“যারা পার্টির জন্য স্যাক্রিফাইস করবে, পার্টি তাদের। পার্টি সবার আগে তাদের সাথেই ভাগ করে নেবে নিজেদের প্রতিটি সাফল্য। আমরা নিরপেক্ষ নই।” এই লাইন বহুবার শুনেছি বৃদ্ধ বামনেতাকর্মীদের মুখে। যার সুফল তারা পেয়েছে বছরের পর বছর। ‘আমি যদি পার্টির জন্য হই, তবে পার্টি আমার জন্য…’ এই বিশ্বাস একদা তাদের ডেডিকেটেড কিছু কর্মী দিতে পেরেছিল। যে কর্মীদের রগের পাশে বন্দুক ধরে যখন খুনীরা এসে জিজ্ঞাসা করত “পার্টি ছাড়ার মুচলেকা দিবি না মরবি?” তারা দাঁত চেপে অপেক্ষা করত গুলিটার, পিছমোড়া লাশ হয়ে যাবার। কেননা তারা বিশ্বাস করত পার্টি এর মুল্য দেবেই। তাদের সে বিশ্বাস অবশ্য মধ্যবিত্ত সাদাধুতিপাঞ্জাবি ও নন্দনঘটিত মিডিয়াআইকনের টাইমে ঢিলে হয়ে গেছিল যখন তারা দেখেছিল, আদপে তারা একটা লিস্ট, যেটা আসলে ভোটের বিনিময়মুল্য হিসাবে ব্যবহৃত। তাই তারপর বাকি ফলাফল আমরা সকলেই জানি যারা বাংলার রাজনীতির টুকটাক খবর রাখি। সে অন্য আলোচনা।
নতুন সরকার শপথ নিতে যাচ্ছে সংসদে। যে পার্টির সরকার তারা তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়েছে তাদের, যারা স্যাক্রিফাইস করেছিল এই সরকার দেখতে চেয়ে… বার্তা স্পষ্ট, “আমরা ভুলিনি…”
মনে পড়ছে কদিন আগের একটি ফোন। পুরুলিয়ার ছেলে। বছর বাইশ বয়স। সাইকেল সারায়। বিজেপি করে গত দুবছর। বলেছিলাম, “ভোটে বাইচান্স এদিক ওদিক হলে? কি করবি? পঞ্চায়েতের সময় অবস্থা তো দেখেছিলাম। আমার তো টেনশন হচ্ছে। তেমন হলে বরং আমার এখানে যদি…” আমাকে থামিয়ে বলেছিল, “আমরা এত বছর মরি নাই এই রুখা মাটিতে। গা ঢাকা দিবক নাই ভাই। আমি মরলে আমার দল জিতবে। আজ না তো কাল।”
এই বিশ্বাসটা তৈরী করাতে হয়। করে দল। প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক হিংসায় বলি হওয়া দলীয় কর্মীদের পরিবারকে ডেকে যে বার্তা দেওয়া হল বিজয়ী দলের পক্ষ থেকে, এই বার্তা যদি নীতিগত হয়, কদিন পর আর দলবদল লাগবে না, ডেডিকেটেড বহুকর্মীসমর্থক এই বাঙলাতেই তৈরী করে নিতে পারবে দলটি বলেই মনে হয়।