১৭৫৭ সালে বণিকে মানদণ্ড যখন রাজদণ্ডে পরিণত হয় আর ভারতবর্ষের স্বাধীন সূর্য অস্ত গিয়েছিল ভাগীরথীর তীরে, তারপর প্রায় দুশো বছরের পরাধীন ভারতে ঘটে গেছে বহু আন্দোলন, বহু সংগ্রাম । ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের পর ভারতবর্ষের স্বাধীনতার আকাঙ্খা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে । ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকলের একমাত্র পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় – আমরা সকলে ভারতীয় । একই দেশের নাগরিক এবং সকলে পরাধীন ।
আমরা জানি যে জানুয়ারী মাসের ছাব্বিশ তারিখ টিকে ক্যালেন্ডারে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । অনেক সময় প্রজাতন্ত্র দিবস ও স্বাধীনতা দিবস এই দুই দিবসের মধ্যে নানান দ্বিধা কাজ করে ।স্বাধীনতা দিবস যেমন আমারদের স্বাধীন হওয়ার বার্তা বহন করে; ঠিক তেমনি প্রজাতন্ত্র দিবসকে আমাদের সংবিধান কার্যকর হওয়ার দিন হিসাবে চিহ্নিত করে ।
এছাড়া আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক রয়েছে ছাব্বিশে জানুয়ারী দিনটির। অবিভক্ত ভারতবর্ষে ১৯২৯ সালে ৩১শে ডিসেম্বর লাহোরে, ইরাবতী নদীর তীরে কংগ্রেস সহ অজস্র সাধারণ মানুষের জমায়েত হন। ১৯৩০সালের জানুয়ারী মাসের ছাব্বিশ তারিখে জহর লাল নেহরু ঐ স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে , বৃটিশ শাসন মুক্ত ভারতবর্ষের দাবী করেন । এটাই ছিল পূর্ণ স্বরাজের প্রথম দাবি । এরপর থেকে ঐ নির্দিষ্ট দিনটিকে স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা দেওয়া হয় । পরবর্তীতে ঐ একই দিনে প্রতি বছর ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হতো ।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ যখন ১৫ই অগাস্টে স্বাধীন হলে, ১৫ই অগাস্টকেই তখন স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয় যা আজও বর্তমানে প্রচলিত রয়েছে । কিন্তু অতীতের কথা স্মরণ করে ২৬শে জানুয়ারী দিনটির মর্যাদা খর্ব করা হয়নি, বরং ১৯৫০সালে ২৬শে জানুয়ারী ডঃ বাবা সাহেব আম্বেদকর রচিত স্বাধীন ভারতবর্ষের নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয় । দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরের পরিশ্রমের পর ভারতবর্ষের সংবিধান রচিত হয়েছে । সেই সময় থেকেই ২৬শে জানুয়ারী দিনটি সাধারণ তন্ত্র বা প্রজাতন্ত্র দিবসের মর্যাদা লাভ করে । পুরনো দিনের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য ঐ দিনটিকে স্বাধীনতা দিবসের মতই সমান মর্যাদার সাথে পালন করা হয় ।
নবমিতা সাউ