একদা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ ছিল বামফ্রন্ট সরকারের অতি প্রিয় রাজনৈতিক লাইন। এখন তৃণমূল সরকারেরও তাই।
কিন্তু সোমবার সাহাগঞ্জের মাঠে সভা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই অভিযোগকে কার্যত ভিত্তিহীন বলেই দাবি করলেন। উল্টে তাঁর দাবি, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার স্রেফ রাজনৈতিক কারণে উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আয়ুষ্মান যোজনায় বাধা, কৃষকদের ভাতা পেতে বাধা, এমনকি বাংলার মানুষ যাতে শুদ্ধ পানীয় জল পেতে পারে, সে জন্য কেন্দ্রের সরকার ১৭০০ কোটি টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে ১১০০ কোটি টাকাই খরচ করতে পারেনি নবান্ন। তা নিয়ে চেপে বসে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানীয় জলের সঙ্কট বাংলাতেও রয়েছে। সে জন্য বাংলার মা বোনেদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। দূর থেকে খাবার জল বয়ে আনতে হয়। তাই কেন্দ্রের সরকার জল জীবন মিশনের আওতায় বাংলার প্রতিটি বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছিল।
মোদীর কথায়, শুনলেও অবাক হতে হয় যে বাংলার গ্রামে গঞ্জে অন্তত দেড় থেকে দুই কোটি পরিবার পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল পেত না। মাত্র ২ লক্ষ পরিবার পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ জল পেত। তাই কেন্দ্র সরকার স্থির করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু এখানকার সরকারের পিছনে লেগে থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৯ লক্ষ বাড়িতে পাইপলাইনে জল পাঠানো সম্ভব হয়েছে। ১১০০ কোটি টাকা খরচই করতে পারেনি রাজ্য সরকার।
বাংলা নদী মাতৃক রাজ্য। আপাত ধারনা হল এখানে শুদ্ধ পানীয় জলের অভাব হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু বাস্তব হল, দুই ২৪ পরগনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ সহ বিস্তীর্ণ এলাকার জলে আর্সেনিক ও ফ্লোরাইড রয়েছে। তা ছাড়া চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুরের বহু এলাকার জল লবণাক্ত। সেই জল স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই গভীর নলকূপ থেকে জল আনতে বহু পরিবারের সারাদিনে অনেকটা সময় চলে যায়। প্রধানমন্ত্রী সেই সমস্যার কথাই এদিন বোঝাতে চেয়েছেন।
বাংলায় সেই সমস্যার মোকাবিলায় কেন্দ্রের সরকারের হস্তক্ষেপেই এশিয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ঋণে বাঁকুড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট গড়ে ওঠার কথা। তার পর সেই জলই বাড়ি বাড়ি পাইপলাইনে সরবরাহ করার প্রস্তাব রয়েছে। পাঁচ বছর আগে কাজ শুরু করেও সেই প্রকল্পের বাস্তবায়ণ এখনও পর্যন্ত হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, কেন্দ্র টাকা পাঠানো সত্ত্বেও প্রকল্প রূপায়িত না হওয়ার দায় কার? এতে কাদের দুর্ভোগ হচ্ছে? যারা
এ জন্য দায়ী তাদের কি মাফ করা উচিত?
এর আগে শিল্প শহর হলদিয়ায় সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিনের সভা ও আজকের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বারবার একটা কথাই বোঝাতে চান যে বাম ও তৃণমূল জমানায় বাংলা ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে। শাসক দলের নেতাদের সম্পদ ও সম্নান বেড়েছে, কিন্তু গরিব আরও গরিব হয়েছে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বাংলা যে কতটা পিছিয়ে রয়েছে তাও বোঝাতে চান নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে বলেন, বিশ্বে উন্নত ও উন্নতিশীল দেশগুলিতে একটি বিষয় খুব কমন দেখা যায়। তা হলে আধুনিক পরিকাঠামোর নির্মাণ। আধুনিক পরিকাঠামোর নির্মাণ হলে তবেই বিনিয়োগ আসবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাতেও আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণ অনেক আগেই করা উচিত ছিল। দেরি হয়ে গেছে। তবে আর এক মুহূর্তও দেরি করা যাবে না।
বাংলায় বিধানসভা ভোট আসন্ন। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার কথা। তার আগে প্রধানমন্ত্রী হয়তো আরও একবার বাংলায় আসবেন। তবে তাঁর পরবর্তী সফরের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।