মানবতার স্বার্থে জরুরী ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইন ও লাভ জেহাদে লাগাম প্রদান

লাভ জেহাদ। শব্দটা যখন প্রথমবার শুনি, বেশ বিরক্তিকর মনে হয়েছিল। একে তো ইংরেজীর সঙ্গে আরবীর বকচ্ছপ দ্বারা হিন্দু সমাজের সংকট বোঝানোর প্রয়াস এবং দ্বিতীয়ত মেয়েদের বিয়ের ওপর পুরুষতান্ত্রিক খবরদারি। মেয়েরা যখন পরের সম্পত্তি তখন মেয়ে অন্য ধর্মে বা জাতে বিয়ে করলে এত হায় হায় কেন? আসলে সবাই জানে মেয়েরাই মূল স্রষ্টা, বংশগতির ধারক ও বাহক, প্রজাতির সৃষ্টি ও লয় তাদের থাকা না থাকার ওপর নির্ভরশীল। তাই তাদের দখলে রাখতে হবে। তাই প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে মেয়েদের জীবনসঙ্গী চয়ন করার স্বাধীনতা খর্ব করতে চাওয়া ‘লাভ জেহাদ’তত্ত্ব আমদানি করে, যাতে প্রতিপক্ষরা দল ভারী হয়ে নিজেদের সংখ্যাগুরুত্ব না হারাতে হয়। ব্যাপারটাকে অনার কিলিং জাতীয় মনোভাব থেকে আলাদা করে দেখিনি এক সময়।

পৌরোহিত্য ধর্ম ও বিবাহবিধি

কেন শুধু মেয়েদের বিয়ে ও ধর্মান্তরণ নিয়ে এত চিন্তা, মেয়েদের যেখানে ধর্মপালনেও স্বাধীনতা নেই, নেই পৌরোহিত্যের অধিকার? বিষয়টা গভীর অনুধাবনের। ‘অনুলোম’ বিবাহ অর্থাৎ উচ্চবর্ণের পুত্রের সঙ্গে নিম্নবর্ণের কন্যার বিয়েতে শাস্ত্রের আপত্তি না থাকলেও ‘প্রতিলোম’ বিবাহ বা বিপরীত ক্ষেত্রটি হিন্দু শাস্ত্রে নিষিদ্ধ। জাতপাত বা স্মৃতি শাস্ত্রের নিয়ম নিষেধ সম্পূর্ণ সমর্থন না করলেও এই বিধানকে অযৌক্তিক মনে হয় না। কারণ যার শরীরে সন্তান জন্ম নেয়, যে শরীর থেকে ঋতুমতী অবস্থাতেও কচি নিষ্পাপ পবিত্র শিশু দুধ পান করে পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে, সে স্বততঃই পবিত্র, উচ্চাসীন; নিম্নবর্ণে হলেও সে উচ্চবর্ণের পুরুষের সঙ্গে এক পংক্তিতে বসতে পারে। অন্যদিকে পুরুষদের সন্তান উৎপাদনে ভূমিকাও পরোক্ষ, আর যতই সোনার আংটির সঙ্গে তুলনা করা হোক, স্বেদগন্ধ শ্মশ্রু-গুম্ফ সমন্বিত প্রাণীটি নিজের প্রবৃত্তির কারণেই ততটা পবিত্র বিবেচিত নয়। সুস্থ গার্হস্থ্যে তাই গর্ভবতী স্ত্রী বা স্তন্যদায়ী প্রসবিনীর সঙ্গেও সঙ্গমও এড়িয়ে যাওয়া কর্তব্য, কারণ শুক্রের দ্বারা ভ্রূণ ও দুগ্ধ কলুষিত হতে পারে – এই বিশ্বাস প্রাচীন যুগ থেকেই ছিল।

