দ্বিতীয় অধ্যায়: ইসলামের অবশিষ্টাংশ
চারটি অবশিষ্টাংশের মধ্যে সবচেয়ে হিংস্র হল ইসলামের তলানি যা মুসলিম আক্রমণের পর বহু শতাব্দী ধরে পরিব্যাপ্ত। এর মূল নীতি ইসলাম থেকেই নেওয়া এবং এর মধ্যে অভিজ্ঞতার মূল্য, যুক্তিবাদ, সর্বজনীনতা, মানবতা ও উদারতা এইসব প্রবেশের সবকটি দরজা বন্ধ। এই বৈশিষ্ট্যগুলি কিন্তু হিন্দুত্ব ও আধুনিক পশ্চিমী সংস্কৃতির বলা যায় অবিচ্ছেদ্য চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য। ভারত ইসলাম নিজের বিজয় ধরে রাখতে এবং তাদের সম্পূর্ণ ধর্মান্তকরণের উদ্দেশ্যও সফল হয়নি। এখানে এই মতবাদ এক অশুভ বিধ্বংসী চরিত্র ধারণ করেছে।
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার রাখা ভালো, এখানে বিশুদ্ধ আরবি, ফারসি বা তুর্কি বংশোদ্ভূদ বলে গর্ব করা আণুবীক্ষণিক মুষ্টিমেয় মুসলমান ছাড়া আমাদের বাকি মুসলমান ভাইদের শরীরে আমাদেরই রক্ত মাংস।[1] সেই ভারতীয় মুসলমানেরা ইসলামের প্রবক্তা হওয়ার বদলে তার নিছক শিকার হয়ে বিষাক্ত উগ্রতা ছড়ানোর মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতীয় মুসলমানদের বিশাল অংশ হয় ছলে বলে নয় কৌশলে প্রলোভনের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই ধর্মান্তকরণ তাদের সামাজিক বা সাংস্কৃতিকভাবে কোনও উন্নতি সাধন করেনি, যার প্রমাণ ভারতের মুসলমান সমাজের দিকে তাকালেই পাওয়া যায়। ভারতীয় মুসলমানদের তাই ইসলামের দোষগুলো বহন করার পরিবর্তে তার থেকে মুক্তি পেতে হবে।
ইসলাম বলতে যা বোঝায় তা হল একটা নিজেকে নিখুঁত ভাবা এক মনস্তত্ত্ব এবং একটি বদ্ধ সাংস্কৃতিক মনোভাব, যার ফলে এই মতবাদে ধর্মান্তরিতদের পক্ষে অন্যদের সঙ্গে শান্তি ও মর্যাদা বজায় রেখে সহাবস্থান সম্ভব নয়। অনেক হিন্দু বহু ইসলামিক নীতির সমর্থক। অন্যদিকে বহু মুসলমান আছে যারা ইসলামকে ভয় পায় এবং তাদের সম্প্রদায়কে ব্যবহার করা হাতে গোনা ধর্মবেত্তা, রাজনীতিক ও গুণ্ডাদের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে ভারতীয় সমাজের মূল স্রোতে আসতে পারলে খুশিই হবে।
যাঁরা ইসলাম সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে আগ্রহী, তাঁরা শেখ স্যার মোহাম্মদ ইকবালের কম বয়সে লেখা দুটো দীর্ঘ কবিতার কথা উল্লেখ করেন। এই রচনাগুলি তাঁকে নিজের গোষ্ঠীর মধ্যে ‘আল্লামা’ উপাধি এনে দিয়েছিল। কবিতা দুটি হল ‘শিকওয়া’ ও ‘জবাব-ই-শিকওয়া’ যেগুলো খুশবন্ত সিং সম্প্রতি (আশির দশকে যখন এই বই লেখা হয়) ইংরেজীতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছেন।
