ইচ্ছে করাটা মানুষের জন্মগত অধিকার যার যা খুশি ইচ্ছে হতে পারে। না,সব ইচ্ছের কথা বলছিনা।আমার ইচ্ছে যদি কাউকে খুন করার জন্য হয়,তাহলে সেটা অন্যায় শুধু নয় সরাসরি অনৈতিক।শুধুই কি খুন করা? না,অনৈতিক সবকিছু বাদ রেখে ইচ্ছে করলে সে ইচ্ছাতে বাদসাধা’র অধিকার কারও নেই,একথা মানতেই হয় নির্বিরোধী ও নিরীহ ইচ্ছে হলো নিজের মধ্যে নিজেকে নিয়ে কাল্পনিক জগতে বিচরণ করার সমতূল।বা বলা যেতে পারে আত্মরতি সর্বস্ব হলো নিজের ইচ্ছে নিজের মধ্যে রাখা।
এসব তো গেল রামা,শ্যামা,যদু মধু’দের মতো সাধারণ মানুষের ইচ্ছে’র কথা সাধারণ ছাড়া অসাধারণ কিছু মানুষ আছে।যাঁদের ইচ্ছে আবার অসাধারণ হয়।প্রমাণ হিসেবে দেখান যেতে পারে স্যার আইজ্যাক নিউটনকে।আপেল কেন মাটিতে পড়ে সেই রহস্য উন্মোচন করার ইচ্ছে হল,একদিন উন্মোচন করেও ফেললেন।জন্ম দিলেন এক থিয়োরির বললেন পৃথিবী সবকিছুকে নিজের দিকে টানে।সামান্য এক ইচ্ছের পরিণতিতে পৃথিবী পেল এক কালজয়ী সূত্র ।শুধু ইনি নন,সারা বিজ্ঞানীরাই এইমত ইচ্ছে করেন কেউ বা ইচ্ছে মেটাতে পারেন,আর কাউকে মেটান পরবর্তী প্রজন্মের উত্তরাধিকারীরা।ইচ্ছেটা স্বপ্ন হয়ে কিন্তু থেকেই যায় ।
এরপর আর একটি প্রজাতির ইচ্ছে নিয়ে কিছু বলতেই হয়।সেই প্রজাতিটি হলো রাজনীতিবিদগণ।এঁদের ইচ্ছে আবার দুই প্রকার।একটা হলো প্রত্যক্ষ ও অন্যটা হলো অপ্রত্যক্ষ।প্রমাণ? এবারের লোকসভা ভোট আলোচনা করলেই তার বিস্তারিত প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে।সে কথায় না হয় পরেই আসছি।
ইচ্ছেটা কি সবসময় একই থাকে?না, থাকেনা।প্রয়োজনের তাগিদে ইচ্ছেও অহরহ পাল্টায়।মন’কে বলা হয় একাদশ ইন্দ্রিয় । মন কি স্থির? কখনোই স্থির নয় মনের ওপর ভিত্তি করে ইচ্ছেও স্থির নয় ইচ্ছের উৎপত্তিই তো মন থেকে!মন যেমন স্থির নয়,মতি রূপি ইচ্ছেও তেমন স্থির নয়।সুতরাং অস্থির হয়েই আমাদের ‘ইচ্ছে’ আবর্তিত হচ্ছে, এটাই মানতে হয়।
এবার আসতে হয় রাজনীতির প্রসঙ্গে এবারের লোকসভা ভোটের প্রথম দিকে দেশের বাইশ দলের বাইশজন প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশা প্রকাশ করলেন তারমধ্যে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী,রাহুল গান্ধী ও চন্দ্র বাবু নাইডু ছিলেন প্রথম সারিতে ভাগ্যের কী পরিহাস!চন্দ্র বাবু নাইডুতো নিজের রাজ্যপাটটাই খোয়ালেন।রাহুল গান্ধীর শুধু কানমলা খেতেই বাকি।আর মমতা দেবীর রাজ্যে বিজেপি এমনই এক ফল করে বসেছে যে মমতাদেবীর রাজ্য পাট কতদিন টিকবে,সেই সন্দেহ জণমনে বেশ ভালভাবেই উদিত হয়েছে ।সুতরাং ইচ্ছে পরীর পিঠে সওয়ার হতে সবাই প্রত্যক্ষ ইচ্ছের অধীন হয়ে পড়েছিলেন, একথা মানতেই হয়।বিপর্যয়ের পর এরা প্রত্যক্ষ ইচ্ছে বাদ দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য অপ্রত্যক্ষ ইচ্ছে পরী’কে পাকড়াও করলেন।
