লিঙ্গ বৈষম্য ছুঁতে পারেনি তাঁদের। পৃথিবীর সব প্রতিকূলতাকে জয় করে উঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। দেখিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বকে এই পৃথিবীর বর্তমান ভবিষ্যত বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন তাঁরা। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এরকমই পাঁচ নারীর আলোকোজ্জ্বল উপস্থিতির কথা থাকবে এই প্রতিবেদনে।
মাদাম ক্যুরি : মাদাম ক্যুরি বিশ্বের প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। মাদাম ক্যুরি পোল্যান্ডের ওয়ারশতে জন্মগ্রহণ করেন। পরে ফ্রান্সে চলে যান তিনি। বিশ্বের বিজ্ঞানীরা আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ক্যুরিকে। ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তার উপর গবেষণার জন্য তার স্বামী পিয়ের ক্যুরি এবং তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কারক অঁরি বেকেরেলের সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান। ক্যান্সার রোগিদের ওপর রেডিও অ্যাক্টিভিটি নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা অধ্যাপক ছিলেন তিনি।
মাদার টেরেসা : ভারতে এসেছিলেন ১৯২৯ সালে, ১৯ বছর বয়সে। তখন থেকেই নিজের বলে ভেবেছেন এই দেশের মানুষকে। ভারতের অন্যতম আশ্রয় ছিলেন মাদার টেরেসা। বিশ্ব মানবতার মূর্ত প্রতীক হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। দরিদ্র নারায়ণে সেবা থেকে অনাথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটানো, তিনিই ছিলেন শেষ আশ্রয়। কলকাতায় মিশনারিজ অফ চ্যারিটি প্রতিষ্ঠা করে সারা জীবন তিনি কাজ করেছেন। ১৯৭৯ সালে সমাজসেবার জন্য নোবেল সম্মান পান তিনি। গোটা বিশ্বের মানুষ তাঁর ছায়ায় আশ্রয় পেয়েছেন। বলা হয়, মাত্র দুটি জিনিস ছিল তাঁর, একটি ঝুড়ি ও দুটি শাড়ি। এই সম্পদেই বিশ্ববাসীকে আগলে রেখেছিলেন মাদার টেরেসা।
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গল : লেডি উইদ দ্যা ল্যাম্প তিনি। ১৮২০ সালে ইতালিতে জন্ম ফ্লোরেন্সের। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে গিয়েছেন আজীবন। যুদ্ধে আহতদের সেবায় নিয়োজিত প্রাণ ছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। অত্যন্ত ধনী পরিবারের কন্যা হয়েও, যুদ্ধে আহতদের সেবার জন্য নার্সিংকে পেশা করেছিলেন তিনি। ব্রিটিশ সেনা জওয়ানদের সেবায় তাঁর অবদান ইতিহাস মনে রাখবে আজীবন।
রাণী লক্ষ্মীবাই : তিনি মণিকর্ণিকা তাম্বে। তবে গোটা বিশ্বের মানুষ তাঁকে চেনেন ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাই হিসেবে। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের। ঘোড়ার রাশ মুখে টেনে, পিঠে দত্তক শিশুকে বেঁধে নেমেছিলেন ইংরেজ সৈন্যদের বিরুদ্ধে। মেয়েদের নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তাঁদের ঘোড়া চালানো, তরোয়াল চালানোর মত সব ধরণের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি।
সাবিত্রীভাই ফুলে : ভারতের প্রথম প্রজন্মের নারীবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ। মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল খোলেন তিনি। রক্ষণশীল ভারতে তিনি যেভাবে নারী শিক্ষার জন্য লড়াই করেছিলেন, তা মনে রাখবে দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
তাঁকে পূর্ণ সমর্থন করতেন তাঁর স্বামী জ্যোতিরাও ফুলে। বহু মেয়ের চোখে জ্ঞানোর আলো জ্বালিয়েছিলেন সাবিত্রীভাই ফুলে। অথচ খুব একটা উল্লেখিত হয় না তাঁর নাম।