শিকওয়া শেষ হচ্ছে এই ভাবে: “নগ়মা হিন্দী হ্যাঁয় তৌ কেয়া, লাই তৌ হিজাজ়ি হ্যাঁয় মিন?” মানে আমার ভাষা ভারতীয় তো কী হয়েছে, আমার আত্মা হল হিজাজ়ের। হিজাজ় হল আরবের সেই অংশ যেখানে মক্কা ও মদিনা অবস্থিত। জবাব-ই-শিকওয়া শেষ হচ্ছে আরও চড়া সুরে। আল্লাহ্ আল্লামার মাধ্যমে মানুষের প্রতি তাঁর বার্তা ঘোষণা করছেন এই ভাষায়: “কী ওয়াফ়া তুনে মুহাম্মদ সে তৌ হম তেরে হ্যাঁয়”, অর্থাৎ যদি মহম্মদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকো তাহলে তোমার প্রতি আমিও বিশ্বস্ত থাকব বা আমিও তোমাকে দেখব।
এখন ভারতে অনেক মুসলমান আছে যারা জীবনে ইকবালের নাম শোনেনি বা তাঁর লেখা পড়েনি। ঠিক যেমন বহু হিন্দু আছে যাদের ইকবালের প্রতি মুগ্ধতা অপরিমেয়। না, ইসলাম বলতে ভারতের কোনও নির্দিষ্ট সমাজকে বোঝায় না। এটা হল সেই বৌদ্ধিক বা বলা ভালো অ-বৌদ্ধিক মনোভাব যা একজন মাত্র পয়গম্বরের প্রতি বিশ্বাস ও নীতির একাধিপত্য চায়, এবং একটি বইয়ের পৃষ্ঠা থেকেই যাবতীয় জ্ঞান অর্জন করার জন্য সমর্পিত।
আল্লামা ইকবাল ও তাঁর ক্ষুদ্র সংস্করণ আলতাফ হুসেইন হালি-র রচনা থেকে নিশ্চিন্তে যে নির্যাস বার করা যায় তা হল:
১। ইসলাম আগমণের আগে ভারতীয় সমাজ ছিল আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সব দিক থেকে অন্ধকারে (জাহিলিয়া) যেমনটা প্রাক-ইসলাম আরবের দশা ছিল।
২। ইসলাম ভারতে একমাত্র সত্য ধর্ম নিয়ে আসে। একমাত্র নির্ভরযোগ্য নৈতিক মূল্যবোধ, একমাত্র মানবিক সংস্কৃতি এবং একমাত্র প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থা।
৩। এশিয়া ও আফ্রিকার বহু অংশের মতো ভারতকেও সভ্য করার এই মহান লক্ষ্য পূরণ হতে পারেনি ব্রিটিশরা এসে মুসলমানদের ঠকিয়ে তঞ্চকতা করে তাদের হাত থেকে ভারতে অধিকৃত সাম্রাজ্য কেড়ে নেওয়ায়।
৪। পাকিস্তান গঠন এবং রাবি নদের পশ্চিমে ও হুগলী নদীর পূর্বে মুসলিম শক্তি একত্রিত করতে পারা তাদের একটা বিজয় হলেও সারা ভারত অধিকার করার কাজটা অপূর্ণ থেকে গেছে।
৫। ইসলামের অধিকার আছে ছলে বলে কৌশলে যে কোনও উপায়ে ‘দারুল হারব’ ভারতকে ‘দারুল ইসলাম’-এ রূপান্তরিত করার যাতে ‘জাহিলিয়া’-র সমস্ত চিহ্ন মুছে ‘হুকুমত-ই-ইলাহিয়া’ বা ইসলামীয় সংস্কৃতি কায়েম হতে পারে।
অনেক হিন্দু আছেন যেমন পণ্ডিত সুন্দরলাল, যাঁরা প্রথম দুটো তত্ত্বের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু তাঁদের যুক্তিবোধ এখানেই এসে থেমে যায়, কারণ পরবর্তী তিনটি দাবি সমর্থনের বেলা যুক্তি খুঁজে পান না। অথচ সেই তিনটি কিন্তু প্রথম দুটিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ ও অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। আবার বেশ কিছু মুসলমানও আছেন যেমন রফ়ি আহমেদ কিদওয়াই ও বিচারক এম. সি. চাগলা, যাঁরা সবকটি ধারণাই বিরক্তিকর বলে বাতিল করে দেন।
ভারতের অতীত ইতিবৃত্ত সম্পর্কে এহেন চিত্রায়ণ এবং এমন ধ্বংসাত্মক মনোভাবের মধ্যে দিয়েই ভারতের ভবিষ্যৎ ইতিহাসকে যাত্রা করতে হবে। এই অবস্থায় ইসলাম একটা নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছে যাতে ভারতের মুসলমানদেরকেই ভিত্তি ও অস্ত্রাগার হিসাবে দেখানো হচ্ছে। এই রণকৌশলের কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল:
