এবারে লোকসভা ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূল খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েছে। দুই জেলার ১২ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে একমাত্র কেশপুর ছাড়া সবকটিতেই তৃণমূলের করুণ অবস্থা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় তৃণমূলের ক্ষয় হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে। সেই নির্বাচনে জেলায় বামেরা কোনও আসন না পেলেও  কংগ্রেস ও বিজেপি একটি করে আসন ছিনিয়ে নিয়েছিল। এর মধ্যে খড়গপুর বিধানসভা কেন্দ্রে  বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের জয় হয়েছিল উল্লেখযোগ্যভাবে। এখানে তৃণমূলের স্থান হয়েছিল  তৃতীয়। সবং কেন্দ্র থেকে জয়ী মানস ভুঁইঞাকে দলে টেনে এবং পরবর্তীকালে উপনির্বাচনে মানস ভুঁইঞার স্ত্রী গীতা ভুঁইঞাকে জিতিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো জেলায় দলের মাটি শক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দলত্যাগী বিধায়ক যে শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ভোটারদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে দল বদল করেছেন এবং পদের পিছনে ছুটেছেন তৃণমূল নেত্রী তা বুঝতে পারেননি।

বিধানসভার পর গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দুই জেলায় ৩৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখলে নেয় বিজেপি। এরপরই পশ্চিম মেদিনীপুরের এবং ঝাড়গ্রামের পর্যবেক্ষক নিযুক্ত হন সুব্রত বক্সি এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কেশিয়াড়িতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের ভরাডুবি হওয়ার পর সেখানে দলকে টেনে তুলতে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয় শুভেন্দু অধিকারী কে। এতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী জেলার গোষ্ঠী কোন্দল মেটানোর ব্যাপারে জেলা নেতাদের হুমকি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করেননি।দুই জেলার বেশ কিছু পঞ্চায়েতের আসনে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে না দেওয়া প্রসঙ্গে দল নেত্রী স্বয়ং এবং দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সিরা বলেছিলেন, বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি তো আমরা কি ওদের হয়ে প্রার্থী দাঁড় করাবো। তৃণমূলের এই গাজোয়ারি মিথ্যা বক্তব্য পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলাবাসীর অন্তরে যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল, আঘাত করেছিল  তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সিপিএমের একটা ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। বিজেপির তেমন জোরালো কোনও সংগঠন নেই। তাহলে কোন ম্যাজিকে ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুরে বিজেপির এই  ব্যবধানে জয় তার বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তৃণমূলের সর্বস্তরে নেতাদের চাল চলন, কথাবার্তা, গাড়ি বাড়ি, ব্যবসা, সিন্ডিকেট প্রভৃতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় তৃণমূল সরকারের উন্নয়ন চাপা পড়ে গেছে। জেলার সাধারণ মানুষ এটা বুঝতে পেরে তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। তারা বুঝেছেন সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে আবার তৃণমূলের জয় এনে দেওয়া। আবার তৃণমূল নেতাদের চোখ রাঙ্গানি হজম করা। তাই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে কেন্দ্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে তারা বিজেপির ঝুলি ভরিয়েছেন। এই মুহূর্তে যদি বিধানসভা বা ঝাড়গ্রাম মেদিনীপুর খড়্গপুর এই তিনটি পৌরসভায় ভোট নেওয়া হয় তাহলে সবকটিতেই হারবে তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি ও ঝাড়্গ্রাম তৃণমূলের কোর কমিটির চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদার দাবি বামফ্রন্টের ভোটে বিজেপি জিতেছে। আমরা আমাদের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রেখেছি। বিজেপি যে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করেছে তাতেই বামের ভোট রামে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.