শুভেন্দুর দায়িত্ব বাড়িয়ে ফাঁপড়ে মমতা, বিজেপি মুখী দলের বড় অংশ

দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে মেদিনীপুরের শাসকদলের রাজনীতি! অবশ্যই লোকসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরবর্তী পরিস্থিতিতে। বর্তমানে তিন জেলায় বিভাজিত হলেও, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে ঝাড়গ্রাম এলাকাকে মেদিনীপুরের অংশ হিসেবেই দেখে এই অঞ্চলের মানুষ।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে কাঁথি, তমলুক, ঘাটাল, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম শুধুমাত্র পাঁচটি লোকসভার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, এর ব্যাপ্তি অনেকখানি। এবারের লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুরে গেরুয়া রঙের পদ্ম ফুল ফুটেছে। কাঁথি ও তমলুকে অধিকারী পরিবারের জয় অব্যাহত থাকলেও, প্রভাব খানিকটা হলেও ম্লান হয়েছে। আর ঘাটালে অভিনেতা দেব কেশপুর বিধানসভায় ভর করে আবারও সংসদে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছেন। ভাইপো অভিষেককে বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া আসনের দায়িত্ব দিয়ে ডুবেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুরে দায়িত্ব নিয়ে দলকে ডুবিয়েছেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাই মুর্শিদাবাদের দুটি আসন জিতে নিজের মুখরক্ষা করা পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে গোটা জঙ্গলমহলের দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা। আর এখানেই নড়ে গিয়েছে শাসকদলের অন্দরমহলের রাজনীতি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অধিকারী পরিবারের দাপটে কোণঠাসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথমদিনের তৃণমূল করা নেতাকর্মীরা। যার মধ্যে রয়েছেন রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি, পটাশপুরের বিধায়ক জ্যোতির্ময় কর, চন্ডিপুরের বিধায়ক অমিয় ভট্টাচার্য্য মতো নেতারা। কিন্তু নেত্রীর নির্দেশ মান্য করেই এরা শুভেন্দু অধিকারীর সবরকম দাপট সহ্য করে দলে রয়েছেন। কিন্তু পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় এমন কিছু পুরোনো দিনের তৃণমূল নেতাকর্মীরা রয়েছেন, যারা আর অধিকারী পরিবারের কাছে বশ্যতা স্বীকার করতে নারাজ। সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে মাত্র আড়াই বছর আগে তৃণমূল কংগ্রেসে এসে রাজ্যসভার সাংসদ বনে যাওয়া মানস ভূঁইয়ার সক্রিয় হয়ে ওঠার বিষয়টিও।

জন্মসূত্রে মানস মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র হলেও, শাসকদলের অন্দরমহলে তাঁর মূল্যায়ন তৎকাল তৃণমূলী হিসেবেই! এমন “অসহ্য” কার্যকলাপ দেখেও, এবারের লোকসভা ভোটে দলনেত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রাণপাত করে খেটেছেন দলের হয়ে। কোনও ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন, কোন ক্ষেত্রে হননি। কিন্তু লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে ভরাডুবি হতেই দায়িত্ব পুরোপুরি শুভেন্দুর হাতে তুলে দেওয়ার নেত্রীর সিদ্ধান্তকে কোনওভাবেই মন থেকে মানতে পারছেন না পুরনো দিনের তৃণমূল কর্মীরা। এবার একটা হেস্তনেস্ত চাইছেন। কারণ পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন জিতে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। শাসকদলে ভাঙন ধরিয়ে সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি চাইছে গেরুয়া থিংক ট্যাংক। তাদেরও দলে কর্মী দরকার। এটা ভালই জানেন মেদিনীপুর এলাকার আদি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাই তারাও শিবির বদলের কথা ভাবনা চিন্তা করছেন।

সূত্রের খবর, কয়েকপ্রস্থ কথাও হয়েছে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়ের সঙ্গে। তবে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার পক্ষপাতী তারা। শেষ পর্যন্ত নেত্রী অধিকারী পরিবারের দাপটকে মাথায় রেখে শুভেন্দুর হাতেই যাবতীয় দায়িত্ব বহাল রাখেন, নাকি পুরোনো কর্মীদের কথা মাথায় রেখে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেন। সেদিকেই তাকিয়ে মেদিনীপুর অঞ্চলের আদি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নচেৎ গন্তব্য গেরুয়া ঝান্ডা!

নীল রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.