১। ভারতের মুসলমান বিশেষত মুসলমান বুদ্ধিজীবীদের যেন সবরকম যুক্তিবোধ, সার্বজনীনতা, মানবতা ও উদারতা থেকে বিচ্ছন্ন রাখা হয়। একমাত্র মোল্লাদের বাহিনী ও ইসলামিক মতবাদে দীক্ষিত মৌলবীদের ছেড়ে দেওয়া হবে যাতে মুসলিমদের মগজধোলাই করে সঠিক বা কাঙ্ক্ষিত পথে রাখা যায়।
২। যে সমস্ত মুসলমানরা ইসলামের অনুশাসন মানতে চায় না কিংবা সমালোচনা করার দুঃসাহস দেখায় অথবা ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের মূল স্রোতে মিশতে চায়, তাদের বিশ্বাসঘাতক অপবাদ দিয়ে খুনে মারমুখী মুসলমান জনতার শিকার করে তুলতে হবে।
৩। মুসলমানদের উৎসাহ দিতে হবে যাতে তারা যত রকম অভিযোগ উদ্ভাবন করা সম্ভব সবকটা নিয়ে ক্রমাগত নালিশ করে যায়। সেই সঙ্গে মুসলমানদের নির্মম সংখ্যাগুরু হিন্দুদের দ্বারা অবদমিত, শোষিত, নিপিড়ীত, দারিদ্রক্লিষ্ট সংখ্যালঘু যাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে রাখা হয়েছে – এই ভাবে তুলে ধরতে হবে।
৪। মুসলমান সমাজের এতগুলো আরোপিত আভিযোগকে মুসলমান ভোট ব্যাংক তৈরি করার কাজে লাগাতে হবে, যার দ্বারা সর্বাধিক সংখ্যক নির্বাচন কেন্দ্রে নির্ণায়ক ভূমিকা নেওয়া যায়, যাতে করে অমুসলমান রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্ল্যাকমেইল করে মুসলমান প্রার্থীকে টিকিট দিতে অথবা তাদের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে মুসলমান সম্প্রদায়কে যথাসম্ভব সুযোগ সুবিধা ও ছাড় দিতে বাধ্য করা যায়।
৫। মুসলমানদের উচিত নানাভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করে বিশ্বের যাবতীয় আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্বার্থ রক্ষায় ভারতকে সমর্থন দিতে বাধ্য করা, তা সে দাবি ঠিক বেঠিক, বৈধ বা অবৈধ যাই হোক, যাতে করে তাদের মনোযোগ নিজেদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা থেকে ক্রমাগত সরিয়ে রাখা যায়।
৬। মুসলমানদের যে কোনও অজুহাতে দাঙ্গা বাধানোর জন্য নিরন্তর উস্কানি দিতে ও প্রস্তুত রাখতে হবে। অজুহাত বলতে রাস্তার শুয়োর হোক বা মসজিদের সামনে গান, কিংবা উর্দু বা আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু চরিত্র, অথবা দুই সম্প্রদায়ের কোনও দ্বন্দ্বপূর্ণ সম্পত্তি নিয়ে নিছক ব্যক্তিগত শোরগোল, বা জেরুজ়ালেমের আল-আকসা মসজিদে অস্ট্রিয়ান আততায়ী দ্বারা বোমাবাজি, কিংবা পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জ়িয়া-উল-হকের নির্দেশে জ়ুলফিকার আলি ভুট্টোর ফাঁসি, অথবা সৌদি আরবে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর দ্বারা কাবা অধিকার ইত্যাদি ইত্যাদি। মানে ইসলাম দুনিয়ার এই জাতীয় যে কোনও ঘটনা হলেই হল।
