স্ট্র্যান্ড রোডের রেলভবনে এমন বিধ্বংসী আগুন লাগল কীভাবে, তার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। আগুনের উৎসের খোঁজ করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে দমকলকর্মী, রেলকর্মী, পুলিশ অফিসার সহ ৯ জনের। এত বড় অগ্নিকাণ্ড কীভাবে হল, তার কারণ খুঁজতে উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেয়েছেন রেলমন্ত্রী পীযুষ গয়াল। রেলের চার উচ্চপদস্থ অফিসারকে নিয়ে কমিটি তৈরি করা হয়েছে।
স্ট্র্যান্ড রোডের নিউ কয়ালাঘাটা বিল্ডিংয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ভোর ৪টে বেজে যায়। দমকলের ২০টি ইঞ্জিনের লাগাতার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। গতকাল রাত সাড়ে ১১টা নাগাদই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও তোলেন তিনি। কয়লাঘাটা বিল্ডিংয়ে পূর্ব রেলের অফিসে আগুন ছড়িয়েছিল, কিন্তু গতকাল রাত ১১টা অবধি অবধি রেলের কোনও আধিকারিককে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। কীভাবে আগুন লাগল তার তদন্ত করা উচিত বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্ত করা হবে বলেও গতকাল জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, গোটা ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হবে। এই তদন্তের দায়িত্বে থাকবেন রেলের চার উচ্চপদস্থ অফিসার। পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার মনোজ যোশী ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার যদি আলাদাভাবে তদন্ত করতে চায় তার জন্য সবরকম সাহায্য করবে রেল।
এদিকে গতকাল রাতের অগ্নিকাণ্ডে বিল্ডিংয়ের ১২ তলায় পূর্ব রেলের সার্ভার রুম পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এখান থেকেই দূরপাল্লার ট্রেনগুলির অনলাইনে টিকিট বুকিং হত। সে পরিষেবা বিপর্যস্ত। জানা গিয়েছে, পূর্ব, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ রেলের অনলাইন টিকিট বুকিং-এ সমস্যা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, স্ট্র্যান্ড রোডের ১৮ তলা ওই বিল্ডিংয়ের ১৩ তলা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন এতটাই বিধ্বংসী চেহারা নেয় যে ১২ তলাও দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে। আগুনের উৎস কোথায় তার খোঁজ করতে গিয়েই বিপদে পড়েন দমকলকর্মীরা। জানা যাচ্ছে, কয়লাঘাটা ভবনের বিদ্যুৎসংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না করেই লিফটে ঢোকেন দমকলকর্মীরা। ১২ তলায় ওঠার পরেই লিফটের ভেতরে আগুন ছড়িয়ে যায়। মনে করা হচ্ছে, দরজা খুলে আর বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেননি কেউ। ভেতরেই ঝলসে মৃত্যু হয় দমকলকর্মীদের। প্রচণ্ড ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে।
দমকল সূত্রে খবর, হাইড্রলিক ল্যাডার এনেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না। তাই আগুন ঠিক কোথা থেকে ছড়িয়েছে তা দেখতেই লিফটে করে ওপরে উঠেছিলেন দমকলকর্মীরা। তখনই বিপর্যয় ঘটে যায়।
গতকাল রাতেই দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন। ভিতরেও ঢোকেন তিনি। বেরিয়ে এসে তিনি বলেন, লিফ্টের ভিতরে পাঁচজনের দগ্ধ দেহ মিলেছে, লিফ্টের বাইরে ছিল দু’জনের দেহ। মৃতের পরিবারগুলিকে দশ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেন তিনি।