বাস্তবে সমাজের যত রাজ্যের নিঘিন্নে বিধান মেয়েদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলেও শাস্ত্র প্রণেতা বিশেষত চিকিৎসা ও বিজ্ঞান শাস্ত্রের প্রণেতারা অন্তর থেকে উপলব্ধি করেছিলেন নারী নামক জননাধারটিকে নিষ্কলুষ রাখা বিধেয়। অথচ পুরুষদের সুবিধার জন্য তাকে সম্প্রদানযোগ্য সামগ্রী বানানো হয়েছে, স্বামীর উচ্ছিষ্ট খাওয়ার নিয়ম প্রবর্তন করা হয়েছে, আবার আচার বিচার পালন করে সংসারের পবিত্রতা রক্ষার দায়টাও তারই কাঁধে সমর্পিত। তাই প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধাচারণ করে কন্যাকে পরের বাড়ি পাঠালেও তাকে তার সমতুল্য বা উচ্চতর শ্রেণীর পাত্রস্থ করাই শাস্ত্রীয় বিধান। নতুবা বাড়ি থেকে যা দূর করা হচ্ছে তা আস্তাকুঁড়ে যাচ্ছে না অট্টালিকায়, তাই নিয়ে পিতৃকুলের এত মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। কিন্তু যেহেতু স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির দাসীবৃত্তি করাই স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত, তাই আত্মজা নিম্ববর্ণের দাসত্ব করবে ভাবতে পুরুষদেরও ভালো লাগে না। প্রতিলোম সম্পর্কে কন্যা যেন আস্তাকুঁড়ে পতিত যার পুনরায় ঠাকুরঘর বা হেঁসেলে তার স্থান হয় না।

ইসলাম ধর্ম ও হিন্দু সমাজের শব্দকোষের বিবর্তন

এই ‘অনুলোম’ ‘প্রতিলোম’-এর ধারণা বিপরীত মেরুর সম্প্রদায়ের মধ্যেও বিস্তর বিদ্যমান। তাদের কাছে হিসাবটা খুব সহজ – সন্তান উৎপাদনের জমি দখল এবং তার সর্বাধিক বা নিদেনপক্ষে অপটিমাম ব্যবহার। ফল দেবে এমন বৃক্ষ পরের বাগানে চলে গেলে লোকসান – মানে প্রতিলোম, আর ফলনশীল গাছ নিজের বাগানে লাগাতে পারলে লাভ – মানে অনুলোম। এই হিসাব কষেই তারা অন্য সমাজের নারী মৃগয়ায় যেমন উৎসুক, নিজের সমাজের মেয়েদের দখলে রাখতে ততটাই কট্টর ও মরিয়া, যার জেরে ভিন্ন সম্প্রদায় বিশেষত হিন্দু প্রেমিকদের মুসলিম প্রেমিকার বাড়ির হাতে নৃশংসভাবে প্রাণও দিতে হয় আকছার।

কিন্তু ওদের কাছে বিধর্মীরা মোটেই অস্পৃশ্য নয়। কলমা পড়ে মহম্মদকে আল্লাকে একমাত্র উপাস্য ও আল্লা প্রেরিত মহম্মদকে একমাত্র রসুল মানার অঙ্গীকার করে নিলে এবং সেই সঙ্গে নিজের জন্মগত বিশ্বাস ও সমাজের সঙ্গে বেইমানি করতে রাজি হলেই বিধর্মী ‌পাক বা পবিত্র হয়ে যায়। তাই মুসলিমদের ক্ষেত্রে বিয়ে একটা আইনি চুক্তি হলেও মুসলিম মেয়েদের অমুসলিমদের ছেলেকে বিয়ে করার অনুমতি নেই, যেখানে মুসলমান পুরুষরা কেতাব অনুসারী (“People of the Book”) যার মানে দাঁড়ায় খ্রিস্টান ও ইহুদিদের স্বচ্ছন্দে বিয়ে করতে পারে। এই অনুবিধিকেই সম্প্রসারিত করে হিন্দু নারী মৃগয়াও তাদের মধ্যে শুধু বৈধতা নয় যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়ে এসেছে। একদিকে জরায়ু দখল আর অন্য দিকে নির্বিচারে হত্যা দ্বারা নিজেদের মতবাদের বিস্তার ঘটনাই মূল উদ্দেশ্যে।