৭। ঘন ঘন দাঙ্গা বাধিয়ে মুসলমানদের ভয় পাওয়াতে হবে যাতে তাদের তুষ্ট করতে গিয়ে মুসলমান অধ্যুষিত জায়গার বিস্তার ঘটিয়ে তাদের দেশী বিদেশী অস্ত্র শস্ত্র একত্র করার সুযোগ করে দেওয়া যায়।
এই সাতটি রণকৌশলের লক্ষ্য ভারতীয় মুসলমানরা, যাদের মগজ ধোলাই করে শাসিয়ে ভয় দেখিয়ে ইসলাম কবুল করত বাধ্য করা হয়েছিল। এই কৌশলের অন্য পিঠে রয়েছে হিন্দু সমাজের বিভিন্ন অংশকে প্রশমিত ও পঙ্গু করে রাখা, এবং হয় কালি ছিটিয়ে কিংবা তোষণ করে নিজেদের ইসলামীয়করণের রাস্তা পরিষ্কার করা।
দ্বিতীয় কৌশলটির বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:
ক) ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ যা সবকটি রাজনৈতিক দলের পবিত্রতম স্লোগান, সেই ধারণাকে বিকৃত করে, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ও যথাসম্ভব অপব্যবহার করে রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনজীবনে হিন্দু সংস্কৃতির অভিব্যক্তিকে যতটা সম্ভব রুদ্ধ করে দমিয়ে রাখতে হবে।
খ) ‘সাম্প্রদায়িক’ ও ‘সাম্প্রদায়িকতা’ যে শব্দদুটি ভারতীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অপব্যবহৃত হয়ে চলেছে, সেগুলোর অর্থ জনমানসে সাবধানে গুলিয়ে দিয়ে যেসব সংস্থা বা সংগঠন ইসলাম প্রসারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত দিচ্ছে না, তাদের কলঙ্কিত করার কাজে ব্যবহার করতে হবে।
গ) যারাই ইসলাম ও ইসলামীয় সংস্কৃতির একাধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, ইসলামের বাণী ও ইতিহাস সম্পর্কে জানবে ও সত্যটা জানাবে, মুসলমানদের অসন্তোষের স্বরূপটা দেখতে পাবে, তাদেরকেই ‘ফ্যাসিস্ট’ ও ‘ধর্মনরপেক্ষতা বিরোধী’ বলে দেগে দিতে হবে।
ঘ) যে সমস্ত হিন্দুরা যেনতেন প্রকারে ইসলামের জয়গান গাইবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে এবং যারা ইসলাম ও তার সংস্কৃতির মধ্যে উচ্চতর মূল্যবোধের সন্ধান পাবে, তাদের সবরকম প্রশংসা ও সাহায্য করতে হবে।
ঙ) ভারতীয় জাতীয়তাবোধের ইতিবাচক উন্মেষকে পরাজিত ও হতাশাগ্রস্ত করে দেওয়ার জন্য সম্ভাব্য সবকটি মাধ্যম বা মঞ্চকে কাজে লাগাতে হবে। তার জন্য ভারত বহুভাষিক, বহু জাতিগোষ্ঠীর, বহু ধর্মাবলম্বীর, বিভিন্ন সংস্কৃতি এমনকি বহু রাষ্ট্রের সমন্বয় এই শব্দগুলি বারবার আওড়াতে হবে।
ইসলামীয় মতবাদ স্বাধীন ভারতের মুসলিমদের মধ্যে এতটা মাথাচাড়া দিতে পেরেছে মূলত হিন্দু সমাজের প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবীদের নানা কারণে পৃষ্ঠপোষকতার সৌজন্যে। কংগ্রেস মদত দিয়েছে এটা বুঝতে পেরে যে খুব তাড়াতাড়ি তারা হিন্দুদের মধ্যে প্রাধান্য হারাবে; টিঁকে থাকা যাবে একমাত্র নিশ্ছিদ্র অবিভক্ত মুসলমান ভোটকে একত্র করতে পারলে। সমাজবাদীরা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে