ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে আমেরিকার অন্যতম বড় অংশীদারই হল ভারত। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে ভারতের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ইতিমধ্যেই বাইডেনের সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ সময় কথাবার্তা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। দুই দেশই তাদের যৌথ প্রাধান্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড মহামারীর মোকাবিলা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সুরক্ষা সম্পর্কিত একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে মোদী-বাইডেনের। আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি মেনেই দুই দেশ তাদের নিরাপত্তা ও বর্হিবিশ্বের সঙ্গে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে বলে জানিয়েছে। বাইডেন বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চলের সুরক্ষা বড় ব্যাপার। সে ব্যাপারেও দুই দেশ যৌথভাবে কাজ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক স্তরে বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছিলেন মোদী ও ট্রাম্প। বারাক ওবামার আমলেও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আমেরিকার। সেই গুরুত্ব আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বাইডেন প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাসবাদ, দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি-সহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সমস্যা মোকাবিলা করতে চায় দু’দেশই। এ নিয়ে ভারত ও আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গিতে যথেষ্ট মিল রয়েছে। ফলে নতুন প্রক্রিয়ায় কূটনৈতিক ও কৌশলগত আলোচনায় বসতে চায় দু’দেশের সরকার।
ভারত মহাসাগরের সুবিশাল জলসীমায় কার আধিপত্য থাকবে, তা নিয়ে এশিয়ার দুই বড় শক্তি চিন এবং ভারতের মধ্যে টানাপড়েন ক্রমশ বাড়ছে। সামরিক বা ভূকৌশলগত কারণে তো বটেই, বাণিজ্যিক কারণেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারত মহাসাগরীয় আন্তর্জাতিক জলপথ। নিজেদের নৌসেনার শক্তি এবং রণতরীর সংখ্যা দ্রুত বাড়িয়ে, ভারত মহাসাগরীয় এলাকার নানা অংশে বন্দর তৈরি করে, সামরিক টহলদারি বাড়িয়ে চিন গোটা জলপথে একাধিপত্য কায়েম করতে চাইছে বলে ভারতীয় কূটনীতিকদের মত। ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর বা প্যাসিফিক ওশেন পর্যন্ত এলাকাকে ইন্দো-প্যাসিফিক নামে ডাকা হয়। এই এলাকার ভূ-রাজনৈতিক গঠন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক দিক থেকেও এই এলাকার গুরুত্ব রয়েছে। তাই চিনকে রুখতে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে এই সুবিশাল জলভাগে একটি সুসংহত সামরিক সমঝোতা গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে আমেরিকা। তৈর হয়েছে ভারত-আমেরিকা-জাপান ও অস্ট্রেলিয়া এই চার শক্তির কোয়াড। আমেরিকা বলছে, এই জোটে আমেরিকার সবচেয়ে ভরসার যোগ্যই হল ভারত। আগামী দিকে এই দুই দেশ পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার দিককে এক অন্য সীমায় নিয়ে যাবে।