ব্রিগেডে সভা মানেই বড় ব্যাপার। প্রতিটা ব্রিগেড সমাবেশই স্মরণীয় কিছু ফ্রেম রেখে যায়। কিছু ফ্রেম তৈরি হয় যা রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যবাহী।
রবিবাসরীয় ব্রিগেডও ব্যতিক্রম ছিল না। মঞ্চে এক সময়ে দেখা যায় মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী শুভেন্দু অধিকারীর কানে কানে কিছু বলছেন। এমন সব ফ্রেম স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল তৈরি করে। কী বলছিলেন মিঠুন?
শুভেন্দু-মিঠুনের এই ফ্রেম দেখে বিজেপিতেও কানাকানি হয়েছে। মহাগুরু কী এমন বললেন! বিজেপি সূত্রে খবর, দলে ঘরোয়া আড্ডায় শুভেন্দু বলেছেন, সে রকম কিছু না। দাদা বলছিলেন, শুভেন্দু তুমিই পথ দেখিয়েছ। তোমাকে দেখেই অনেকে সাহস পেয়েছে। জানা গিয়েছে, নন্দীগ্রামে প্রচারে যাওয়ার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিজেপিতে নবাগত মহাগুরু।
শুভেন্দু ও মিঠুনের মধ্যে অন্তত একটা ব্যাপারে মতের মিল স্পষ্ট। শুভেন্দু খোলাখুলিই বলছেন, তৃণমূল এখন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হয়ে গেছে। ওখানে পিসি ভাইপো ছাড়া বাকিরা কর্মচারী। আর মিঠুন চক্রবর্তী পষ্টাপষ্টি জানিয়েছেন, তৃণমূলে যোগ দেওয়া বাজে সিদ্ধান্ত ছিল।
মিঠুনের সেই কথা রবিবার তৃণমূলের অনেকের কানেই বাজে ভাবে লেগেছে। কারণ, ভুল সিদ্ধান্ত আর বাজে সিদ্ধান্তর মধ্যে মৌলিক ও গুণগত ফারাক রয়েছে। বাজে মানে একেবারেই খারাপ সিদ্ধান্ত ছিল। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মিঠুন চক্রবর্তীর নন্দীগ্রামে প্রচারে যেতে চাওয়ার ব্যাপারে যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাও কম তাৎপর্যের নয়।
এরও দুটো দিক রয়েছে। এক, শুভেন্দুর হয়ে তথা বিজেপির পক্ষে প্রচার করা। দুই, সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রচার করা। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের প্রার্থী। এক সময়ে ‘বাজে সিদ্ধান্ত’ নিয়ে যাঁর দলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারে নামার ব্যাপারটা মোটেই হাল্কা নয়।
মিঠুন চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ অনেকে বলেন, রাজ্যসভা থেকে তিনি ইস্তফা দেওয়ার পর তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের কেউই যোগাযোগ রাখত না। কলকাতায় চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শুরু করে কোনও অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকাও হয়নি। চলচ্চিত্র উৎসবে যখন শাহরুখ খানকে নিয়ে ‘আদিখ্যেতা’ হয়েছে, তখন বাংলার নিজের ছেলে সেই মঞ্চে মর্যাদা পাননি। অথচ অভিনয় গুণে এঁদের কারও থেকে কম নয় বাংলার একান্ত আপন ‘মিঠুনদা’। চারটি জাতীয় পুরষ্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
রবিবাসরীয় ব্রিগেডে মিঠুন চক্রবর্তীর একটি ডায়লগ গত চব্বিশ ঘন্টায় মহা-হিট। তিনি বলেছিলেন, এ বার তাঁর প্রতিটা সভায় নতুন ডায়লগ হবে। তা হল—‘আমি জলঢোঁড়া নই, বেলেবোড়াও নই, আমি জাত গোখরো। এক ছোবলেই ছবি।’ এখন দেখার নন্দীগ্রামে প্রচারে গিয়েও সেই স্লোগান তিনি দেন কিনা। তাতে শেষমেশ কে ছবি হয়!