‘পাকিস্তানে বাংলা’ নিয়ে কাল একটা তথ্য পরিবেশন করেছি। সে ব্যাপারে হোয়াটসঅ্যাপেএকটু বিস্তারিত জানার আগ্রহ প্রকাশ করে মুম্বাইনিবাসী আমার খুড়তুতো বোন অজন্তা (শঙ্করী) পুভাইয়া। খোঁজ করতে গিয়ে একটা অজানা বিষয় জানলাম। পাক চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা ছিলেন ঝর্ণা বসাক। আগ্রহীদের সঙ্গে তাঁর কথা ভাগ করে নিচ্ছি।
পাক ইতিহাসে বিখ্যাত ২৭ জন বাঙালির নাম আছে ইন্টারনেটে। তাঁদের একজন রবীন ঘোষ (১৯৩৯-২০১৬)। জন্ম ইরাকের বাগদাদে। মৃত্যু ঢাকায়। লাহোরের ছবিপাড়াকে বলে ললিউড। ১৯৬১ থেকে ’৮৬— প্রায় ২৫ বছর তিনি ছিলেন ললিউডের বিখ্যাত সুরকার, গীতিকার ও গায়ক। ১৯৬৬-তে তিনি বিয়ে করেন ঝর্ণাকে। ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ঝর্ণা চলে যান পশ্চিম পাকিস্তানে।
ঝর্ণার জন্ম ১৯৪২-এ, ঢাকায়। বাবা ননী বসাক ছিলেন ঢাকার রেফারি। দুই বোন। অপর বোন ভাল গান গাইত। আর ঝর্ণা নাচে দক্ষ ছিল। নাচের সুবাদেই অভিনয়ে সুযোগ। অভিনয়জগতে পরিচিত হন শবনম নামে। ২৮ বছরে ১৭০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে ১৫২টি উর্দূ, ১৪টি বাংলা ও ৪টি পঞ্জাবী। মঞ্চ এবং সেলুলয়েডে উজ্জ্বল তারকা ছিলেন ৬০, ৭০ ও ৮০-র দশকে। পাকিস্তানে অভিনয়জগতের অত্যন্ত মর্যাদার স্বীকৃতি নাইজার অ্যাওয়ার্ড পান ১৩ বার। এটা একটা রেকর্ড হয়ে আছে।
১৯৪৭ সালে পাক নাগরিকত্ব নেন ঝর্ণা। পাঁচ দশক বাদে, ‘৯৭-তে নেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। কতটা জনপ্রিয় ছিলেন ঝর্ণা, তা বোঝা যায় ’৭১-এর পর তাঁর বাংলাদেশে বেড়াতে আসার ইচ্ছে প্রকাশের পর। ললিউড থেকে পাক সরকারকে বলা হয় তাঁকে ভিসা না দিতে। কারণ, জন্মভূমিতে গেলে আর তিনি ফিরবেন না। সরকার দু’বছর সেই ভিসার আবেদন আটকে রেখেছিল। অনেক অনুরোধ করে, ফিরে আসার মুচলেকা দিয়ে ভিসা পেয়েছিলেন ঝর্ণা। ১৯৮৭ থেকে কিছুকাল লন্ডনে থাকেন। পরে বাংলাদেশে। ১৯৯৮-তে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেন।
পাকিস্তান ত্যাগের ১৩ বছর বাদে, ২০১২ সালে স্বামী রবীন ঘোষের সঙ্গে ঝর্ণা পাকিস্তান গেলে অবিস্মরণীয় সম্বর্ধনা পান। পাক সরকার ওঁদের আজীবন কীর্তির স্বীকৃতি জানায়। বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী ইয়ুসুফ রাজা গিলানী। ২০১৬-তে রবীন ঘোষ মারা যান। ছেলে রনি বিদেশে থাকেন। একাকীত্ব গ্রাস করেছিল ঝর্ণাকে। পাক পরিচালক আলি তাহের এমন একটা সময়ে তাঁকে ফের অভিনয়ে আসার আমন্ত্রণ জানান। ১০০ এপিসোডের ‘মোহিনী ম্যানসন কি সিন্ডেরেলা‘-তে অভিনয় করেন। চরিত্রের নামও ছিল ঝর্ণা। ৭৮ বছর বয়সে, ২০২০-তে মারা যান। বেঁচে থাকলে আগামী ১৭ অগস্ট ৮০-তে পা দিতেন।