সুভাষ চন্দ্র বসু সম্পর্কে আজও বাঙালির কৌতূহল অপরিসীম। অনেকের জানা নেই তাঁর কন্যা- জামাতার রক্তেও ছিল রাজনীতির যোগ। 

১৯৩২ সালের শেষে সুভাষ ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি চিকিৎসার  জন্য অস্ট্রিয়া যান। সেখানে কিছুদিন থাকার পরে ১৯৩৪ সালে বই লেখার কাজে হাত দিলে তাঁর প্রয়োজন ছিল এক সহকারীর। দুই আবেদনকারীর মধ্যে থেকে সুভাষ বসু বেছে নেন এমিলিকেই। এমিলির তখন ২৩ বছর বয়স। সুভাষের ৩৭। এর পরই দুজনের সম্পর্ক গভীরতা পায়। সুভাষই এগিয়ে আসেন। তাতে সাড়া দেন এমিলি। এভাবেই সম্পর্ক পরিণতি পায়। 

নেতাজীর সঙ্গে এমিলি শেঙ্কেলের সম্পর্ক নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। ইন্ডিয়া টুডের প্রচ্ছদ নিবন্ধে লেখা হয়েছিল (২৩ জানুয়ারি, ২০১৬), “In June 1934, during his visit to Germany, a mutual friend introduced Netaji to Emilie Schenkl, the daughter of an Austrian veterinarian, whom he went on to hire for her English and typing skills to help him write his book, The Indian Struggle. Some eight years later, 

Netaji proposed to Emillie, following which the two got married in a secret Hindu ceremony in January 1942. That year, in November, Emillie gave birth to their daughter, Anita.“

এমিলি সুভাষের স্মৃতি নিয়ে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। একটা ছোট টেলিগ্রাফ অফিসে চাকরী করে সুভাষ চন্দ্রের শেষ স্মৃতি – নিজের মেয়ে অনিতাকে বড় করেছেন – জার্মানীর প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ বানিয়েছেন। সুভাষ চন্দ্রের পরিবার থেকে সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছেন এমিলি। শুধু তাই নয়, সুভাষ চন্দ্র নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে যে গোপনীয়তা রক্ষা করতে চাইতেন, যেভাবে সেটা গোটা দুনিয়ার কাছ থেকে আড়াল করতে চাইতেন, এমিলিও সম্পূর্ণভাবে তার মর্যাদা রেখে গেছেন চির জীবন।

অনিতার জন্ম অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়, ১৯৪২-এর ২৯ নভেম্বর। সেই হিসাবে এখন বয়স ৭৮-এর ওপর। অনিতার জন্মের জন্মের মাস দুই বাদেই সুভাষকে বেড়িয়ে পড়তে হয়েছিল অনির্দিষ্টের পথে।

ভারত মাতাকে ইংরেজদের হাত থেকে মুক্ত করে নি। তার পর সারাজীবন একসাথে কাটাবো। ছোট্ট মেয়ে ও স্ত্রীকে এই কথা দিয়ে উনি বেরিয়ে পড়েন। আর ফেরেননি।  

দক্ষিণ জার্মানির বাভারিয়ায় আউগসবুর্গ থেকে চার কিলোমিটার দূরে স্টাডটবের্গেন। জার্মানিতে ‘ডয়েচে ভেলে’-র সম্পাদক থাকাকালীন আমি সেখানে গিয়েছিলাম অনিতার সাক্ষাৎকার নিতে। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকায় জনপদ। ২০০৭-এর মে মাসে এটি শহরের স্বীকৃতি পেয়েছে। আয়তন সাড়ে ১১ বর্গকিলোমিটার। ২০০৯-এর ১ জানুয়ারি এর জনসংখ্যা ছিল ১৪,৭৩১। এক বছর বাদে আরও ৩৬৫ যুক্ত হয়ে শহরের লোকসংখ্যা হয় ১৫,০৯৬। এই শহরেই থাকেন অনিতা ও তাঁর স্বামী মার্টিন। 

বলিউডের ছবি ‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, দি ফরগটন হিরো‘ এবং টলিউডের ’গুমনামী বাবা‘-তে গুরুত্বের সঙ্গে জায়গা পেয়েছেন অনিতা। অর্থনীতি পড়াতেন আউগসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কয়েক মাস আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্ণ হল। 

অনিতার চেয়ে মার্টিন প্রায় সাড়ে তিন বছর ৮ মাসের বড়। মার্টিনের জন্ম ১৯৩৯-এর ৩১ মার্চ। ১৯৬৫ থেকে প্রায় ৯ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনা করেন। ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিট্যুট ফর এম্পিরিক্যাল সোস্যাল ইকনমিক্সের প্রতিষ্ঠাতা এবং সায়েন্টিফিক ডিরেক্টর, আউগসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক। বেশ কিছু বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। ১৯৭৬ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে নাম লেখান। জার্মানির দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি সোস্যাল ডেমোক্রাটিক পার্টির (এসপিডি)। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৩তে। মার্টিন এসপিডি-তে নানা দায়িত্ব সামলেছেন। জার্মানির স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি কমিটির প্রথমে সদস্য, পরে চেয়ারম্যান হন। ১৯৯০ থেকে ২০০২— তিন বার ছিলেন এসপিডি-র সাংসদ। ভারতে যেমন লোকসভা, জার্মানিতে বলে বুন্ডেশটাগ। 

ওঁদের বড় ছেলে পিটার অরুণের জন্ম আউগসবুর্গে। এখন থাকেন মিউনিখে। উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। পেশায় সাংবাদিক, তথ্যচিত্র নির্মাতা ও নাট্যশিল্পি। এমিলি সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে পিটার বলেছিলেন, “ঠাকুমা নেতাজীর সহকর্মী এবং অনুপ্রেরণা ছিলেন। বেশি কথা বলতেন না। তাঁর জীবনে একটা ব্যক্তিগত পরিসর ছিল। আমরা তাকে সম্মান দিতাম।“ নেতাজী সম্পর্কে তাঁর নাতির মূল্যায়ণ, “আমাদের শেখানো হয়েছে মানুষকে সেবা করতে নেতাজীর আদর্শ অনুসরণ করতে। তিনি আমাদের কাছে আদর্শ। কীভাবে মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে হয়, তিনি তার নিদর্শন।“

মার্টিন-অনিতার অপর দুই সন্তান টমাস কৃষ্ণ ও

মায়া কারিনা। টমাস থাকেন আউগসবুর্গে। মায়া থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে। নেতাজীর তিন নাতি-নাতনি অবশ্য বাবা-দাদুর মত রাজনীতিতে আসেননি। 

অশোক সেনগুপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.