প্রথমেই রাহুল গান্ধীর কথা বলতে হয় পরাজয়ের সব দায়িত্ব নিজের মাথায় নিয়ে বললেন এবার তাঁর ইচ্ছে হলো দলীয় দায়িত্বে ইস্তফা দেওয়া। মনে হলো কি সুন্দর কথা বলেছেন রাহুলজী! রাহুল ভাল করেই জানতেন,তাঁকে তার দল ইস্তফা দিতে দেবেনা।কারণ হলো, কংগ্রেস দল হলো গান্ধী পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি। গান্ধী পরিবার হাল ধরে না রাখলে এই দলটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে,তারপর হবে অস্তিত্বহীন।তাই তাঁকে ইস্তফা দিতে হবেনা।আরও একটা কাজ করা যেত।কাজটা হলো রাহুল গান্ধী র পরিবর্তে প্রিয়াঙ্কা’কে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা।সেটাও সম্ভব না হওয়ার কারণ হলো এই নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা কঠোর পরিশ্রম করেও সাফল্য কিছুই দিতে পারেননি।সুতরাং রাহুল গান্ধী একটা বানান প্লটে অভিনয় করলেন পদত্যাগের করুণ হুমকি দিয়ে। দল কিন্তু তার পদত্যাগ গ্রহণ করলনা।অপ্রত্যক্ষ ‘ইচ্ছে’র জয় হলো।
এবার রাজ্যস্তরের কথা।মমতা ব্যানার্জি ও পদত্যাগের নাটক করলেন।সবাইকে ডেকে নিয়ে নিজে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর মোলায়েম হুমকি দিয়ে নিজের কর্তৃত্ব জোরাল বানালেন মাত্র। ইনি 2004 সালেও একবার পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।সেবার মুকুল রায়ের কথায় রণেভঙ্গ দিয়েছিলেন।এবার বিজেপির ফল ভাল হওয়ায় পদত্যাগের হুমকি দিলেন একথা সত্য । কেউ তো ওনার পদত্যাগ চাননি! তাহলে নিজে থেকে আগাম পদত্যাগের নাটক করতে গেলেন কেন?এর কারণ অত্যন্ত গভীরে। মমতা দেবী ভালকরেই জানেন তাঁর ‘রাফ’ ভাষা অনেকেই পসন্দ করে না।তা ছাড়া বিজেপি দল থেকেও দাবি করা হচ্ছে এক বৃহৎ সংখ্যক তৃণমূলী পদাধিকারী দল পরিবর্তন করে বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছে। বিপর্যয়ের ফলে নিজের কর্তৃত্বও ক্ষীয়মান।দলের হাল শক্তহাতে ধরতে হলে একবার ভাল করে যাচাই করা দরকার মনে করে পদত্যাগের নাটকটা করলেন।তবে একটা কথা নিজের অজান্তেই বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস দলটি তাঁর পারিবারিক সম্পত্তি।ভবিষ্যতে যদি কখনো ক্ষমতার হস্তান্তর হয়,তখন কিন্তু শক্তিশালী নেতা আর পাওয়া যাবেনা।ব্যাক্তি কেন্দ্রীক দলের যে অবস্থা হয়,ঠিক তেমনই হবে।অপ্রত্যক্ষ হুমকি তথা ‘ইচ্ছে’ কিন্তু এবারও কাজে লেগে গেল।
অপ্রত্যক্ষ হুমকি দিয়ে যতই ক্ষমতা ধরে রাখা হোকনা কেন,এই ক্ষমতা কতদিন টিকবে,সে বিষয়ে সন্দেহ কিন্তু থেকেই যায় । এবার কিন্তু বিভিন্ন বৈঠকে মমতাদেবীর মুখের ওপর আঙুল তুলে অনেকেই কথা বলবে।সহ্য করা সত্যিই খুব মুশকিল হয়ে উঠবে।হয়তো রাজ্য প্রশাসন এক বছর না’ও চলতে পারে।তবে রাহুল গান্ধী ও মমতা প্রমাণ করে দিয়েছেন,ওনারা প্রত্যক্ষ ‘ইচ্ছে’য় কিছু করতে না পারলেও অপ্রত্যক্ষ ইচ্ছে’র ওপর ভর করে ‘ইচ্ছেপরী’র পিঠে সওয়ার হতে সিদ্ধহস্ত।