বদরউদ্দিন আজমল এবং কংগ্রেস জুড়ি অসমে ফের কাতারে কাতারে বাংলাদেশি আনবে, ধ্বংস করে দেবে অসমিয়া কৃষ্টি-সংস্কৃতি। নলবাড়িতে আয়োজিত বিজেপির বিজয় সংকল্প সমাবেশমঞ্চ থেকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
নলবাড়ির কেন্দুকুচিতে শহিদ মুকুন্দ কাকতি ক্ষেত্ৰে লক্ষাধিক জনতার উপস্থিতিতে আয়োজিত বিজয় সংকল্প সমাবেশে উদাত্ত ভাষণ দিতে গিয়ে দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা শাহ কংগ্ৰেস এবং বদরউদ্দিন আজমলকে তীক্ষ্ণ বাক্যবাণে বিঁধেছেন। দুই দলের সমালোচনা করে অমিত বলেন, ‘হে জনসাধারণ, আপনারা অসমকে অনুপ্রবেশকারী থেকে মুক্ত করতে চান কি না? এই কংগ্ৰেস এবং বদরউদ্দিন আজমল অসমকে অনুপ্রবেশকারী থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে? এই দুই সাম্প্রদায়িক দল বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের জন্য সব দুয়ার খুলে দিয়ে তাদের এই রাজ্যে সংস্থাপিত করবে। কেননা, অনুপ্রবেশকারীরা দুই দলেরই ভোটব্যাঙ্ক। অনুপ্রবেশকারীদের যদি কেউ রুখতে পারে, তা-হলে তা সম্ভব কেবল নরেন্দ্ৰ মোদীই। তাই এদের সম্পর্কে ভাবতে হবে।’ তিনি রাজ্যে নবগঠিত আঞ্চলিক দলগুলিরও সমালোচনা করে এদের প্রত্যাখান করতে রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ বলেন, ৭০ বছর ক্ষমতায় থেকে যারা সাহস দেখাতে পারেনি তা মোদী সরকার করে দেখিয়েছে, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করেছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ৩৭০ এবং ৩৫৯(এ) ধারা বাতিল করে কাশ্মীরকে চিরদিনের জন্য ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার মতো কাজ সম্পন্ন করেছে বিজেপি সরকার। এছাড় রাম মন্দির নিৰ্মাণের জন্য শতক শতকের দাবি ছিল। কেউ তা নির্মাণের সাহস করতে পারেনি। নরেন্দ্ৰ মোদী দ্বিতীয় মেয়াদে প্ৰধানমন্ত্ৰী হিসেবে নিৰ্বাচিত হওয়ার পর আজ ভগবান রামের গগনচুম্বী মন্দির নিৰ্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, বিজেপিকে সাম্প্ৰদায়িক বলে অভিযোগ করে কংগ্ৰেস। কিন্তু কংগ্ৰেসকে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, কেরলে মুসলিম লিগ এবং অসমে বদরউদ্দিন আজমলের সঙ্গে জোট বেঁধেছ। তা-হে কংগ্ৰেস কী করে ধৰ্মনিরপেক্ষ দল হল? অসমকে যদি সুরক্ষিত রাখতে হয় তা-হলে ওপরে এবং নীচে দু-স্থানেই নরেন্দ্ৰ মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গঠন করুন।
তিনি বলেন, কংগ্ৰেসের নেতা এবং বদরউদ্দিন আজমল বলুন, অসমের জন্য আপনারা কী করেছেন? ড. মনমোহন সিং সরকারের আমলে ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন ৭৯ হাজার কোটি টাকা কেবল অসমকে দিয়েছে। অথচ মোদী সরকার চতুর্দশ অর্থ কমিশনের ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৯২ কোটি টাকা দিয়েছে অসমকে।