শুচি অশুচির বিচার থেকেই হিন্দু পুরুষরা প্রাচীন ও মধ্যযুগে অন্য সম্প্রদায়ের নারীদের দিকে হাত বাড়াত না, আর নিজেদের নারীরা অন্য সম্প্রদায়ে চলে গেলে আর ফিরে পেতেও অরুচি বোধ করত। এইভাবে এক সময় হিন্দু সমাজের প্রচুর লোকক্ষয় হওয়ার পর ছুৎমার্গ গিয়ে কিছুটা উদারতা এসেছে ঠিকই, সেই সঙ্গে পবিত্রতা নিয়ে নিজেদের সংস্কার বিসর্জন দিতে গিয়ে বিকারগ্রস্ত শত্রুদের প্রভাবে হিন্দু পুরুষদের কারও কারও মধ্যে ধর্ষণেচ্ছার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। নতুবা এই জাতীয় শব্দ মধ্যযুগে আরব তুর্কী বর্বরদের আগমণের আগে ভারতবাসীর অভিধানেই ছিল না। দাম্পত্যে বলপ্রয়োগের প্রবন্ধন থেকে থাকলেও তাকে কখনই প্রচলিত বলাৎকারের আওতায় আনা যায় না।

ধর্মান্তরণ দ্বারা জয়লাভের আন্তর্জাতিক চক্র

অন্য দিকে এইসব শৌখিন মূল্যবোধ থেকে মুক্ত ইসলাম জন্মলগ্ন থেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রসারণ করে সবাইকে একই মতবাদের ছত্রছায়ায় আনার তাগিদে যে কোনও কৌশল প্রয়োগ করতে সচেষ্ট। সেই চেষ্টা আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে রীতিমতো পরিকল্পনা মাফিক। এর জন্য ওদের আন্তর্জাতিক চক্র আছে। রীতিমতো প্রশিক্ষণ পেয়ে তারা কখনও হিংস্রতা ও দরকারে ভদ্র ব্যবহারের আল তাকিয়া দ্বারা গাছের ও তলার দু জায়গা থেকেই ফল আহরণ করে চলেছে। বেশ কিছু দিন আগে কয়েকটি ভিডিও ও কেস দেখে মনে হয়েছিল এই দেশের কিছু রাজনৈতিক দল ও তাদের পরিচালিত সরকারও এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। নতুবা পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম যুবকের সঙ্গে ‘‌স্বেচ্ছায়’ টাকা পয়সা কম্পিউটার নিয়ে পালানো হিন্দু স্কুল ছাত্রী কখনও তার বাবাকে ‌কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকায় কম্পিউটার কিনেছে দাবি করে নিজের অধঃপতনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারত না। মুসলিম ছেলেদের সঙ্গে প্রেম বা বিয়ে করে কী ভয়াবহ পরিণতি হচ্ছে একের পর এক তার নিদর্শন দেখেও হিন্দু মেয়েদের পিঁপড়ের মতো পাখা গজাচ্ছে, তা হতে পারে না। বহু ক্ষেত্রেই পরিচয় গোপন করে সম্পর্ক এত দূর পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে জেহাদি, যেখান থেকে একটি মেয়ের পক্ষে ফেরা সম্ভব হয় না, আর ফিরতে চাইলেও প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারে না। শুধু সচেনতা বার মেয়েদের পোশাক আশাক থেকে হাসি পর্যন্ত সবকিছু নিয়ে খাপ বসানো হিন্দুত্ববাদীরা দেখেও দেখছে না, যারা প্রত্যাখ্যান করে, তাদের অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া থেকে গণধর্ণের পর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো পরিণতি প্রায় অবশ্যম্ভাবী। অর্থাৎ ওদের বিশ্বাস করে ভালোবাসলেও আজীবন দাসত্ব নয় নারকীয় মৃত্যু, আবার এড়াতে চাইলেও একই পরিণতি। নিছক সচেতনতা দিয়ে কিছু হওয়ার নয়।

