পৃথিবী থেকে মহাকাশে ছুটে যাচ্ছে রহস্যময়ী নীল আলো, আসলে কী? জানালেন বিজ্ঞানীরা

অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চলছিল। অবশেষে সফল হলেন বিজ্ঞানীরা। দেখা পেলেন মহাজাগতিক সেই স্পার্ক যার রং আদ্যোপান্ত নীল। একে ব্লু জেট নামেও অভিহিত করা হয়। এটি পৃথিবী থেকে বের হওয়া একটি নীল রঙের স্পার্ক। এর রহস্য সমাধান করতেও সমর্থ হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

নীল জেটগুলি বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উপরের দিকে ছুটে যায়। এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে এটি প্রায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। সাধারণ বজ্রপাত হয় নীচের বায়ুমণ্ডলে। এর রং হয় সাদা। বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে সাদা বিদ্যুতের রেখা দেখা যায়। কিন্তু নীল জেটগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক নাইট্রোজেনকে উত্তেজিত করে। তাই এর রং হয় নীল।

স্পেস স্টেশন থেকে নীল স্পার্ক

বছরের পর বছর ধরে এই নীল জেটগুলি পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে এবং এয়ারক্রাফ্ট থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে মেঘের ওপরে উঠে না গিয়ে সেগুলি কীভাবে তৈরি হয় তা বলা শক্ত। এখন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের যন্ত্রগুলি থেকে এর রহস্য় অনেকটা ভেদ করা সম্ভব হয়েছে। এটি বজ্রগর্ভ মেঘের উপর থেকে উৎপন্ন হয়। এই স্পার্ক অতি সংক্ষিপ্ত ও উজ্জ্বল নীল রঙের। ২০ জানুয়ারি ‘নেচার’ পত্রিকায় এই বিষয়টি নিয়ে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

এই ব্লু জেটগুলি এবং অন্যান্য উচ্চ বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনাগুলি ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন স্প্রাইটস (এসএন: 6/14/02) এবং এলভাস (এসএন: 12/23/95)। কারণ এই ঘটনাগুলি রেডিও তরঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। এগুলি যেভাবে বায়ুমণ্ডলে থাতে তাতে কমিউনিকেশন টেকনোলজিকে প্রভাবিত করা বিচিত্র নয়। জানিয়েছেন পেন স্টেটের মহাকাশ বিজ্ঞানী ভিক্টর পাসকো।

নীল স্পার্ক

ক্যামেরা এবং আলোক সংবেদী যন্ত্রগুলি স্পেস স্টেশনে ফটোমিটারগুলি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নাউরু দ্বীপের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর একটি ঝড়ের মধ্যে ব্লু জেট দেখতে পায়। কঙ্গেন্স লিংগির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেনমার্কের বায়ুমণ্ডলীয় পদার্থবিদ টর্স্টেন নিউবার্ট বলেছেন, “আমার মনে হয় যে, এই গোটা ঘটনাটি ব্লু ব্যং থেকে তৈরি হয়।” এই ‘ব্লু ব্যাং’ হল ১৬ কিলোমিটার উঁচু মেঘের উপরে ১০ মাইক্রোসেকেন্ডের একটি ফ্ল্যাশ। সেই ফ্ল্যাশপয়েন্ট থেকে, একটি ব্লু জেট স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে চলে যায়। প্রায় কয়েকশো মিলি সেকেন্ডে এটি প্রায় ৫২ কিলোমিটার উপরে উঠেছিল।

নুবার্ট বলেছেন যে এই ব্লু জেট যে স্পার্ক তৈরি করেছিল তা বজ্রগর্ভ মেঘের মধ্যে একটি বিশেষ ধরণের স্বল্প-পরিসরের ইলেকট্রিক ডিসচার্জ হতে পারে। সাধারণ বজ্রপাত মেঘের বিপরীত চার্জযুক্ত অঞ্চলে অথবা মেঘ এবং জমির মধ্যে হয়। কিন্তু মেঘের মধ্যে যদি উত্তাল মিশ্রণ তৈরি হয় তবে তা এক কিলোমিটারের মধ্যে একে অপরকে বিরোধীভাবে চার্জযুক্ত অঞ্চলগুলি আনতে পারে। এক্ষত্রে খুব সংক্ষিপ্ত হলেও শক্তিশালী বিস্ফোরণ করে বৈদ্যুতিক স্রোত তৈরি হয়। গবেষকরা ভূ-পৃষ্ঠের অ্যান্টেনা থেকে প্রমাণ পেয়েছেন যে বজ্রঝড় থেকে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন এবং কম রেঞ্জের বিদ্যুৎ স্ফুরণ হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.