অমিত শাহ আরও বলেন, কংগ্ৰেস ইংরেজের নীতি অবলম্বন করে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের সৃষ্টি করে। এর প্রমাণ ইতিপূর্বে অসমবাসী দেখেছেন। আন্দোলনকারীদের গুলি করে মেরেছিল কংগ্ৰেস। এখন এই সব আন্দোলনকারীরা কংগ্ৰেসকে সহযোগিতা করতে চাইছে। প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে তিনি বলেন, কেবল বিজেপিই পারে অসমকে বিকাশের দিকে অগ্ৰসর করতে। বন্যা এবং নদীভাঙন সমস্যা সমাধান করবে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে। তাই তিনি সার্বিক উন্নয়নের জন্য পুনর্বার বিজেপিকে রাজ্যের ক্ষমতায় আনতে জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন শাহ। তবে, এবারও রাজ্যে বিজেপিকে সরকার গড়তে কেউ রুখতে পারবে না, তা আজকের সমাবেশ দেখে তিনি বেমালুম নিশ্চিত।
অসমের উন্নয়নে কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিজেপি সরকার গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প এবং কাজকর্মের খতিয়ান তুলে ধরে কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰী বলেন, চা বাগানের শ্ৰমিকদের জন্য সরকার বহু কাজ করেছে। কংগ্ৰেস এখন চা শ্ৰমিকদের মজুরি ও বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করে কোন মুখে? দশকের পর দশক ক্ষমতায় থেকে যা পারেনি তার জন্য কংগ্ৰেসকে এখন কুম্ভিরাশ্রু না ঝরানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেন, কংগ্ৰেস আমলে চা শ্ৰমিকদের কিছুই দেওয়া হয়নি। তবে বিজেপি যথাসময়ে চা শ্ৰমিকদের মজুরি বা বেতন বাড়ানোর ব্যবস্থা করবে বলে আজকের সমাবেশে প্ৰতিশ্ৰুতি দিয়েছেন অমিত।
কোকরাঝাড়ে বিটিআর চুক্তির প্ৰথম বৰ্ষপূৰ্তি সমাবেশ থেকে বিএসএফ-এর হেলিকপ্টারে সরাসরি নলবাড়ির কেন্দুকুচিতে শহিদ মুকুন্দ কাকতি ক্ষেত্ৰে অনুষ্ঠিত বিজয় সংকল্প সমাবেশে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰী অমিত শাহ। সভাস্থলে বিপুল জনতা অভ্যর্থনা জানান তাঁকে। ছিলেন মুখ্যমন্ত্ৰী সর্বানন্দ সনোয়াল, নেডা-র আহ্বায়ক তথা অর্থমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, বিজেপির প্রদেশ সভাপতি রঞ্জিতকুমার দাস, অসমে বিজেপির প্রভারী বৈজয়ন্ত পাণ্ডা, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ শইকিয়া, সাংসদ কুইন ওঝা, মন্ত্রী ভবেশ কলিতা, মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি, জয়ন্তমল্ল বরুয়া, বেশ কয়েকজন বিধায়ক প্রমুখ বহু দলীয় নেতা।
বিজেপির শীৰ্ষ নেতা অমিত শাহ ভাষণে নলবাড়ির ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্ৰদ্ধা নিবেদন করেন। ’৪২-এর স্বাধীনতা আন্দোলনে শহিদ মুকুন্দ কাকতি সহ রঘুনাথ চৌধারী, ত্ৰৈলোক্যনাথ গোস্বামী, গিরিধারীলাল শৰ্মা, মনোরঞ্জন শাস্ত্ৰী প্রমুখ নলবাড়ির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন অমি শাহ। পাশাপাশি অসমের দুই মহাপুরুষ শংকরদেব এবং মাধবদেবকেও শ্ৰদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করে মুখ্যমন্ত্রী সৰ্বানন্দ সনোয়াল এবং অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা এই দুই মহাপুরুষের স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে রাজকোষ থেকে ১৫৫ কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ।
2021-01-25