তৃণমূল কংগ্রেসে (TMC) এখন কে সুরে গাইছে আর কে বে-সুরে, এই নিয়ে বিস্তর চর্চা চলছে।
তারই মধ্যে সুর-বেসুর যাই হোক, তার সঙ্গে সুরার প্রসঙ্গ নিয়ে এলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ ও নামী আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঘটনার কেন্দ্রে র
তৃণমূল কংগ্রেসে (TMC) এখন কে সুরে গাইছে আর কে বে-সুরে, এই নিয়ে বিস্তর চর্চা চলছে।
তারই মধ্যে সুর-বেসুর যাই হোক, তার সঙ্গে সুরার প্রসঙ্গ নিয়ে এলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ ও নামী আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে একটি ভিডিয়ো। স্যোশাল মিডিয়ার দৌলতে সাংসদের কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্বলিত এই ভিডিয়োটি অনেকেরই নজরে পড়ে। চোখ এড়ায় না সংবাদমাধ্যমেরও। ভুল কথায় এবং ভুল সুরে কল্যাণ গানটি গেয়েছেন।
কথায় সুরে যতই ভুল থাক না কেন তাঁর গায়কীতে যে অন্তর ছিল তা নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করছেন না কেউ। তিনি পেশাদার গায়ক নন, তিনি রাজনীতিক, তিনি আইনজীবী। তাঁর গানে ব্যাকরণ খুঁজতে যাওয়া অনর্থক বলেই মনে করছেন অনেকে। তাছাড়া ব্যক্তিগত স্তরে একটি ফেসবুক লাইভে ব্যক্তি কল্যাণ তাঁর মত করে গান গেয়েছেন, গাইতেই পারেন। এর আগেও তাঁকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতে দেখা গেছে। সেগুলি অবশ্য বেশিরভাগই আধুনিক হিন্দি গান। আলোচ্য গানটি একটি সিরিয়াস রবীন্দ্রসঙ্গীত। ‘শুধু তোমার বাণী নয় গো, হে বন্ধু হে প্রিয়।’ কথা বা সুরে ভুল করলেও সাংসদের দরদে কোনও খামতি ছিল না।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কে যাঁরা চেনেন তাঁরা জানেন, এই আইনজীবী নেতা আবেগপ্রবণ। বক্তৃতায় কু-কথা বলার সময়ও আবেগে বলেন আবার কালী মন্দিরে মাতৃমূর্তির সামনে আবেগে সামলাতে পারেন না অশ্রু।
সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে ‘ইন্টারেস্টিং ক্যারেকটার।’
আলোচ্য ভিডিও টি হয়ত খবরে আসত না যদি সাংসদ নিজেকে সুর সাধনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতেন। ভিডিয়োতে দেখা গেছে গানের শেষে সাংসদ চুমুক দিচ্ছেন রঙ্গিন পানীয় তে। রঙ্গীন পানীয় টি কি সুরা?
অন্তর্জাল (internet ) পঞ্চম প্রজন্মে (5th generation, 5G) পৌঁছলেও ভিডিয়ো থেকে এখনও কোনও গন্ধ পাওয়া যায় না! তাই তরলটি সুরা না চিড়েতা ভেজানো জল, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে গ্লাসের সাইজ ও চুমুকের ধরনে সাধারণ ভাবে মদ বলেই মনে করছেন অনেকে।
তা যাই হোক, পানীয়ের চরিত্র বিচার এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। ভিডিয়োটি ভাল করে দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, সাংসদ যেই গ্লাসটি হাতে তুলে নিলেন ওমনি যিনি ভিডিও করছিলেন তিনি ক্যামেরাটা সরিয়ে নিলেন। এক লহমার ফুটেজ অবশ্য রয়েই গেল।
রাজনীতি করলেই মদ খাওয়া যাবে না, প্রকাশ্যে তো নয়ই! চটুল গান গাওয়া যাবে না। নাচা যাবে না…এ সবই ভারতের মত দেশের ভোট বাজারের মাইন্ডসেট। কোনও একটি সিমেমায় নেতাজীর হাতে পেগ ধরিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন পরিচালক। নেতাজী তো নেতাজীই। যুগপুরুষ। সাধারণ রাজনীতিকদেরও এই ধরনের নৈতিকতার ভেক ধরে থাকতে হয়। আদর্শ রাজনীতিক কে যেন যন্ত্রমানবের মত হতে হবে। তিনি মেপে হাসবেন, মেপে কথা বলবেন। ঠোঁটে ঝুলিয়ে রাখবেন স্বর্গীয় হাসি!
গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী একদা মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁর অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে বলতেন, মদ খাওয়া খারাপ কিন্তু ঘুষ খাওয়া মদ খাওয়ার চেয়েও খারাপ। আধুনিক মনস্ক নচিকেতাও মদের পক্ষে পুরোপুরি সওয়াল করার সাহস পেতেন না। পাবলিক লাইফে বিরাজ করা কেউই এই সাহসটা দেখিয়ে উঠতে পারেন না। এর একটা অন্যদিকও আছে। সোশ্যাল ড্রিঙ্কিং এর ধারণা সমাজের সর্বস্তরে নেই। মদ খাওয়া এখনও মাতলামো করার নিমিত্ত করে থাকেন অনেকে। এ ছাড়াও মদের সঙ্গে পারিবারিক হিংসা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। গরীবের সর্বস্বান্ত হওয়ার অজস্র উদাহরণও আছে। তাই হয়ত মদ্যপান বিষয়টি আজও খুব স্পর্শকাতর। ওটি পান করা যায় কিন্তু ও নিয়ে মুখ খুলতে গেলে অতি সাবধানী হতে হয়।
এইসব নিয়ে ভেবে বা না ভেবে সেলিব্রিটিরা যেটা করেন তা হল হিপোক্রেসি।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্ভবত সে পথে হাঁটেন নি। ফেসবুক লাইভ চলা সত্বেও হাতে গ্লাস তুলে নিতে দ্বিধা করেননি। যিনি ভিডিও করছিলেন তাঁর প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ক্যামেরা সরিয়ে নিলেও কল্যাণ অবলীলায় হাতে তুলে নিয়েছেন গ্লাস। সেই বিতর্কিত গ্লাস, যাতে মদ আছে না অন্য কিছু তা প্রমাণিত নয়।
গ্লাসে যাই থাকুক, তিনি সুরাপাণ করুন কিংবা ‘জয় কালী’ বলে সুধা, কল্যাণের হাতে ধরা গ্লাসে সাবালক হোক রাজনীতি।
মানুষও বুঝুক, মদ, বান্ধবী, পরকীয়ার মত বিবিধ বিষয়ের ওপর নীতিপুলিশের ছড়ি ঘোরানো তাদের কাজ নয়। তারা বরং বুঝে নিক তাদের পাওনা। বুঝে নিক সার্বিক উন্নয়ন, সামগ্রিক পরিষেবা। ২ টাকা কিলো চালের প্রতীক্ষায় তাঁদের যেন থাকতে না হয়। তাঁরাও যেন মাসকাবারিতে কিনে আনতে পারেন প্রতি কিলো ১০০ টাকা দামের তুলাইপঞ্জী।
তাঁরাও যেন বুঝে যান সোশ্যাল ড্রিংকিং-এর মানে।