (MALE) সশস্ত্র প্রিডেটর-বি ড্রোন। চালকবিহীন এই ড্রোন তৈরি করেছে জেনারেল অ্যাটোমিক্স অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেম। মার্কিন বায়ুসেনা এই ধরনের অত্যাধুনিক ড্রোন ব্যবহার করে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এই প্রিডেটর-বি ড্রোনকে বলেন ঘাতক ড্রোন। উঁচু পাহাড়ি এলাকায় নজরদারি চালানো এবং দুর্গম এলাকায় অতর্কিতে শত্রুঘাঁটির উপরে হামলা চালাতে এই ড্রোনের জুরি মেলা ভার। এর উন্নত রাডার ও সেন্সর সিস্টেম অনেক উঁচু থেকেই শত্রুঘাঁটি চিনে নিতে পারে। প্রতিপক্ষ টের পাওয়ার আগেই নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে।

Project 75I Race to Build Six New Conventional Submarines for Indian Navy

নিউক্লিয়ার সাবমেরিন

ভারতীয় নৌসেনার হাতে এখন যে সাবমেরিনগুলি রয়েছে সেগুলির বয়স হয়েছে। পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন সমুদ্র সুরক্ষায় ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হবে। বিশেষ করে যখন ভারত মহাসাগরে চিন আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া, তখন নিউক্লিয়ার সাবমেরিনই ভারতের যোগ্য জবাব। ভারতীয় নৌসেনার হাতে এই মুহূর্তে সাবমেরিনের সংখ্যা ১৫টি। যার মধ্যে ১৩টি ডিজেল ইলেকট্রিক অ্যাটাক সাবমেরিন যার মধ্যে ৯টি রাশিয়ার থেকে কেনা ও ২টি নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন। নতুন ৬টি সাবমেরিন চলে এলে পুরনোগুলিকে বাতিল করে দেওয়া হবে।

Vinod on Twitter: "As I said, A-26 Oceanic ER has 3 VLS cells with 18 tubes  to launch 18 missiles. We can fit them with long range cruise missiles .  Torpedo launched +

নিউক্লিয়ার সাবমেরিনকে বলা হয় ‘স্টিল্থ ফাইটার’। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেন ‘নীরব ঘাতক’। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রযুক্তি থাকে এই ধরনের সাবমেরিনে। পারমাণবিক হামলাও চালাতে পারে। নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি গুপ্ত ঘাতকের মতো হামলা করতে পারে। নিজের অবস্থান লুকিয়ে রেখে আচমকা আক্রমণ করে শত্রুবাহিনীর সাবমেরিনের দফারফা করে দিতে পারে। রেডারকে ফাঁকি দিয়ে শত্রুঘাঁটির খুব কাছাকাছি চলে যেতে পারে এই ধরনের ডুবোজাহাজ।

India to spend Rs 500,000,000,000 on 6 submarines - Rediff.com News

চিনের কাছে যে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আছে তাকে স্টিলথ ফাইটার বলা যাবে না। কারণ সেগুলি নিঃশব্দে হামলা করতে পারে না। সেদিক থেকে ভারতে তৈরি নতুন ৬টি সাবমেরিন চিনকে কয়েক যোজন পেছনে ফেলে দেবে।

Project 75i submarine — How defence monies are squandered | Security Wise

ভারত ও ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে তৈরি স্করপেন শ্রেণির দুটি সাবমেরিনও সমুদ্রে নামিয়েছে ভারত। এদের নাম আইএনএস কলবরী এবং আইএনএস খান্ডেরি। স্করপেন শ্রেণির সাবমেরিন প্রযুক্তিতে ও আক্রমণাত্মক ক্ষমতায় সেরা। ডিজেল-ইলেকট্রিক ক্লাসের থেকেও প্রযুক্তিতে উন্নত। গোপনে আঘাত করে শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজে। স্করপেন থেকে টর্পেডো ও অ্যান্টি-শিপ গাইডেড মিসাইলও নিক্ষেপ করা যায়। গোপনে শত্রুপক্ষের নৌবাহিনীর খবরও আনতে পারে এই ডুবোজাহাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.