অন্যদিকে মহামারীর মতো ইসলামে ধর্মান্তরণ ছড়িয়ে পড়ছে হিন্দু ছেলে-ছোকরাদের মধ্যেও, বিশেষত প্রতিবেশী বাংলাদেশে। ইসলাম কবুল না করে জীবন্ত দগ্ধ হওয়ার চেয়ে কবুল করে পাপবোধ ছাড়াই এন্তার ইন্দ্রিয় সুখ ভোগ করার লাইসেন্স পাওয়া নিশ্চয়ই বেশি আকর্ষণীয়। হিন্দু থাকতে হলে জীবনেরও ঝুঁকি, যথেচ্ছ ফুর্তিতেও ফাঁকি। কিন্তু একবার ঐ আসমানী কিতাবের অনুসারী হলে খুন, ধর্ষণ, লুঠপাট যৌনদাসী রাখা, নিজের বোন এমনকি কন্যাকে সম্ভোগ করার মতো ঘৃণ্য কাজগুলোও আর অপরাধ থাকবে না, যথেচ্ছ ব্যাভিচারই ধর্মাচরণের স্বীকৃতি পেয়ে যাবে।

হিন্দু সমাজে সংঘবদ্ধতার অভাব

চরম অনৈতিক ও কদর্য মতাদর্শে বলীয়ান হয়ে এই অতি সুসংগঠিত জেহাদী আগ্রাসনকে প্রতিরোধ করতে হলে হিন্দুদের যতখানি সংগঠিত হওয়া দরকার, সেই একতা তাদের নেই। স্বঘোষিত কিছু মাতব্বর এই পতন ও ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করার বদলে মেয়েরা আলতা শাঁখা সিঁদুরে সাজল কি সাজল না (অবিবাহিত বা বিধবাদের ক্ষেত্রে কী বিধান কে জানে), ব্লাউজের পিঠ কতটা কাটা, কে কোন দেবতাকে আদর্শ মনে করে অথবা করে না– ইত্যাদি নিয়ে খাপ বসিয়ে নিজেদের সমাজকেই আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। এই জবরদস্তি মাতব্বরিও আদতে ইসলাম প্রতিবেশেরই কুফল। অথচ এই বীর পুংগবরা নিজেদের আদর্শ সম্বল করে জোট বাঁধতে জানে না অতীতে যার পরিচয় একাধিকবার হিন্দুরা রেখেছে; হেরে গিয়েছে শুধু বিজিত শত্রুকে ক্ষমা করার মাসুল দিয়ে ও ছল চাতুরি অবলম্বন না করায়। আজকের পর্ন আসক্ত আত্মকেন্দ্রিক হিন্দু যুবকরা একটিও শত্রুকে দমন করার হিম্মত রাখে না, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের চরিত্র শুদ্ধির জন্য রাধারাণীকে নবাবী হারেমের প্রোডাক্ট বা বৈষ্ণবীয়  ষড়যন্ত্র বলে নিজেদেরই ঐতিহ্যকে অপমান করতে পারে। হিংস্র নেকড়েদের কাছ থেকে ultra male chauvinism-এর শিক্ষা নিয়ে সমাজ ও প্রজাতির বংশগতির মূল ধারক ও বাহক নারীদের রক্ষা করার বদলে তাদের আরও দমন পীড়নেই বেশি আগ্রহী । এই মনোভাব নিয়ে সদর্থক কিছুই সম্ভব নয়।

লাভ জেহাদ ওরফে প্রতারণা জেহাদ বা সোজাসুজি ধর্ষণ জেহাদের আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে সত্যি বলতে কী, ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে পাল্লা দেওয়া সম্ভব নয়, ক্ষুদ্র সংগঠনগুলোর পক্ষেও সম্ভব নয়। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু বাঙালীদের মধ্যে বিপ্লবী দল গড়ে তোলার মতো মেরুদণ্ড আর অবশিষ্ট নেই যেটার খুব দরকার ছিল। আবার গড়ে উঠলেও নিজের দেশবাসীকে রক্ষা করার মতো দুরূহ দায়িত্ব নিতে হত, যা ইসলামি জঙ্গী সংগঠনগুলোর এলোপাতাড়ি ধ্বংসলীলার মতো সহজসাধ্য হত না। সুতরাং এই বিপুল আর্থিক সামরিক ও প্রাশিক্ষণিক মদতপুষ্ট চক্র যা দেশেরই একাংশের কাছ থেকে বৌদ্ধিক ও নৈতিক সহযোগিতাও পেয়ে যাচ্ছে, তার করাল থাবা থেকে দেশকবাসীকে বাঁচাতে গেলে দেশের সরকারকেই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে; যেমন উত্তরপ্রদেশে যাগী আদিত্যনাথ নিয়েছেন। এর সুফল বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত এই পদক্ষেপ সমস্যাটাকে সৎভাবে সনাক্ত তো করেছে।

