ভারত বিরোধী পোস্ট! গুগল, টুইটার-সহ একাধিক সোশ্যাল মাধ্যমের কাছে ব্যবহারকারীদের তথ্য চাইল দিল্লি পুলিশ

কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে গ্রেটা থুনবার্গের টুইট ঘিরে শুরু হওয়া বিতর্ক থামার তো সম্ভাবনা নেইই, বরং দিন দিন তা আরও বাড়ছে। গ্রেটা যে টুইট করেছিলেন তার সঙ্গে একটি ‘টুলকিট’ বা গুগল ডকুমেন্ট শেয়ার করেন তিনি। সেই গুগল ডকুমেন্ট কারা তৈরি করেছে তাদের ইমেল আইডি, ইউআরএল এবং অন্যান্য তথ্য গুগল, টুইটার-সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের কাছে চেয়ে পাঠাল দিল্লি পুলিশ। চিঠি লিখে এই তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল ‘ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থিক যুদ্ধ শুরু’ করার আহ্বান নিয়ে একটি গুগল ডকুমেন্ট তৈরি করার জন্য খালিস্তানপন্থী ক্রিয়েটরদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে। তারপরেই দিল্লি পুলিশের সাইবার সেলের ডেপুটি কমিশনার অন্বেষ রায় গুগল ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমকে চিঠি লিখে আবেদন করেছেন, কে বা কারা এই ধরনের ডকুমেন্ট তৈরি করে তা ছেড়ে দিয়েছে সেই সম্পর্কিত তথ্য তাদের দেওয়া হোক। সেই ডকুমেন্টে যে ইমেল আইডি, ইউআরএল রয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। কারণ গুগল ডকের মাধ্যমে এই ডকুমেন্ট আপলোড করা হয়েছিল ও পরে তা টুইটারে শেয়ার করা হয়।

অন্বেষ রায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে আমরা গুগল ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার অপেক্ষা করছি। তারপরেই আমরা এই ঘটনা নিয়ে পদক্ষেপ করব।” একজন বর্ষীয়ান পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, কারা এই টুলকিট তৈরি করেছে সেই তথ্য এলে কারা তা ছড়িয়ে দিয়েছে সেই তথ্যও বের করা সহজ হবে। কারণ এই ডকুমেন্টে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মন্তব্য করা হয়েছে, যা বরদাস্ত করা হবে না।

অবশ্য ইতিমধ্যেই আইপিসির একাধিক ধারায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। খালিস্তানপন্থী সংগঠন ‘পোয়েটিক জাস্টিস ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে এই কাজ করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান পুলিশের। ২৬ জানুয়ারি ট্র্যাক্টর র‍্যালির সময় সংঘর্ষের ঘটনাতেও তাদের হাত ছিল বলে পুলিশের অনুমান।

মঙ্গলবার রাতে নিজের টুইটার হ্যান্ডল থেকে ভারতের কৃষক আন্দোলন সম্পর্কিত একটি খবরের লিঙ্ক শেয়ার করেছিলেন গ্রেটা। সেই লিঙ্ক শেয়ার করে ভারতে আন্দোলনরত কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দেন তিনি, টুইট করেন কীভাবে কৃষক আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। সেই সম্পর্কিত টুইট করেন তিনি। ফেসবুকে তাঁর ফলোয়ারদের উদ্দেশে আবেদন করেন, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি আপনার নিকটবর্তী ভারতীয় দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখান।

সেই সঙ্গে একটি গুগল ডকুমেন্ট শেয়ার করেন তিনি। সেখানে লেখা ছিল ভারতের যে ইমেজ আছে বিশ্বে চা ও যোগের জন্য়, সেটাতে বদল আনতে হবে। বিভিন্ন ভারতীয় শিল্পপতিদের ব্যবসা টার্গেট করার কথাও বলা হয়। এমনকী কৃষি আইন যদি প্রত্যাহার হয় তাহলেও লড়াই থামবে না, যুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে, এই কথাও বলা হয়।

গ্রেটার পাশাপাশি পপস্টার রিহানাও টুইট করেন কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে। একের পর এক সেলেব এভাবে মুখ খোলায় স্বাভাবিক ভাবেই আন্তর্জাতিক মহলে অস্বস্তিতে পড়ে ভারত। বস্তুত, ভারতে কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের এ হেন প্রতিক্রিয়া একেবারেই ভাল চোখে দেখেনি নয়াদিল্লি।

এর পরেই বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইট করে বলেন, “কোনও প্রচারই ভারতের ঐক্যকে ভাঙতে পারবে না। ভারত উন্নতির নতুন শিখরে পৌঁছবেই। কোনও প্রচারই তাকে নিরস্ত করতে পারবে না। ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে প্রগতি, অন্য কিছু নয়। ভারত ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে।”

গ্রেটার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়। এবার আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নিল দিল্লি পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.