অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, রাজনাথ প্রতিরক্ষায়, বিদেশমন্ত্রী হলেন জয়শঙ্কর

জল্পনার অবসান। অমিত শক্তিধারী হলেন অমিত অনিলচন্দ্র শাহ। বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যায় দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তার পর তাঁর অত্যন্ত আস্থাভাজন অমিত শাহকে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করলেন তিনি।

সর্বভারতীয় রাজনীতে গত পাঁচ বছর ধরে স্পষ্ট ধারনা ছিল, দেশ চালাচ্ছেন দু’জন। মোদী এবং অমিত শাহ। সেই কথাটাই আরও স্পষ্ট করে এ বার যেন পাথরে খোদাই করে দেওয়া হল।

মোদী সরকারের প্রথম জমানায় কেন্দ্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন রাজনাথ সিং। দুনিয়া জানে, রাজনাথ সিংয়ের খুঁটির জোর কোথায়? তা হল নাগপুর। আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারের সদর কার্যালয়। কিন্তু মন্ত্রিসভার দফতর বন্টনে স্পষ্ট হয়ে গেল, মোদী-শাহ নামক ক্ষমতার নিউক্লিয়াসের কাছে সঙ্ঘের শক্তিও কমজোরি হল। রাজনাথ সিংকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে সরিয়ে মোদী পাঠিয়ে দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রকে। আর অরুণ জেটলি মন্ত্রিসভার দায়িত্ব থেকে অব্যহতি চেয়ে নেওয়ায় অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হল নির্মলা সীতারমনকে। আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন নির্মলা।

প্রাক্তন বিদেশ সচিব জয়শঙ্কর সুব্রহ্মণ্যম বিষ্যুদবার শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, কী হতে চলেছে। হলও তাই। তাঁর পছন্দের কূটনীতিককে মন্ত্রিসভায় এনে বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্ব দিলেন নরেন্দ্র মোদী। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ঠিক যে ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর মনমোহন সিংহকে মন্ত্রিসভায় এনে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন নরসিংহ রাও।

এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব ও গুরুত্বের বিশেষ ফারাক হল না নিতিন গডকড়ীর। তাঁকে সড়ক পরিবহণ ও জাতীয় সড়ক দফতরের মন্ত্রী করলেন মোদী। সেই সঙ্গে দেওয়া হল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের দায়িত্ব।

অন্যদিকে অমেঠীতে রাহুল গান্ধীকে পরাস্ত করার জন্য সামান্য হলেও পুরস্কার পেলেন স্মৃতি ইরানি। তিনি কেন্দ্রে বস্ত্রমন্ত্রী ছিলেন। বস্ত্রমন্ত্রকের পাশাপাশি তাঁকে মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হল। তবে এর পরেও স্মৃতি যে তাঁর হৃত গৌরব ফিরে পেলেন না তাও স্পষ্ট। কারণ, চোদ্দর ভোটে জিতে সরকার গড়ার পর স্মৃতিকে কেন্দ্রে মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী করেছিলেন মোদী। পরে বিতর্কের কারণে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সেই উচ্চতা আপাতত অধরাই থাকল স্মৃতি জুবিন ইরানির।
তবে মন্ত্রিসভায় অবশ্যই ওজন বাড়ল পীযূষ গোয়েলের। আগে রেলমন্ত্রী ছিলেন তিনি। কিন্তু এ বার পীযূষকে রেলমন্ত্রকের পাশাপাশি শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকেরও দায়িত্ব দিলেন মোদী।

আবার মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে আনা হল উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমেশ নিশঙ্ক পোখরিয়ালকে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দায়িত্বে এর আগেও ছিলেন হর্ষবর্ধন। তাঁর কাছে খুশি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দফতর তাই বদল করা হল না।

অন্যদিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হল প্রকাশ জাভরেকরকে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের দায়িত্বও তাঁকে দিয়েছেন মোদী।

এ ছাড়াও বাকিরা কে কী পদ পেলেন দেখে নিন:

রাসায়নিক ও সার মন্ত্রী করা হলো সদানন্দ গৌড়াকে।

ক্রেতা সুরক্ষা, খাদ্য ও গণবন্টন মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাম বিলাস পাসোয়ানকে।

কৃষি, কৃষক উন্নয়ন, গ্রামীন উন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দফতরের মন্ত্রী করা হয়েছে নরেন্দ্র সিং তোমরকে।

আইন, যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি দফতরের দায়িত্ব আগের মোদী সরকারেও ছিল রবিশঙ্কর প্রসাদের হাতে। তাঁর হাতেই ফের দেওয়া হলো এই দায়িত্ব।

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী হলেন শিরোমণি অকালি দল নেত্রী হরসিমরত কউর বাদল।

থাওয়ার চন্দ গেহলোটকে করা হলো সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রী।

আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্জুন মুন্ডাকে।

পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ও স্টিলমন্ত্রী করা হয়েছে ধর্মেন্দ্র প্রধানকে।

সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী করা হয়েছে মুক্তার আব্বাস নকভিকে।

কয়লা, খনিজ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রহ্লাদ জোশীর হাতে।

ভারী শিল্প মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হলো অরবিন্দ সাওয়ান্তকে।

পশুপালন, মৎস্য ও দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গিরিরাজ সিংয়ের হাতে।

জলসম্পদ মন্ত্রকের মন্ত্রী করা হয়েছে গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতকে।

দক্ষতা ও উদ্যোগ বৃদ্ধির দফতরের মন্ত্রী করা হয়েছে মহেন্দ্র নাথ পান্ডেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.