লাভ জিহাদ: হিন্দুত্ববাদীদের নয় চার্চের তৈরী শব্দ

পরিশেষে জানাই ‘লাভ জেহাদ’ শব্দটা নাগপুরে সঙ্ঘের হেঁসেলে রান্না করা হয়নি। Chicago Tribune, Foreign Policy-র প্রতিনিধি ১৯৪৭-এ ভারত ভাগের সময় দাঙ্গা পরিস্থিতিতেও এই জাতীয় কৌশল উদ্ভূত হয়েছিল বলে মত প্রকাশ করেছেন। ২০০৯ সালে কেরালায় ও কর্ণাটকের মাঙ্গালোর উপকূলে ব্যাপক ধর্মান্তকরণের ফলে প্রথম এই ‘লাভ জেহাদ’ শব্দটি খবরে উঠে আসে। কেরালার ক্যাথলিক চার্চ বিশপ দাবি করেন ৪৫০০ খ্রিস্টান মেয়েকে ধর্মান্তরণের জন্য লক্ষ্য স্থির হয়েছিল। আর ‘হিন্দু জনজাগৃতি মঞ্চ’ জানাচ্ছে শুধু কর্ণাটকেই ৩০,০০০ হিন্দু মেয়েকে ইসলামে রূপান্তরিত করে ফেলা হয়। শ্রী নারায়ণ ধর্ম পরিপালনের জেনারেল সেক্রেটারিও জানিয়েছিলেন এইভাবে ছলে-বলে-কৌশলে অন্য সম্প্রদায়ের মেয়েদের মুসলিম বানানোর প্রক্রিয়ার কথা। ব্যাপারটা পাকিস্তান তো বটেই সংযুক্ত রাজ্য তথা ব্রিটেনেও বেশ চালু।  উদার রাজনৈতিক ব্লগার Sunny Hundal বলেছেন, “In the 90s, an anonymous leaflet (suspected to be by Hizb ut-Tahrir followers) urged Muslim men to seduce Sikh girls to convert them to Islam.” এরপর শিখরা নড়েচড়ে বসে। আর তারপরেও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা দেখানোর জন্য যদি হিন্দুদের পরামর্শ দেওয়া হয় জেগে ঘুমিয়ে ঘর পোড়ানোর, তাহলে কিছু বলার নেই। ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ এই ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ নিতে চাইলে মিডিয়া ও আদালত যৌথভাবে তাঁকে স্বেচ্ছা প্রেমে ব্যাগড়া দানের অভিযোগে থামিয়ে দেয় যদিও কয়েকটি রাজ্যে চাতুরির মাধ্যমে ধর্মান্তরণ রুখতে “Freedom of Religion laws” লাগু আগে থাকতেই ছিল।

ধর্মান্তরণ-বিরোধী কেন্দ্রীয় আইনের অভাব

এখন ভারতবর্ষে কেন্দ্র সরকারের ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইন নেই। US Library of Congress (LOC)-র একটি গবেষণাপত্র জানাচ্ছে ১০৩০ ও ১৯৪০-এর শেষার্ধে রাজন্য প্রদেশগুলোতে প্রথম এই জাতীয় আইন আনা হয়েছিল মিশনারিদের থাবা থেকে হিন্দু পরিচয় রক্ষা করার জন্য: “in an attempt to preserve Hindu religious identity in the face of British missionaries.” এক ডজনের বেশি রাজ্যে এই আইন লাগু ছিল (“over a dozen princely states, including Kota, Bikaner, Jodhpur, Raigarh, Patna, Surguja, Udaipur, and Kalahandi”)। ১৯৫৪ সালে সংসদে Indian Conversion (Regulation and Registration) Bill আনা হয় যার দ্বারা মিশনারিদের লাইসেন্স ও ধর্মান্তরণের পঞ্জীকরণের ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব ছিল: “licensing of missionaries and the registration of conversion with government officials” কিন্তু লোকসভাতেই এটি মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ১৯৬০ আনা হল Backward Communities (Religious Protection) Bill যার উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুদের অভারতীয় ধর্মে পরিবর্তিত হওয়া রোখা। “which aimed at checking conversion of Hindus to ‘non-Indian religions’ which, as per the definition in the Bill, included Islam, Christianity, Judaism and Zoroastrianism”. এটিও পাস হয়নি। তারপর ১৯৭৯-এ এল The Freedom of Religion Bill প্রায় অনুরূপ উদ্দেশ্য নিয়ে (“official curbs on inter-religious conversion.”) এবং যথারীতি রাজনৈতি সমর্থনের অভাবে পাস হতে পারল না।

