এভারেস্টের ডেথ জোনে এবার মারা গেলেন ব্রিটেনের পর্বতারোহী রবিন হেনেস (৪৪)। এই নিয়ে পর্বতারোহণের বসন্ত মরসুমে নেপালে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৮। এর মধ্যে এভারেস্টেই প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন আরোহী। বেশির ভাগ মৃত্যুর কারণই হল ক্লান্তি, অবসন্নতা, আর শৃঙ্গ আরোহণের জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা। ভিড়ের কারণে অনেক আরোহীকে এভারেস্টের চূড়ায় প্রায় ১২ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে। ফলে তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। একই সঙ্গে ফুরিয়ে যায় জল ও অক্সিজেন। তিলে তিলে মরতে হয় তাঁদের।
এভারেস্ট-সহ নেপালের অনান্য শৃঙ্গে ভয়ঙ্করতম আরোহণ মরসুম চলছে। গত বছর বসন্ত মরসুমে এত মৃত্যু দেখেনি নেপাল। কিন্তু এ বছর এত সংখ্যক আরোহীকে এভারেস্ট শৃঙ্গ আরোহণের অনুমতি দিয়েছে নেপাল ও চিন, অনুমান করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। গত বছর নেপাল ও তিব্বতের দিক থেকে এভারেস্ট আরোহণ করেছিলেন ৮০৭ জন পর্বতারোহী। এটাই ছিল এক বছরে আরোহণ সংখ্যার দিক থেকে রেকর্ড। সেই রেকর্ড তো এ বছর ভাঙবেই, ভাঙতে পারে এভারেস্টে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডও।
প্রতি বছরই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এভারেস্টে উঠতে ইচ্ছুক পর্বতারোহীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কর্ণপাত করেনি নেপাল আর চিন। আরোহী পিছু গড়ে ১৬ লাখ টাকার লোভ বরং তাদের উৎসাহিত করেছে আরোহী সংখ্যা বাড়াতে। ধারণা করা হচ্ছে, এক বছরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্বতারোহীর এভারেস্টে ওঠার রেকর্ডটা এ বছর ভেঙে যেতে পারে।
গত বছর এভারেস্ট জয় করা ব্রিটিশ টেলিভিশন উপস্থাপক বেন ফগেল এভারেস্টে ওঠার অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে লটারি ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তা শুনবে কে?প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন বাড়ছে ভিড়! ভিড় বাড়ার অন্যতম কারণ হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় মানুষের কাছে পর্বতারোহণের জনপ্রিয়তা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেরই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ যেমন নেই, নেই শারীরিক সামর্থ্যও। কেবল মাত্র অর্থের জোরে নেমে পড়েছেন এভারেস্ট আরোহণে যশের তাগিদে। বিনা প্রস্তুতিতে আরোহণ শুরু করে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তোলেন। বিপন্ন করে তোলেন শেরপাদের জীবনও।
আবহাওয়া কেমন থাকবে তার ওপরেও নির্ভর করে এভারেস্টে ভিড় কেমন হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ওয়েদার উইন্ডো এক সপ্তাহের জন্য খোলা হলে দিন-প্রতি আরোহীর ভিড় কম হয়। কিন্তু ওয়েদার উইন্ডো মাত্র তিনদিনের জন্য খোলা থাকলে, সবাই ওই তিনদিনের মধ্যে শৃঙ্গে ওঠার চেষ্টা চালান।
এবছর ২১ মে ১২২ জন। ২২ মে ২৯৭ জন। ২৩ মে ১৭২ জন এভারেস্টে ওঠার অনুমতি পেয়েছিলেন। বড় গ্রুপের ক্ষেত্রে ২৪ মে অতিরিক্ত দিন বরাদ্দ করা হয়েছিল। ফলে একদিনে হুড়োহুড়ি করে এভারেস্টে উঠতে গিয়ে ট্রাফিক জ্যাম হয়েছে। মৃত্যু সংখ্যা বেড়েছে। এবং সেটা সর্বকালীন রেকর্ডের পথে নিশ্চিত ভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।