সালটা ২০০৯ ! লোকসভা ভোটপর্ব মিটে যাওয়ার কয়েক মাস পরে বিধানসভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তৎকালীন বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতক গোলাম মহম্মদ মসীহ মন্তব্য করেছিলেন, “আমরা সরকারে আছি, কিন্তু ক্ষমতায় নেই!” তখনও বিধানসভায় ২৩৩ জন বিধায়কের সমর্থনে ক্ষমতায় রয়েছে বামফ্রন্ট। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তা সত্ত্বেও ভাতারের সিপিএম বিধায়ক গোলাম মহম্মদ মসীহর এই উক্তিটি সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে এসেছিল। কারণ, সেই বছর লোকসভা ভোটে ১৯টি আসন পেয়ে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন অপ্রতিরোধ্য বাংলার রাজনীতিতে।
বাংলার মসনদে তাঁর অভিষেক যেন কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষাই মনে হচ্ছিল। মাত্র কয়েকদিন আগে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট সমাপ্ত হয়েছে। মাঝের দশটা বছরে কলকাতার আদি গঙ্গা দিয়ে কয়েক হাজার কোটি গ্যালন “দূষিত জল” প্রবাহিত হয়েছে। এই ১০ বছরের সময়কালে সিপিএম ক্ষমতাচ্যুত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয়বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফলাফল যেন তাঁরও বিদায়ের কাউন্ট ডাউন শুরু ইঙ্গিত দিয়েছে, বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গত বৃহস্পতিবার লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো দলের সাংগঠনিক ও রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ওলট পালট করা বদল এনেছেন। তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধরা পড়ছে অস্থিরতা। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট পেয়েছে চার দিনে চারজন কমিশনার। হাওড়াতে তিন দিনে তিন জন পুলিশ কমিশনার বদলি হয়েছেন। নাটককার অর্পিতা ঘোষকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি করেছেন মমতা। সেভাবেই কোনওদিন রাজনীতি না করা ঝাড়গ্রামের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী বীরবাহা সোরেন হয়েছেন ওই জেলার জোড়া ফুল শিবিরের সভাপতি।
এমন উদাহরণ থেকেই বোঝা যায় প্রশাসন ও দল নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার কথা। লোকসভা ভোটে বিজেপির ১৮টি আসনে জয় যেন মুখ্যমন্ত্রীকে কিছুটা হলেও বিচলিত করে তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এমন পরিস্থিতিতে মিল খুঁজে পেয়েছেন ২০০৯-১১ সময়কালে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অবস্থার। যখন পুলিশ প্রশাসন থেকে আমলা কোনও ক্ষেত্রেই তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ফলে জঙ্গলমহলে বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল মাওবাদীদের। আর পাহাড়ে আধিপত্য বিমল গুরুং এন্ড কোম্পানির। বর্তমানে সেভাবেই মাথাচাড়া দিয়েছে কোচবিহারের কামতাপুরী পিপলস্ পার্টি! হাতের বাইরে চলে গিয়েছে দলীয় বিধায়ক, কাউন্সিলর তথা সাংগঠনিক নেতৃত্ব। বেলাগাম হচ্ছে অটো,টোটো,ভ্যান, রিক্সা, হকার ইত্যাদি ইউনিয়নগুলি। বীতশ্রদ্ধ রাজ্যের আইনজীবী তথা সরকারী কর্মচারীরা।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, “মমতা সরকারে আছেন, কিন্তু ক্ষমতায় নেই!”