পশ্চিমবঙ্গে আসল পরিবর্তনের ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । রবিবার হলদিয়ার জনসভায় মরিচঝাঁপি থেকে নন্দীগ্রাম, কৃষক বঞ্চনা, রাজ্যের পিছিয়ে পড়া সহ একের পর এক বিষয় তুলে রাজ্য সরকার ও রাজ্যের শাসক দলকে তুলোধোনা করেন প্রধানমন্ত্রী । এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীকে আক্রমণ করেন তিনি বলেন, তৃণমূল অনেক ‘ফাউল’ করেছে, মমতাদের লাল কার্ড দেখাবে বাংলা । এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি বামফ্রন্টকেও আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদী ।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে চলতি বছর প্রথম রাজনৈতিক সভা থেকে কেন্দ্র রাজ্যের জন্য কী কী করছে তার খতিয়ান তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘বাংলার উন্নয়ন কলকাতায় মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলছে। এবারের বাজেটে এই প্রকল্পে আরও গতি দিয়েছে। এবার বাজেটে পশ্চিমবঙ্গে হাইওয়ে তৈরির জন্য টাকা ঢালা হয়েছে। গতবারের তুলনায় রেলওয়েতে ২৫ শতাংশ বেশি খরচ করা হবে।’ একইসঙ্গে মেদিনীপুরের মত্স্যজীবী, চা-বাগান শ্রমিকদেরও বার্তা দিলেন মোদী।
এরপরই তিনি প্রশ্ন তোলেন বাংলা কেন পিছিয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আমি এবার পশ্চিমবঙ্গে এসে একটা প্রশ্ন করতে চাই। পরাধীনতার সময় দেশের মধ্যে সবথেকে উন্নত জায়গার মধ্যে অন্যতম ছিল পশ্চিমবঙ্গ। পরিকাঠামো, বাণিজ্যের নিরিখে সারাদেশে বিশেষ ছিল পশ্চিমবঙ্গের। আগে বাংলা থেকে যাঁরা শিক্ষা নিয়ে বেরোতেন, তাঁদের বিশেষ সম্মান ছিল। এখনও আছে, সেই আগের জন্য। বাংলা কেন পিছিয়ে পড়েছে? আগে বাংলার যেমন উন্নয়ন হত, গত দশকে তা পিছিয়ে পড়েছে। গত ১০ বছরে বাংলার শিল্পের কী অবস্থা হয়েছে? পশ্চিমবঙ্গের এরকম অবস্থার সবথেকে কারণ এখানকার রাজনীতি।
এরপরই তিনি সরাসরি তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে বলেন, ২০১১ সালে মমতাদিদি বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর সেই আহ্বানের ফলে সারাদেশের নজর বাংলার দিকে ছিল। কিন্তু তাঁর থেকে যা আশা ছিল, তা তো মেলেনি। উলটে নির্মমতা বেড়েছে। মমতার আশা ছিল, ১০ বছরে নির্মমতার শিকার হয়েছে বাংলা।
তাঁর ভাষণে উঠে আসে মরিচঝাঁপি, নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ । এদিন মরিচঝাঁপি, নন্দীগ্রাম থেকে শুরু করে চা বাগান ইস্যু তুলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, দিদিকে নিজের অধিকার ‘ভারতমাতা কী জয়’-এর ধ্বনি দিলেই রেগে যান দিদি। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে যাঁরা বিষ ঢেলে যাচ্ছেন, তাঁদের বিষয়ে তো কোনও কথাই বলছেন না। চা-বাগান, যোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তা নিয়ে দিদির মুখে কিছু শুনেছেন! মা-মাটি-মানুষের স্লোগান দেওয়া লোকেরা আজ ভারতমাতার জন্য স্বর উঁচু করতে পারছেন না। সাহস করতে পারছেন না। মরিচঝাঁপির গণহত্যা হয়েছিল। নন্দীগ্রামের ঘটনায় যাঁরা দোষী ছিল, তাঁরা কেন তৃণমূলের দলে এখন? গরিবরা কি শুধু ভোট নেওয়ার জন্য?
এদিন কৃষক ইস্যুতেও মমতাকে আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদী । তিনি বলেন, আমার অত্যন্ত খারাপ লাগে যে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা লাখ লাখ টাকা পাননি। করোনাভাইরাসের সময় লাখ লাখ-কোটি কোটি দেওয়া হয়েছে। দেশের ১০ কোটি ছোটো কৃষক সেই টাকা পেয়েছেন। তাতে পশ্চিমবঙ্গের লাখ-লাখ পরিবার থাকতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের সরকারের আপত্তিতে তা হয়নি। এখন কৃষকরা চেপে ধরেছেন বলে বাধ্য হয়ে এখন শুধু দেখানো সম্মতি দিয়েছে মমতা সরকার।
সেই সঙ্গে এবিষয় তিনি হলদিয়ার সভা থেকে প্রতিশ্রুতিও দেন। বলেন, রাজ্যে বিজেপি ক্ষ্মতায় এলে বাংলার কৃষকদের যা টাকা দেওয়া হয়নি, তা দেবে বিজেপি । এবিষয়ে প্রথম বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া বলে জানান মোদী । তিনি বলেন, কৃষকদের নামে কে রাজনীতির রুটি সেঁকছেন আর কে কৃষকদের যাবতীয় সমস্যা দূর করার চেষ্টা করছেন, তা গত বছর ছ’বছর ধরে দেখে আসছে দেশ। এই নির্বাচনে যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে, তা বাংলার মানুষরা ঠিক করে ফেলেছেন। আমি বলে যাচ্ছি, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সম্মান নিধি প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত নেবে। আর এতদিন যে টাকা পাননি রাজ্যের কৃষকরা, তাও দেওয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গে আসল পরিবর্তনের ডাক দিয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে আসল পরিবর্তন হবে। পরিবর্তন আদতে কী হয়, তা দেখাবে বিজেপি সরকার। সেই প্রমাণ তো পাচ্ছে ত্রিপুরা। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সপ্তম বেতন কমিশন লাগু হয়েছে। এখানে এখনও সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর হয়নি। এমনকী আমায় তো বলেছে যে এখানকার কর্মচারীরা সময় মতো বেতনও পান না। বাংলার মানুষ তো ফুটবল ভালোবাসেন। তৃণমূল অনেক ‘ফাউল’ করেছে, খুব শীঘ্রই বাংলা তৃণমূলকে লাল কার্ড দেখাবে।
এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি বামফ্রন্টকেও আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদী । তিনি বলেন, বাংলায় আমাদের লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। কিন্তু ওদের লুকিয়ে থাকা বন্ধুদের থেকেও সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু ম্যাচ-ফিক্সিং হয় শুনেছেন তো। বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেস মিলে রাজনীতির পর্দার পিছনে ম্যাচ ফিক্সিং করছে। বাংলায় হাত মিলিয়ে আছে বাম-তৃণমূল। তাই বাম-কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানেই তৃণমূলের সুবিধা। তাই সতর্ক থাকতে হবে। অন্যদেরও সতর্ক করতে হবে।