শনিবার কাঁথিতে সভা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এ বার মেদিনীপুর থেকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে প্রার্থী হচ্ছেন। অনেকের মতে, তার প্রভাবই যাতে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে পড়ে সে জন্য এ কথা বলেছেন অভিষেক।
সে যাক। সেই মেদিনীপুরের মানুষের জন্য রবিবার প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কৌতূহল হল, ওই মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন কি?
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় শনিবার জানিয়েছে, ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে হলদিয়ার রানীচকে রেললাইনের ওপর ৪ লেনের উড়ালপুলটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া ১১০০ কোটি টাকা খরচ করে এলপিজি ইমপোর্ট টার্মিনাল তৈরি হয়েছে। যা দিয়ে মেদিনীপুর তো বটেই বাংলায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গ্যাস সরবরাহ করা যাবে।
অর্থাৎ পুরোপুরি বাংলার বিষয়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠান মঞ্চে থাকবেন কিনা তা অবশ্যই আগ্রহের বিষয়। এ ব্যাপারে নবান্নের তরফে শনিবারও স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি।
এর আগে নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী এক মঞ্চে ছিলেন। সেদিন হুলস্থূল হয়েছিল, তা সবাই দেখেছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকলে, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান যে ফের উঠবে না তার নিশ্চয়তাও নেই।
তা হলে?
নবান্নের একটি সূত্রের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তে অন্য কোনও মন্ত্রী রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থাকতে পারেন ওই মঞ্চে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান রাজ্য সরকারের কেউ না থাকলে তা নিয়েও সমালোচনা হতে পারে বা প্রশ্ন উঠতে পারে।
আবার ঘরোয়া আলোচনায় এক নেতা বলেন, কেন্দ্রের সরকার ও বিজেপি এমন ভাবে অনুষ্ঠান সাজিয়েছে যাতে মুখ্যমন্ত্রী সেখানে না যান।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি অনুষ্ঠানের আগে রাজনৈতিক সভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলার সরকারকে রাজনৈতিক ভাবে আক্রমণ করার পর তাঁর সরকারি মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী থাকা সম্ভব কি! তা ছাড়া সরকারি অনুষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক আক্রমণের জবাবও দেওয়া যাবে না।
রবিবার কলকাতায় আসার আগে আজ শনিবার সন্ধ্যায় বাংলায় টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে তিনি লিখেছেন,“আগামীকাল সন্ধ্যায়, আমি পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ায় থাকব। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে, বিপিসিএল নির্মিত এলপিজি আমদানি টার্মিনালটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করব। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উর্জা গঙ্গা প্রকল্পের অন্তর্গত ধোবি-দুর্গাপুর প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন বিভাগ জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করব।”
ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড এলপিজি ইমপোর্ট টার্মিনালটি তৈরি করেছে। ১১০০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি এই টার্মিনালের বছরে ১০ লক্ষ মেট্রিক টন রান্নার গ্যাস সরবরাহ করার ক্ষমতা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব ও উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ক্রমবর্ধমান এলপিজি-র চাহিদা মেটাতে এবং প্রত্যেক বাড়িতে স্বচ্ছ রান্নার গ্যাস সরবরাহের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে তা এর ফলে বাস্তবায়িত হবে বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে শনিবার আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ধোবি-দুর্গাপুর প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপ লাইন সেকশন জাতির উদ্দেশে উৎর্সগ করবেন। ৩৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপ লাইন প্রধানমন্ত্রী উর্জা গঙ্গা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এক দেশ এক গ্যাস গ্রীড প্রকল্পের বাস্তবায়ণে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি এই পাইপ লাইন দিয়ে দুর্গাপুরের ম্যাট্রিক্স সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা ছাড়াও ঝাড়খন্ডের সিন্ধ্রিতে এইচইউআরএল সার কারখানার পুনরুজ্জীবন ঘটানো হবে। এছাড়াও শিল্পসংস্থা, বাণিজ্যিক সংস্থা ও অটোমোবাইল ক্ষেত্রের গ্যাসের চাহিদা মেটানো যাবে এর মাধ্যমে। সেই সঙ্গে রাজ্যের বড় বড় শহরগুলিতে এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের হলদিয়া পরিশোধনাগারের দ্বিতীয় ক্যাটালিটিক-আইসোডিওয়াকসিং ইউনিটেরও শিলান্যাস করবেন। এই ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ২৭০ হাজার মেট্রিক টন। একবার এই ইউনিট কাজ শুরু করলে ১৮ লক্ষ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের সমতুল বিদেশী মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়।
এ ছাড়া ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে হলদিয়ার রানীচকে রেললাইনের ওপর ৪ লেনের উড়ালপুলটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এটি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। এই উড়ালপুল নির্মিত হওয়ায় কোলাঘাট থেকে হলদিয়া ডক কমপ্লেক্স সহ আশেপাশের এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল সম্ভব হবে। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়া-আসার সময় বাঁচবে। বন্দরে যে সমস্ত ভারি যান চলাচল করে তাদের যাতায়াতের খরচ কম হবে।