অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (১৯০৩-১৯৭৬) ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সম্পাদক। ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পিতার কর্মস্থল নোয়াখালী শহরে তাঁর জন্ম। আদি নিবাস বর্তমান মাদারীপুর জেলায়। তাঁর পিতা রাজকুমার সেনগুপ্ত ছিলেন আইনজীবী।
অচিন্ত্যকুমারের শৈশব ও বাল্যজীবন কাটে নোয়াখালীতে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাও এখানে সম্পন্ন হয়। ১৯১৬ সালে পিতার মৃত্যুর পর তিনি কলকাতায় অগ্রজ জিতেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের নিকট চলে যান এবং সাউথ সুবার্বন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯২০), সাউথ সুবার্বন কলেজ (বর্তমানে আশুতোষ কলেজ) থেকে আইএ (১৯২২), ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ বি এ (১৯২৪) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ (১৯২৬) ও ল’ (১৯২৯) পাস করেন। ১৯৩১ সালে তিনি অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরে সাবজজ, জেলাজজ ও ল’ কমিশনের স্পেশাল অফিসার পদে উন্নীত হয়ে ১৯৬০ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় ‘নীহারিকা দেবী’ ছদ্মনামে অচিন্ত্যকুমারের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পরে কল্লোল যুগের যেসব লেখক সাহিত্যজগতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেন, তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তিনি উপন্যাস ও ছোটগল্প রচনায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। উপন্যাসের আঙ্গিকে আবেগমথিত ভাষায় ধর্মগুরুদের জীবনী লিখেও তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস বেদে (১৯২৮)। এটি আঙ্গিক, রচনাভঙ্গি ও বিষয়বিন্যাসে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট উপন্যাস হিসেবে পরিগণিত। তাঁর লেখায় আধুনিকতা অতি প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে। রোমান্টিকতা ও গণচেতনা উভয়ই তাঁর কবিতার ভাববস্ত্ত। ছোটগল্প রচনায়ও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। পরিচিতজনদের জীবনকাহিনী তাঁর গল্পে নিপুণভাবে অঙ্কিত হয়েছে। খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবনালেখ্য তাঁর রচনার মুখ্য বিষয়বস্ত্ত।
অচিন্ত্যকুমারের গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় সত্তর। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- উপন্যাস: কাকজ্যোৎস্না (১৯৩১), বিবাহের চেয়ে বড় (১৯৩১), প্রাচীর ও প্রান্তর (১৯৩২), প্রথম কদমফুল (১৯৬১); কাব্যগ্রন্থ: অমাবস্যা (১৯৩০), আমরা (১৯৩২), প্রিয়া ও পৃথিবী (১৯৩৩), নীল আকাশ (১৯৪৯), পূর্ব-পশ্চিম (১৯৬৯), উত্তরায়ণ (১৯৭৪); জীবনীগ্রন্থ: পরম পুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ (চার খন্ড, ১৯৫১-৫৬), বীরেশ্বর বিবেকানন্দ (তিন খন্ড, ১৯৫৮-৬৯); নাটক: একাঙ্ক নাট্য-সংকলন (১৯৪৫); গল্পগ্রন্থ: টুটাফুটা (১৯২৮), কাঠ-খড় কেরোসিন (১৯৪৫), চাষাভূষা (১৯৪৭), একরাত্রি (১৯৬১) ইত্যাদি।
অচিন্ত্যকুমার ১৯২৫ সালে কল্লোল পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নেন। তিনি বিচিত্রায়ও কিছুদিন কাজ করেন। তাঁর স্মৃতিচারণমূলক রচনা কল্লোল যুগ (১৯৫০) পাঠক-মহলে বেশ সাড়া জাগায়। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি জগত্তারিণী পুরস্কার, রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) ও শরৎচন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) লাভ করেন।
১৯৭৬ সালের ২৯ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।