২০১৫-তে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক ঘোষণা করে, বল ও ছল পূর্বক ধর্মান্তরণের বিরুদ্ধে কেন্দ্র আইন আনতে পারে না যেহেতু আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের ব্যাপার। তবে রাজ্যগুলো নিজেদের মতো করে আইন প্রণয়ন করতে পারে। সেই মতো “Freedom of Religion laws” বর্তমানে আটটি রাজ্যে প্রচলিত – উড়িষ্যা (১৯৬৭), মধ্যপ্রদেশ (১৯৬৮), অরুণাচলপ্রদেশ (১৯৭৮), ছত্তিশগড় (২০০০ ও ২০০৬), গুজরাট (২০০৩), হিমাচল প্রদেশ (২০০৬ ও ২০০১৯), ঝাড়খণ্ড (২০১৭) ও উত্তরাখণ্ড (২০১৮)। এর মধ্যে হিমাচল (২০১৯) ও উত্তরাখণ্ড ধর্মান্তরণের উদ্দেশ্য নিয়ে সংঘটিত বিয়েকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। ২০০২ সালে তালিমনাড়ুও অনুরূপ আইন প্রণয়ন করে খ্রিস্টানদের চাপে ২০০৬ সালে সেটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। আবার রাজস্থানে ২০০৮ সালে অনুরূপ আইন আনার চেষ্টা করলে বিলটি রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে না।

আইন থাকলেও আইন অমান্যে শাস্তির তেমন কড়াকড়ি ছিল না। ২০১৯-এ বলপ্রয়োগে ও তঞ্চকতার দ্বারা ধর্মান্তরণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার জেরে উত্তরপ্রদেশ আইন কমিশন নতুন আইন আনার প্রস্তাব করে যার ফলশ্রুতি নতুন অর্ডিন্যান্সটি। এরপর ২০২০-র ২৮ নভেম্বর অর্ডিন্যান্স আকারে আনা এই নতুন আইনটি পূর্বোক্ত ব্যাবস্থার চেয়ে অনেকটা কড়া। এই আইনানুযায়ী ধর্মান্তরিত হতে চাওয়া ব্যক্তিকে দু’ মাস আগে নোটিস দিতে হবে। তারপর তার পুলিসী তদন্ত হবে এবং অনুমতি পাওয়ার পরে প্রশাসনকে তা জানাতে হবে। এরপর জনতার আপত্তি শোনা হবে। বিয়ের জন্য ধর্মান্তরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আগে Special Marriage Act অনুযায়ী বিয়ে করতে হলে এক মাস আগে নোটিস দেওয়া ও জনতার আপত্তির জন্য অপেক্ষা করার প্রাবধান ছিল। একই অন্যথায় ১-৫ বছরের কারাবাস হতে পারে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে শাস্তিও দ্বিগুণ হবে। তফশিলি জাতি ও উপজাতির মানুষকে বল বা ছল প্রয়োগে ধর্মান্তরিত করলে শাস্তি ৩-১০ বছর। বলা বাহুল্য এই নিয়ে কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেছে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে। বস্তুত ধর্মান্তরণ বিরোধী উত্তরপ্রদেশের এই আইন প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও মেয়েদের প্রতি হিংস্রতা দমনে কতটা সহায়ক হবে এখনই বলা যাচ্ছে না, তবে সাম্প্রদায়িক সাম্রাজ্যবাদের জোয়ারে কিছুটা তো বাঁধ দেওয়া যাবে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে পঙ্গপালের মতো বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা মুসলিমরা অনুপ্রবেশ করছে, আর সেই সঙ্গে অর্থনীতি, শিল্প ও কর্মসংস্থানের যা হাল, তাতে বঙ্গ বিজেপি ক্ষমতায় এলে এগুলো সামাল দেওয়াই হয়ে দাঁড়াবে মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইন আনা যাবে, অন্তত প্রথম পাঁচ বছরের মেয়াদে, এতটা আশাবাদী হতে ভরসা হচ্ছে না। কিন্তু ক্রমবর্ধমান নারী অপহরণ ধর্ষণ হত্যা ও ধর্মান্তরণের মড়ক আটকাতে গেলে এই ধরণের দৃঢ় পদক্ষেপেরই আশু প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