মূলত তাদের হিন্দু-বিদ্বেষী মনোভাব থেকে এবং কিছুটা মুসলমান ভোট নিশ্চিত করার আশায় যেটা এখনও পর্যন্ত পূর্ণ হওয়ার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি। গান্ধীবাদীরা পৃষ্ঠপোষকতা করছে কারণ তারা ভুলে গেছে, তাদের মহাত্মা গুরু নিজে একজন হিন্দু ছিলেন যাঁর সনাতন ধর্মের প্রতি গভীর আস্থা ছিল। তাছাড়া তারা গান্ধীজীর মুসলমানসহ সমস্ত ভারতবাসীর প্রতি অহিংস নীতিকেও ইসলামের সমর্থন ভেবে ভুল বুঝেছে। কমিউনিস্টরা ইসলামবাদকে মদত দিচ্ছে নিজেদের প্রধান শত্রু বলে ধরে নেওয়া হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম উপায় হিসাবে। আর আত্ম-বিচ্ছিন্ন হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা পৃষ্ঠপোষকরা করছে হিন্দু সমাজ সংস্কৃতির প্রতি প্রবল বিতৃষ্ণা থেকে, যার পরোয়াই তারা করে না। সুতরাং ইসলামের পৃষ্ঠপোষকতা করা নিজেদের হৃদয়বান উদারমনস্ক প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিপন্ন করতে ব্যাকুল মানুষদের অবসর বিনোদন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু স্থানীয় সংস্থান ও আন্তর্জাতিক আনুকূল্যের অভাবে ইসলামবাদের গতি ভারতে কিছুটা মন্থর ছিল। একমাত্র বিদেশী মদতদাতা পাকিস্তান গণমাধ্যমে উন্মাদনা (“হিস্টিরিয়া”) সৃষ্টি ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে প্রচার চালানো করা ছাড়া বিশেষ মদত দিতে পারছিল না। বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতকে যেসব যুদ্ধ করতে হয়েছে তার সবকটাতেই পাকিস্তানের পরাজয় হওয়ায় ভারতের ইসলামীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষা ততটা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠতে পারেনি।
ইসলামীয় দেশগুলোতে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার এবং সত্তরের দশক থেকে বিভিন্ন আরব দেশগুলো বিশেষত লিবিয়া ও সৌদি আরব থেকে পেট্রোডলারের প্রবাহ ইসলামবাদকে ভারতে নতুন করে আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। আরব ডলারের এই আমদানি খুব স্বাভাবিক ও অবশ্যম্ভাবী ঘটনা যেহেতু ইসলামীয় সাম্রাজ্যবাদ শেষমেষ আরব সাম্রাজ্যবাদেরই নামান্তর, যা একসময় লুঠতরাজ ও প্রজনন দ্বারা নিজ সম্প্রদায়ের সংখ্যা বাড়িয়ে বিদেশী ভূমি অধিকার করেছিল। এখন তো বহু অ-আরবীয় দেশকেও আধ্যাত্মিক দাসত্বে বন্দি করে রেখেছে।
ভারতে ইসলামপন্থা এখন আরবীয় অর্থের সর্বাধিক ব্যবহারে ব্যস্ত, যা বিভিন্ন পথে ও ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। এগুলোর মধ্যে কোনও কোনওটা আবার একেবারে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। নতুন দৃশ্যপটে এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হল:
১। ইসলামীয় মতবাদ প্রসারের উদ্দেশ্যে মূলত ভারতীয় ভাষায় কিছু ক্ষমতাশালী সংবাদমাধ্যম ও প্রকাশনা সংস্থার দ্রুত উত্থান।
২। পুরোনো মক্তব, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচুর অর্থ সাহায্য এবং নতুন নতুন অনুরূপ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, যেখানে ইসলাম শিক্ষার পাশাপাশি মিশনারিদের তালিম দেওয়ার পর প্রভূত মাসোহারার বিনিময়ে তাদের মুসলিম সমাজের বিশ্বাস বিশুদ্ধীকরণ এবং ইসলামে ধর্মান্তরিত করার নতুন চারণভূমি খোঁজার কাজে লাগানো যাবে।
৩। শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে বিপুল জমিজমা সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় ও ইসলামীয় প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের নামে যে কোনও মূল্যে কিনে রাখা;
৪। মসজিদ, মুসলমান গৃহ ও মুসলমান এলাকায় অস্ত্র নির্মাণ করা ও মজুত রাখা;
৫। ঘন ঘন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমাবেশ আয়োজন করা ও সবরকম ইসলামীয় স্বার্থে প্রতিবাদ প্রদর্শন করে যাওয়া।
৬। মুসলমান রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অর্থ সাহায্য দেওয়া যাতে সবকটি রাজনৈতিক দলে ঢুকে পড়ে তারা তোষামোদির দ্বারা নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করতে এবং প্রতিটি গণমঞ্চ থেকে কাজ করতে পারে;
৭। হিন্দু বুদ্ধিজীবী, জনসেবায় নিযুক্ত লিপিকার ও রাজনীতিকদের ঘুষ দিয়ে বা কিনে নিয়ে ইসলামকে সমর্থন, হিন্দু সংস্কৃতিকে অপমান এবং ইসলামপন্থার বিরোধীদের হত্যা করানো;
৮। হিন্দু সমাজের দুর্বল বিশেষত হরিজনদের ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য অর্থের টোপ দেওয়া।
কৌশলগুলো নতুন নয়। একই কৌশল মুসলিম লীগ অবলম্বন করেছিল ভারত কেটে পাকিস্তান তৈরি করার জন্য। তফাৎ একটাই – তখন ব্রিটিশরা যে মদত দিয়েছিল, সেই সাহায্য এখন আরব দেশগুলো থেকে আসছে। ফলতঃ মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই ইসলামবাদ ভারতে দেশভাগের সময়কার মতোই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এই সমান্তরাল ব্যবস্থা আমাদের থামিয়ে রেখেছে।
অতিরিক্ত অধ্যয়নের জন্য পড়তে পারেন:
Mohammed and the Rise of Islam by D.S. Margoliouth
Muslim Attack on Sikhs and Hindus in the Punjab
1947 by Gurbachan Singh Talib
Hindu Temples: What happened to Them, 2 Volumes
The Calcutta Quran Petition by Chandmal Chopra
Jizayah and the Spread of Islam by Harsh Narain
Muslim Separatism: Causes and Consequences by Sita Ram Goel.
সমস্ত পুস্তকগুলিই ভয়েস অফ ইণ্ডিয়ার দ্বারা প্রকাশিত।
পাদটীকা:
1. দেখুন K.S. Lal, Indian Muslims: Who Are They, Voice of India, New Delhi, 1990.
লেখক: সীতারাম গোয়েল
অনুবাদিকা: শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়