নন্দীগ্রামে দিদির পা রাখার আগেই অধিকারী ঘনিষ্ঠ সিরাজকে ঘরে ফিরিয়ে শুভেন্দুকে বার্তা?

হাইভোল্টেজ সোমবার! একদিকে দিদি মমতা আর অন্যদিকে ভাই শুভেন্দু। দুই সভা ঘিরে ক্রমশ চড়ছে রাজনৈতিক পারদ। আর এই অবস্থায় মাস্টারস্ট্রোক তৃণমূলের। আগামিকাল সোমবার শুভেন্দুর খাসতালুক নন্দীগ্রামে সভা করবেন সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় পা রেখে তৃণমূলনেত্রী কী বার্তা দেন, সে দিকে নজর থাকবে গোটা রাজ্যের। আর এই অবস্থায় একেবারে অধিকারী ঘনিষ্ঠ পরিচত সিরাজ খাঁকে ঘরে ফেরাল শাসকদল তৃণমূল। সিরাজ শুভেন্দু অধিকারী তো বটেই, অধিকারী পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ নেতা বলে পরিচিত।

মমতার সভার আগে অধিকারী পরিবার তথা বিজেপিকে ধাক্কা দেওয়ার লক্ষ্যেই সিরাজকে দলে ফেরানো হল বলে জানানো হয়েছে। এই যোগদানকে কার্যত নিজেদেরই কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখছে শাসকদল তৃণমূল। তৃণমূল নেতৃত্বের লক্ষ্য, শুভেন্দুকে ‘প্রভাবহীন নেতা’ প্রমাণ করা। সেই লক্ষ্যেই সিরাজকে দলে টেনে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

তিনি বলেছেন, ‘‘ভুলবশত কৈলাস বিজয়বর্গীয়র হাত ধরে বিজেপিতে সামিল হয়েছিলেন সিরাজ। ২০১৬ সালে নন্দকুমারে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরে তৃণমূলে যোগ দেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করবেন।’’

উল্লেখ্য, শুভেন্দু অধিকারীর দলবদলের আগে গত বছর ২৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র উপস্থিতিতে কোলাঘাটে বিরাট জনসভা করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সিরাজ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে অধিকারী পরিবারের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি।

অধিকারীদের সৌজন্যেই জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হন। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে শুভেন্দুর দূরত্ব তৈরি হলে সিরাজ বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। একনিষ্ঠ শুভেন্দু অনুগামী হয়েই ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নন্দকুমার থেকে জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী হন। সেই আসনে জিতে জেলা পরিষদে খাদ্য ও সরবরাহ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ হন।

কিন্তু শুভেন্দুর সঙ্গে দলের বিরোধের কারণেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। যদিও মমতা শুভেন্দুর খাসতালুকে পা রাখার আগেই বিজেপিতে বড় ভাঙন ধরাল তৃণমূল। জানা গিয়েছে, নন্দীগ্রামে মমতার সভা থাকবেন সিরাজ। শুধু সিরাজ নয়, মমতার সভায় বড়সড় কোনও চমকও থাকতে পারে বলে সূত্রের খবর। ফলে নন্দীগ্রামে মমতার হাইভোল্টেজ সভা ঘিরে পারদ চড়তে শুরু করেছে।

শাসক শিবিরের দাবি, নেত্রীর সভায় কমপক্ষে ৩ লক্ষ জমায়েত হবে। এর জন্য কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নিচ্ছে শাসক শিবির। যদিও নন্দীগ্রাম দিবসের দিন সেখানে দাড়িয়ে জনসভা থেকে মমতার উদ্দেশে বিজেপি নেতা শুভেন্দু বলেছিলেন, “দুই মেদিনীপুর মিলিয়ে ৩৫টি আসনের ৩৫টিতেই তৃণমূল কংগ্রেস হারবে। দিদিমণি এবারও আপনি এখানে দ্বিতীয় হবেন। প্রথম হবে বিজেপি।”

কার্যত শুভেন্দুর হুঙ্কার যে তৃণমূল চ্যালেঞ্জ হিসেবেই গ্রহণ করেছে, তা শাসক শিবিরের ইঙ্গিতেই স্পষ্ট। মমতার সভার আগে পূর্ণশক্তি নিয়ে ঝাঁপাতে চলেছে তৃণমূল শিবির। উল্লেখ্য, শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদানের পর গত ৭ তারিখ প্রথমবার নন্দীগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল মমতার।

কিন্তু, অখিল গিরি করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় সেই সফর পিছিয়ে দেওয়া হয়। যদিও, বিজেপির দাবি, ভয় পেয়ে যাননি তৃণমূলনেত্রী।

গেরুয়া শিবিরের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ভয় পেয়ে যাচ্ছেন না মমতা, রামনগরে অখিল গিরির সঙ্গে ৪টে লোক নেই, তিনি নন্দীগ্রামে সভায় লোক করবেন? মমতার সভা নন্দীগ্রামে, অখিল গিরি তো রামনগরের বিধায়ক। নন্দীগ্রাম ভাঙিয়ে আর খাওয়া যাবে না বুঝেছেন।

একদিকে যখন তাঁর খাসতালুকে সভা করবেন মমতা। অন্যদিকে কার্যত দিদিমণির পাড়ায় দাপাবেন শুভেন্দু। মনে করা হচ্ছে, নন্দীগ্রামের জবাব হয়তো মমতার পাড়ায় বসেই দেবেন শুভেন্দু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.