  1. Love Jihad https://en.wikipedia.org/wiki/Love_Jihad
  2. Cornell, Vincent J. (2007).Voices of Islam: Voices of life: family, home, and society. Greenwood Publishing Group. p.61.ISBN9780275987350.This includes Jew, Christians and Sabeans (a sect that most Muslims believe no longer exists). Zoroastrians, certain types of Hindus, and Buddhists are accepted by some Muslims as ‘People of the Book’ as well, but this is a matter of dispute.
  3. Sarkar, Tanika (1 July 2018).“special guest contribution: is love without borders possible?”.Feminist Review.119(1): 7–19.doi:10.1057/s41305-018-0120-0.ISSN1466-4380.S2CID149827310.
  4.  Ch; Oct 19, rima Banerjee / TNN /; 2020; Ist, 12:09.“Ram Sene coined ‘love jihad’, but first ‘case’ goes back a century | India News – Times of India”.The Times of India. Retrieved14 November2020.
  5. “Beware of ‘love jihad’”.Mathrubhumi.Kochi,Kerala,Indiamathrubhumi.org. 15 October 2009. Retrieved18 October2009.[dead link]
  6. “Is ‘Love Jihad’ terror’s new mantra?”. Rediff. 14 October 2009. Retrieved18 April2014.
  7. “Mangalore: Eight Hindu Organisations to Protest Against ‘Love Jehad’”Daijiworld.com. 14 October 2009. Retrieved18 April2014.
  8. “SNDP to campaign against Love Jihad: Vellappally”.Asianet. 19 October 2009. Archived fromthe originalon 10 March 2012. Retrieved20 October2009.
  9. “SNDP to join fight against ‘Love Jihad’”. ExpressBuzz. 19 October 2009. Retrieved20 October2009.
  10. Yudhvir Rana (10 January 2011).“‘Not just White girls, Pak Muslim men sexually target Hindu and Sikh girls as well”.The Times of India. Retrieved18 April2014.
  11. “Police protect girls forced to convert to Islam”.Thisislondon.co.uk. 22 February 2007. Retrieved18 April2014.
  12. Sunny Hundal (3 July 2012).“EDL and Sikh men unite in using women as pawns | Sunny Hundal | Opinion”.The Guardian. Retrieved12 September2016.
  13. Anti-conversion laws in India: How states deal with religious conversionhttps://www.indiatoday.in/news-analysis/story/anti-conversion-laws-in-india-states-religious-conversion-1752402-2020-12-23
  14. What Uttar Pradesh government’s new anti-conversion law says
    https://economictimes.indiatimes.com/news/politics-and-nation/what-uttar-pradesh-governments-new-anti-conversion-law-says/articleshow/79480120.cms
  15. https://economictimes.indiatimes.com/news/politics-and-nation/what-uttar-pradesh-governments-new-anti-conversion-law-says/articleshow/79480120.cms?utm_source=contentofinterest&utm_medium=text&utm_campaign=cppst
  16. How UP’s New Anti-Conversion Law Is Being Used To Harass Hindu-Muslim Couples

https://www.ndtv.com/india-news/how-uttar-pradesh-new-anti-conversion-law-is-being-used-to-harass-hindu-muslim-couples-2336819

শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.